শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল (সিআর) আবরার।। ফাইল ছবি
বাংলাদেশের জনসংখ্যাকে সম্পদে পরিণত করতে দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ স্থাপনের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল (সিআর) আবরার।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সচিবালয়ে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, আমরা প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার বাইরে টেকনিক্যাল জ্ঞানসমৃদ্ধ জনশক্তি গড়ে তুলতে চাই। এ জন্য কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করে গড়ে তুলতে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার।
তিনি বলেন, সারা দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ৪৯৩ উপজেলায় টেকনিকাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ স্থাপনের কাজ পর্যায়ক্রমে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার জানান, বিভিন্ন জেলায় এরই মধ্যে ৮৫টি স্কুল তাদের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া শুরু করেছে। বাকিগুলোর জন্য দ্রুত জমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে ভবন নির্মাণসহ শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আগে থেকে ১০০টি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের কার্যক্রম চলছিল। পরে আরও ৩২৯টির জমি অধিগ্রহণসহ সার্বিক কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি কারিগরি অধিদপ্তর সেভাবেই তাদের কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাবে।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, দেশে ও বিদেশে শ্রমবাজারে চাকরির সুযোগ বাড়াতে যুব সমাজকে টেকনিক্যাল শিক্ষায় শিক্ষিত করার বিকল্প নেই।
জানতে চাইলে কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব কে এম কবিরুল ইসলাম জানান, সারা দেশে প্রাথমিকভাবে বাস্তবায়নাধীন ১০০টি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মধ্যে ৭৫টির শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। ১৫টির কাজ শেষ হয়েছে এবং অবশিষ্টগুলোর কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। ফলে আগামী শিক্ষাবর্ষে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজগুলো কারিগরি শিক্ষায় যুক্ত হচ্ছে।
সচিব জানান, প্রতিটি টেকনিক্যাল স্কুলের জন্য তিন একর করে জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এবং সেখানে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হোস্টেল নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া শিক্ষকদের জন্য ডরমেটরি, প্রিন্সিপালের আবাসিক ভবন এবং একাডেমিক কাম ওয়ার্কশপ ভবন তৈরি করা হবে। ছাত্রদের জন্য কোনো হোস্টেল নির্মাণের বরাদ্দ না থাকলেও আগামীতে ছাত্র হোস্টেল নির্মাণের বিষয়ে সরকার আন্তরিক।
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) শোয়াইব আহমাদ খান বলেন, প্রতিটি উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রায় ৮৪০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবে।
ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের প্রি-ভোকেশনাল এবং নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত কমপক্ষে চারটি করে ট্রেডে পড়াশোনা করানো হবে। এ ছাড়া এসএসসি (ভোকেশনাল) এবং এইচএসসি (ভোকেশনাল) কোর্সসহ বিভিন্ন ট্রেডের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
প্রতিটি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রায় ৭৫ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। প্রতিটি স্কুলে ২০০ আসনে একটি করে ছাত্রী হোস্টেল, শিক্ষক ডরমিটরি, আধুনিক গবেষণাগার থাকবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন উপজেলায় কারিগরি শিক্ষার সুযোগ আরও প্রসারিত হবে এবং শিক্ষার্থীরা কর্মসংস্থানের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পাবে।
মহাপরিচালক জানান, প্রতিটি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের চারটি ট্রেড, ল্যাব ও ওয়ার্কশপের যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় আসবাব কেনা ও সরবরাহ, টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৬ হাজার ৪০০টি স্থায়ী পদ সৃষ্টি এবং আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কাজ সম্পাদনের জন্য বিভিন্ন পদে ৪০০টি জনবলের জন্য পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত কয়েক লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করবে।
প্রাথমিকভাবে যেসব উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ স্থাপন করা হচ্ছে, সেগুলো হলো౼ ঢাকার ধামরাই ও নবাবগঞ্জ; ফরিদপুরের শালথা, বোয়ালমারী ও ভাঙ্গা; গাজীপুরের কাপাসিয়া; গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি ও টুঙ্গিপাড়া; জামালপুরের মাদারগঞ্জ; কিশোরগঞ্জের ইটনা, কুলিয়ারচর ও মিঠামইন; মাদারীপুরের শিবচর; মানিকগঞ্জের শিবালয় ও হরিরামপুর; ময়মনসিংহের ধোবাউড়া ও নন্দাইল।
নারায়ণগঞ্জের সদর; নরসিংদীর বেলাব; নেত্রকোনার দুর্গাপুর; রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ও বালিয়াকান্দি; শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ ও ডামুড্যা; শেরপুরের নালিতাবাড়ি; টাঙ্গাইলের গোপালগঞ্জ ও নাগরপুর; রাজশাহীর চারঘাট ও তানোর; বগুড়ার দুপচাঁচিয়া; জয়পুরহাটের আক্কেলপুর; নওগাঁর পত্নীতলা ও সাপাহার; নাটোরের গুরুদাসপুর ও সিংড়া; চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল; পাবনার সাঁথিয়া; সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুর।
রংপুরের পীরগঞ্জ, দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ ও নবাবগঞ্জ; গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ ও সাঘাটা; কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী; লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ; নীলফামারীর ডিমলা ও সৈয়দপুর; পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ ও তেঁতুলিয়া; ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর ও পীরগঞ্জ।
বরিশালের আগৈলঝাড়া ও হিজলা; বরগুনার আমতলী; ভোলার লালমোহন; ঝালকাঠির রাজাপুর; পটুয়াখালীর গলাচিপা; পিরোজপুরের নাজিরপুর।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, রাউজান ও সীতাকুণ্ড, বান্দরবানের নাইক্ষংছড়ি; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা; চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ ও কচুয়া; কুমিল্লার বরুড়া, চৌদ্দগ্রাম ও মুরাদনগর; কক্সবাজারের কুতুবদিয়া ও টেকনাফ; ফেনীর ছাগলনাইয়া; নোয়াখালীর চাটখিল; খাগড়াছড়ির দীঘিনালা; লক্ষ্মীপুরের রামগতি; রাঙামাটির কাউখালী।
সিলেটের বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ; হবিগঞ্জের বানিয়াচং ও মাধবপুর; মৌলভীবাজারের রাজনগর ও জুড়ি; সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার।
খুলনার বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া; বাগেরহাটের মোংলা ও রামপাল; চুয়াডাঙ্গার জীবননগর; যশোরের কেশবপুর, মনিরামপুর ও শার্শা; ঝিনাইদহের শৈলকূপা; কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা; মাগুরার মোহাম্মদপুর ও শালিখা; মেহেরপুরের মুজিবনগর; নড়াইলের কালিয়া; সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ ও শ্যামনগর।
সূত্র : বাসস