আবার আগের নিয়মেই চালু হতে যাচ্ছে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা। এ বছর থেকেই ডিসেম্বরের বার্ষিক পরীক্ষা শেষে আলাদাভাবে এই বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি বৃত্তিপ্রাপ্তদের টাকার পরিমান বৃদ্ধির পাশাপাশি বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বাড়ানো হবে।
২০০৯ খ্রিষ্টাব্দেসাধারণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসিই) পরীক্ষা চালুর পর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল যুগ যুগ ধরে চলে আসা পঞ্চম শ্রেণির পৃথক বৃত্তি পরীক্ষা। যে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী পরবর্তী তিনটি শ্রেণি অর্থাৎ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিনাবেতনে পড়ার সুবিধার পাশাপাশি মাসে মাসে টাকাও পেতেন।
তবে সেই নিয়ম আবার ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, ডিসেম্বর মাসে বার্ষিক পরীক্ষা শেষেই বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। বৃত্তি পরীক্ষার নীতিমালার খসড়া এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বৃত্তি পরীক্ষা চালুর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। খসড়া নীতিমালা নিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হবে। এরপর নীতিমালা প্রকাশ করা হবে।’
বর্তমানে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা মাসে ৩০০ টাকা এবং সাধারণ বৃত্তিপ্রাপ্তরা ২২৫ টাকা করে পান।
নতুন নীতিমালার খসড়ায় উভয় ক্ষেত্রে টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি ও বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮২ হাজার ৫০০ থেকে বাড়িয়ে এক লাখ করার প্রস্তাবও করা হয়েছে।
এ ছাড়া এখন পর্যন্ত প্রতিটি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে মোট শিক্ষার্থীর ২০ শতাংশকে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে। এই হার বাড়ানো যায় কি না, তা নিয়েও বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান একজন কর্মকর্তা।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি।
২০২২ খ্রিষ্টাব্দে এসে এই পরীক্ষা স্থায়ীভাবে বাতিল করা হয়। পিইসিই পরীক্ষা বন্ধ হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই বন্ধ হয়ে যায় পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রবর্তিত প্রাথমিক বৃত্তিও।
তবে, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের শেষ দিকে হঠাৎ বৃত্তি পরীক্ষা চালুর ঘোষণা দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ সিদ্ধান্তকে ঘিরে তখন শিক্ষাবিদদের পক্ষ থেকে নানা সমালোচনা ও আপত্তি ওঠে। বিশেষজ্ঞরা বৃত্তি পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও নোট-গাইড কোম্পানীর উসকানিতে তৎকালীন প্রশাসন তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে।
ঘোষণার পর ওই বছরই অনুষ্ঠিত হয় প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা। তবে ফল প্রকাশে দেখা দেয় বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা। ফলাফল প্রকাশের পর তাতে নানা ভুল ধরা পড়ে, ফলে ফল স্থগিত করতে হয়। পরে সংশোধন করে নতুন করে ফল প্রকাশ করা হয়।
২০২৩ খ্রিষ্টাব্দেও বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, তবে শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।
সর্বশেষ বৃত্তিতে ৩৩ হাজার ট্যালেন্টপুল এবং ৪৯ হাজার ৩৮৩ জন সাধারণ বৃত্তি পেয়েছিল। উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডভিত্তিক কোটা পদ্ধতিতে এই বৃত্তি দেওয়া হয়। সর্বশেষ প্রতিটি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে মোট শিক্ষার্থীর ২০ শতাংশকে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল