অভিভাবকহীন কুয়েট নানান সংকটে | বিশ্ববিদ্যালয় নিউজ

অভিভাবকহীন কুয়েট নানান সংকটে

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) উপাচার্য হিসেবে নিয়োগের ১৮ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেন অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলী।

#শিক্ষার্থী #কুয়েট #শিক্ষক

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) উপাচার্য হিসেবে নিয়োগের ১৮ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেন অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলী। তার পদত্যাগের এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও এখনো নতুন উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে অভিভাবকহীন হয়ে রয়েছে দেশের অন্যতম উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। এতে প্রতিষ্ঠানটিতে দেখা দিয়েছে নানান সংকট। বিশেষ করে বেতন-ভাতা বন্ধ, উন্নয়ন কাজে ধীরগতি এবং প্রশাসনিক জটিলতায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদাররা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

কুয়েট সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের আর্থিক ক্ষমতা উপাচার্যের হাতে ন্যস্ত। তার স্বাক্ষর ছাড়া কোনো বিল পাস হয় না। উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে চলতি মাসে ৪৩৩ জন শিক্ষক, ২৩২ জন কর্মকর্তা এবং পাঁচ শতাধিক কর্মচারীর বেতন-ভাতা প্রদান অনিশ্চিত। আসন্ন কোরবানির ঈদের আগে এই অনিশ্চয়তা তাদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে। এ ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটসোর্সিং নিরাপত্তাকর্মীর সুপারভাইজার মো. সুমন সরদার বলেন, আমরা স্বল্প বেতনে চাকরি করি। দুই মাস ধরে বেতন বন্ধ। ধার-দেনা করে সংসার চালাতে হচ্ছে। দোকানদাররা পাওনা টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন। সামনে ঈদ, ছেলে-মেয়ে নিয়ে কী করব, দুশ্চিন্তায় আছি।’ তিনি আরও জানান, বেতন না পাওয়ার কথা কাউকে বললেও বিশ্বাস করেন না।

কুয়েটের অবকাঠামো ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক ড. জুলফিকার হোসেন বলেন, প্রায় ৬০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। কিন্তু উপাচার্যের স্বাক্ষরের অভাবে ঠিকাদাররা সময়মতো বিল পাচ্ছেন না। ফলে তারা কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছেন। এভাবে চললে উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি জানান, পূর্ববর্তী উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদকে অব্যাহতি দেওয়ার পর থেকে নতুন কোনো বিলে স্বাক্ষর করা হয়নি।

কুয়েটের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. আব্দুর রহমান বলেন, মাস শেষ হতে এখনো দুই-তিন দিন বাকি। আশা করি এর মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তবে, শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে এই আশ্বাস নিয়ে সংশয় রয়েছে।

প্রসঙ্গত, শিক্ষকদের অনাস্থা ও আন্দোলনের মুখে গত ১৯ মে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলী ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন এবং ২২ মে পদত্যাগ করেন। এর আগে, ২৫ এপ্রিল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ঘটনাগুলোর পর থেকে কুয়েটে প্রশাসনিক শূন্যতা বিরাজ করছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কুয়েটে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। প্রশাসনিক এই সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমও প্রভাবিত হচ্ছে। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব হচ্ছে, যা শিক্ষা কার্যক্রমে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।

কুয়েট শিক্ষক সমিতির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উপাচার্য নিয়োগে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সংকট আরও গভীর হবে। বেতন-ভাতার পাশাপাশি গবেষণা, পরীক্ষা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।’ তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

কুয়েটের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক শূন্যতা দীর্ঘায়িত হওয়ায় শিক্ষক-কর্মচারী-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা শিগগিরই নতুন উপাচার্য নিয়োগের মাধ্যমে এই সংকট সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।

#শিক্ষার্থী #কুয়েট #শিক্ষক