সম্মান শ্রেণির পরীক্ষা দিতে এসে সন্তান প্রসব করেছেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা সরকারি আলিমুদ্দিন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হাজেরা খাতুন (২৭)।
বুধবার(১৪ মে) দুপুরে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছেলে সন্তান প্রসব করেন হাজেরা।
জানা যায়, বুধবার ছিল হাজেরা খাতুনের মৌখিক পরীক্ষা। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে চলে বেলা ১টা পর্যন্ত। এই মৌখিক পরীক্ষা দিতে কুড়িগ্রামের উলিপুর থেকে আজ সকালে মাইক্রোবাস ভাড়া করে হাতীবান্ধা আসেন। সঙ্গে তার স্বামী, শিশুকন্যা এবং দুই নারী স্বজন। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষা শুরুর আগেই শুরু হয় প্রসববেদনা।
পরে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে হাজেরাকে দ্রুত হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রসূতি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানে স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে সকাল সাড়ে আটটার দিকে হাজেরা এক ছেলেসন্তানের জন্ম দেন। এখানেই থামেননি ওই পরীক্ষার্থী। মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দুপুর সাড়ে ১২টায় মাইক্রোবাসে করে কলেজে উপস্থিত হন। কলেজের তৃতীয় তলার পরিবর্তে কলেজ কর্তৃপক্ষ মাইক্রোবাসের ভেতরেই হাজেরার মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করেন।
ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর প্রশংসায় ভাসছেন এই পরীক্ষার্থী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ঘটনাটি ব্যাপক আলোড়ন ফেলেছে। হাজেরা খাতুনের মনোবল অন্য শিক্ষার্থীদের জন্য অনুকরণীয় বলে মন্তব্য করেছেন তাঁর বিভাগীয় প্রধান মোজাম্মেল হক।
হাজেরা খাতুন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার চরবজরা গ্রামের মো. আবদুর রশিদের স্ত্রী। তার বাবার বাড়ি যশোরে। পাঁচ বছর আগে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। সদ্যোজাত ছেলে ছাড়াও তাদের চার বছরের এক মেয়েসন্তান আছে, নাম রোকাইয়া জান্নাত রাইসা। বিএসএস পাস স্বামী আবদুর রশিদ একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পল্লি প্রাণী চিকিৎসক।
আবদুর রশিদ বলেন, হাতীবান্ধায় প্রবেশের সময় স্ত্রীর প্রসববেদনা ওঠে। আমি কলেজের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলি। ওনারা বলেন, আগে আমার স্ত্রীর নিরাপদ প্রসবের জন্য হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে যেতে। ওনাদের সহায়তায় স্ত্রীকে হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি করাই। এরপর সেখানে সকাল সাড়ে আটটার দিকে নরমাল ডেলিভারিতে আমার স্ত্রী একটি ফুটফুটে পুত্রসন্তানের জন্ম দেয়। আমার স্ত্রী এবং নবজাতক পুত্রসন্তান সুস্থ আছে।
হাজেরা খাতুন পরীক্ষা ও নবজাতককে নিয়ে ব্যস্ত থাকায় তার সঙ্গে বেশি কথা বলা যায়নি। তিনি বলেন, আমাকে মাস্টার্স পরীক্ষা ভালোভাবে সম্পন্ন করতে অনুপ্রেরণা, সাহস ও সহায়তা দেওয়ার জন্য বিভাগীয় প্রধান মোজাম্মেল হক স্যারসহ অন্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, মাস্টার্স পাসের পর নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই, পরিবারকে সহায়তা করতে চাই। সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করতে চাই।
মোজাম্মেল হক বলেন, সকালে যখন বিষয়টি আমরা অবহিত হই, তখন হাজেরা খাতুনের স্বামী মো. আবদুর রশিদকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা করা হয়েছে। আমরা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের পক্ষ থেকে নবজাতক শিশু ও হাজেরা খাতুনের জন্য উপস্থিত কিছু উপহারসামগ্রী দিয়েছি। আমরা খুব খুশি যে নবজাতক শিশু ও তার মা হাজেরা খাতুন সুস্থ আছে। আরও খুশি, হাজেরা খাতুন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে এ জন্য। তার মনোবল অনুকরণীয়। আমরা নবজাতক শিশু ও হাজেরা খাতুনের জন্য দোয়া করছি।
আবদুর রশিদ বলেন, আমার স্ত্রীর পড়াশোনার প্রতি ভীষণ আগ্রহ। আমিও উৎসাহ-অনুপ্রেরণা জুগিয়ে এসেছি। হাতীবান্ধা সরকারি আলিমুদ্দিন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোজাম্মেল হক স্যারসহ অন্যরা আমার স্ত্রী ও নবজাতক শিশুকে নতুন জামাকাপড়সহ উপহারসামগ্রী দিয়েছেন। আমিও খুশি হয়ে তাঁদের সবাইকে মিষ্টিমুখ করিয়েছি।
বিকেলে হাতীবান্ধা থেকে আবদুর রশিদ ও হাজেরা খাতুন দম্পতি নবজাতক সন্তানসহ অন্যদের নিয়ে ভাড়া করা মাইক্রোবাসে গ্রামের বাড়ি উলিপুরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁরা পৌঁছাতে পারবেন বলে জানা যায়।