সিঙ্গাপুর থেকে নীলফামারীতে শিক্ষকতা করেন তিনি! | স্কুল নিউজ

সিঙ্গাপুর থেকে নীলফামারীতে শিক্ষকতা করেন তিনি!

কাগজে-কলমে কিশোরীগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া দোলাপাড়া আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক মেহেদী হাসান নিয়মিত স্কুল আসছেন।

#স্কুল #শিক্ষক #শিক্ষার্থী

কাগজে-কলমে নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া দোলাপাড়া আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক মেহেদী হাসান নিয়মিত স্কুল আসছেন। হাজিরা খাতায় নিয়মিত স্বাক্ষরও করছেন। উত্তোলন করছেন সরকারের অংশের বেতন ভাতাও।

জানা যায়, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৯ নভেম্বরে দোলাপাড়া আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগ দেন মেহেদী হাসান। এক বছরের মাথায় এমপিওভুক্ত হন।

তবে যোগদানের দুই মাসের মাথায় তিনি সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান। কিন্তু তিনি সিঙ্গাপুরে কর্মরত থাকলেও স্কুলের হাজিরা খাতায় নিয়মিত স্বাক্ষর করেন! কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষিকা তানজিলা আক্তার তার আপন বোন।

বোনের খুঁটির জোরে সিঙ্গাপুরে থাকার পরেও তিনি নিয়মিত হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করার পাশাপাশি বেতন-ভাতাও উত্তোলন করে চলেছেন।

নিয়ম অনুযায়ী যে সব শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্ত হন তারা (ইএফটি) ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে সরাসরি নিজের অ্যাকাউন্টে টাকা পেয়ে থাকেন।

মেহেদী হাসান দেশে না থাকার পরেও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান তার অ্যাকাউন্ট ইএফটির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি শুনেছি মেহেদী প্রবাসে কর্মরত। তারপরও কীভাবে তার অ্যাকাউন্ট ইএফটি তালিকায় নিয়ে আসলেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমি কাগজপত্র দেখে ইএফটি করে দিয়েছি। কিন্তু বেতন উত্তোলন করে কি না জানি না।

এ ব্যাপারে মাগুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান মিঠু বলেন, ওই বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মেহেদী হাসান গত ছয় মাসের বেশি সময় ধরে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও এলাকার মানুষের কাছ থেকে জেনেছি।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মৌসুমী হক বলেন, প্রবাসে থেকে চাকরি করার কোনো বিধান নেই।

প্রবাসে থেকে বেতন উত্তোলনসহ অন্যান্য বিষয়গুলো তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি জানান, এর আগেও ওই বিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মী মাহাবুল ইসলাম চেক-সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল, সেটিরও তদন্ত চলছে।

অভিযোগের ব্যাপারে মাগুড়া-দোলাপাড়া আদর্শ নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তানজিলা আক্তার বলেন, আমি কিছু বলতে পারব না। যা বলার আমার স্বামী বলবে। আপনারা তার সঙ্গে কথা বলেন।

মাগুড়া-দোলাপাড়া আদর্শ নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান প্রধান শিক্ষকের স্বামী শাহ আলম বলেন, ভাই এগুলো যা হয়েছে বাদ দেন।

একটা প্রতিষ্ঠান অনেক কষ্ট করে তৈরি করতে হয়। তাছাড়া যেখানে যান না কেন টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। নিয়মের মধ্যে থাকলে সব কিছু সম্ভব হয় না। আমি আপনাদের সঙ্গে দেখা করব।

বিষয়টি নিয়ে কথা বললে নীলফামারী জেলা শিক্ষা অফিসার হাফিজুর রহমান বলেন, প্রধান শিক্ষিকা তানজিলা আক্তার শুধু কাঠের পুতুলের মতো চেয়ারে বসে থাকেন।

সব কাজ করেন তার স্বামী শাহ আলম। এর আগে শাহ আলম আমার স্বাক্ষর জাল করে কিছু কাগজপত্র ডিডি অফিসে পাঠিয়েছিল। আমি জানার পর তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।

ওই বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক মেহেদী হাসান সিঙ্গাপুরে থেকেও কীভাবে ইএফটির তালিকাভুক্ত হলেন—এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অভিযোগ রয়েছে, শাহ আলম ও তার স্ত্রী তানজিলা আক্তার ব্যাকডেটে নিয়োগ দেখিয়ে বহু শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে শুরু থেকে যারা কর্মরত ছিলেন দেখা গেছে এমপিওভুক্ত হওয়ার পর তাদের কেউ নিয়োগ পাননি।

#স্কুল #শিক্ষক #শিক্ষার্থী