এআই জেনারেটেড প্রতীকী ছবি
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ পদ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে এই পদে দায়িত্ব পালন করছেন ১৪শ বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আজাদ খান।
এর আগে তিনি জামালপুরের সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক পদে কর্মরত ছিলেন।
১.
গত সপ্তাহে মহাপরিচালকের অফিস কক্ষের দরজায় লাথি পড়েছে। কিন্তু শিক্ষা ভবনের ওসি-খ্যাত ডিডি (উপ-পরিচালক) ও এডি (সহকারি পরিচালক) প্রশাসন কেউ এগিয়ে আসেননি তাদের ক্যাডারের মুকুট মহাপরিচালকের সম্মান রক্ষায়। নিয়মিত বেতন ছাড়াও কর্তব্যরত দুই ডজন আনসারের বিনামূল্যে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে অধিদপ্তরেই। তারাও এগিয়ে আসেননি।
যারা ডিজির দরজায় লাথি মেরেছেন তারা সরকারি কলেজে প্রদর্শক পদে চাকরির ফল প্রত্যাশী। যদি তাদের চাকরি হয় তাহলে পদোন্নতি পেয়ে একদিন তারাও সরকারি কলেজের অধ্যাপক হতে পারবেন। শিক্ষা প্রশাসনের চেয়ারম্যান, পরিচালকও হতে পারবেন।
আরো পড়ুন: নেড়ি কুকুরের ভাষণে শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি নিয়োগ বিত্তান্ত
২.
গত মাসের কথা। মহাপরিচালক ড. আজাদ খান কখনো পায়ে হেঁটে চলছেন। কখনো রিকশায়। কখনো মেট্রোরেল ব্যবহার করছেন। কারণ, তার জন্য সরকারি বরাদ্দের গাড়িতে তেল-গ্যাস সরবরাহ বন্ধ। এসবের দায়িত্বে তারই ক্যাডারের জুনিয়র সহকর্মী ডিডি (এডমিন)।
৩.
গত সপ্তাহের কথা। মন্ত্রণালয়ের তালিকার বাইরে থাকা বেসরকারি বিএড কলেজ থেকে সনদ নেওয়া কয়েকজন স্কুল-শিক্ষক ও বিএড কলেজের মালিক জনৈক নজরুলের নেতৃত্বে মহাপরিচালকের কক্ষের সামনে হইচই করেছেন। ইউটিউবার ও ফেসবুকার ভাড়া করে নিয়ে এসে মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে লাইভ অপপ্রচার করেছেন অনেকক্ষণ। পরে শিক্ষা ভবনের নীচতলার ক্যাম্পাসে মানবন্ধনও করেছেন তারা। তাদের দাবি, বিএড স্কেল পাওয়া। মন্ত্রণালয় তাদেরকে স্কেল দিতে না করেছে।
এসব নামধারী বিএড কলেজের মালিক ও তাদের সনদ ক্রেতাদের অধিদপ্তরে ডেকে এনেছেন বিএড স্কেল আদায় করতে। নেপথ্যে রয়েছেন অধিদপ্তরের কতিপয় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী, যারাও এসব বিএড ও এমএড কলেজ থেকে সনদ নিয়েছেন গত কয়েকবছরে।
এসব সনদ দিয়ে তারা পদোন্নতি নিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হওয়ার সব আয়োজন চূড়ান্ত করে ফেলেছেন। মহাপরিচালককে না জানিয়েই জেষ্ঠ্যতার তালিকা তৈরি ও অন্যান্য তথ্য আহ্বান করা হয়েছে একাধিকবার।
৪.
প্রতিমাসে মাসিক সমন্বয় সভা হয় মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে। কিন্তু সেই সভায় কখনো যোগদান করেন না একজন পরিচালক। অনুপস্থিত থাকার কৈফিয়তও দেননা। অথচ সেই পরিচালক বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার হলেও গত ২০ বছর ধরে আদালতের দোহাই দিয়ে ঠিকাদারি ও সরবরাহকারীর ব্যবসা করেছেন ও করছেন। মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অথবা ডিআইএর পরিচালক অথবা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান পদ বাগানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন এই পরিচালক-এমন কথাই শিক্ষা প্রশাসনের সবার মুখে মুখে।
৫.
জামালপুরের ইসলামপুরের গুঠাইল বাজারের জনৈক মো. গোলাম মোস্তফা লিখিত অভিযোগ করেছেন মাউশি অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ অঞ্চলের ডিডির বিরুদ্ধে। অভিযোগটা করা হয়েছে অধিদপ্তরের মনিটরিং ও ইভ্যালুয়েশন উইংয়ের পরিচালক বরাবর। গত ২২ জুন কথিত ওই অভিযোগটা পেয়ে একজন সহকারি পরিচালককে নির্দেশ করেছেন পরিচালক। পরিচালকের এই কাণ্ডটা সুষ্পষ্ট অসদাচরণ—এমন কথা অধিদপ্তরের অনেকেরই মুখে মুখে।
৬.
মাউশি অধিদপ্তরের মাদরাসা শাখা হিসেবে পরিচিত বিশেষ শাখাটার এক সময় কাজ ছিলো কারিগরি ও মাদরাসার এমপিও ও অন্যান বিষয়াদি দেখা। কিন্তু বহুবছর আগে কারিগরি ও মাদরাসার পৃথক অধিদপ্তর হওয়ায় ওই শাখার তেমন কোনো কাজ নেই।
কিন্তু গত দশ বছরে ওই শাখার দুটি কক্ষে বসে ফ্যাসিস্টদের দোসর সৈয়দ মইনুল-তোফা-খালিদ সাইফুল্লাহ গংরা উত্তরা ১৭ ও ২৬ নম্বরে সেক্টরে জমির ক্রেতাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক আলোচনা করতেন। চাঁদপুরের অখ্যাত অদরকারি পুরানবাজার কলেজের বেদরকারি অধ্যক্ষ রতন মজুমদার শিক্ষা ক্যাডারের বদলি বাণিজ্য ও মাস্তিতে লিপ্ত থাকতেন। মদের আড্ডা বসানোরও অভিযোগ ছিলো। গত বছরের পাঁচ আগস্টের পর রতনরা পালিয়ে গেলেও ওই কক্ষটিতে মহাপরিচালকের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়নি আজও।
৭.
মহাপরিচালকের ফেসবুকের কমেন্টে একজন অভিযোগ করেছেন ৩৪ বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। অভিযোগ খতিয়ে দেখা যায়, পদোন্নতির জন্য মন্ত্রণালয়ের ডেস্ক অফিসারদের খুশী করার কথা বলে মোট সাত লাখ টাকা তুলেছেন। কিন্তু মহাপরিচালক যোগদানের বহু আগেই ওই জুনিয়র কর্মকর্তা ‘শক্তিশালী চ্যানেলে’ অধিদপ্তরের তস্য ছোটপদে যোগদান করেছেন।
৮.
শিক্ষা ভবনের জামতলায় অবস্থিত ক্যান্টিন। বহু বছর ধরে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের তত্ত্বাবধানে চলে আসছে। ক্যান্টিন ভবন, চেয়ার, টেবিল, গ্যাস থেকে শুরু করে সবকিছুই অধিদপ্তরের অর্থায়নে। তবু, সেখানে খেতে যাওয়ার পরিবেশ নেই অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের। বিষয়টা প্রশাসন শাখার দেখভাল করার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না।
শিক্ষা অধিদপ্তরের ক্যান্টিনে গত সপ্তাহে কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা সার্বিক বিষয় নিয়ে আলাপ করছিলেন। তাদের কথায়ও উঠে আসে মহাপরিচালকের অসহায়ত্বের তথ্য। তারা একমত যে, মহাপরিচালক তথা শিক্ষা ক্যাডারের মর্যাদা রক্ষায় শিক্ষা ক্যাডারের শত্রু হিসেবে পরিচিত সাবেক শিক্ষাসচিব মোহাম্মদ শহীদুল আলমের প্রেত্মাতাদের হটাতে হবে এখনই।
সার্বিক বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আজাদ খান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ‘লিখে দেন মহাপরিচালক এখন মহাঅসহায়!’
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।