জার্মানি ইউরোপের অন্যতম অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিশালী দেশ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্বমানের শিক্ষা, সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশে স্থায়ী হওয়ার সুযোগ ও কয়েক হাজার কোর্স থেকে পছন্দের কোর্সে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থাকার কারণে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের কাঙ্ক্ষিত দেশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের অন্যতম পছন্দ জার্মানি। কিন্তু বাদ সেধেছে অপেক্ষার সময় বা ওয়েটিং পিরিয়ড। ভবিষ্যতে এই অপেক্ষার সময় ৪০ বছরেও গড়াতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার। একইসঙ্গে তিনি শিক্ষার্থীদের বিকল্প সম্ভাবনার দিকেও নজর দিতে পরামর্শ দিয়েছেন।
জানা যায়, জার্মানির ১৬টি প্রদেশের মধ্যে ১৪টিতে শিক্ষার্থীদের কোনো টিউশন ফি দিতে হয় না। প্রতি ছয় মাস অন্তর ২০০ থেকে ৪০০ ইউরো সেমিস্টার ফি দিতে হয়, যার মধ্যে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যে রাজ্যে অবস্থিত, সেখানকার সকল গণপরিবহনের ভাড়াও অন্তর্ভুক্ত থাকে। রয়েছে খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ। এসব কারণে জার্মানি শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে। কিন্তু বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সহজে মিলছে না সিরিয়াল। যার কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে ভর্তিচ্ছু ৮০ হাজার শিক্ষার্থীর জার্মানি যাওয়ার স্বপ্ন।
ঢাকায় অবস্থিত জার্মান দূতাবাসের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে এক হাজার ৭২৩ জনের ভিসা দিয়েছে জার্মানি। যা করোনার আগের বছরগুলোর তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। বর্তমানে অনেক শিক্ষার্থী অফার লেটার ও ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পরও যেতে পারছেন না। ভর্তিচ্ছুরা চাচ্ছেন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত জার্মান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে এর সমাধানে আসা।
২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন অপেক্ষমাণ তালিকায়। যা বাড়ছে নিয়মিত। অন্যদিকে জার্মান দূতাবাসের বার্ষিক সক্ষমতা মাত্র দুই হাজার।
আরিফ হাসান নামে এক ভর্তিচ্ছু বলেন, আড়াই বছর ধরে জার্মানির অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছেন। এপয়েন্টমেন্টের সময় বলা হয়েছিল অপেক্ষায় থাকতে হবে ১৬/১৭ মাস। কিন্তু আড়াই বছর পার হয়ে গেলেও পাননি সিরিয়াল। তিনি যোগ করেন জার্মানি যেতে পারবেন কিনা জানেন না; তবে ‘সেমিস্টার কন্ট্রিবিউশান ফি’ বাবদ প্রায় এক লাখ টাকা দিতে হয়েছে।
আলমগীর বলেন, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু এখনো যেতে পারিনি। যেতে পারবো কিনা তার কোনো নিশ্চয়তাও পাচ্ছি না।
জার্মানি যাওয়ার পথ সহজকরণের জন্য শিক্ষার্থীরা একাধিকবার বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসান আলম নামে এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী বলেন, আমরা যোগাযোগ করলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ইতিমধ্যে একাধিকবার ঢাকাস্থ জার্মান দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলমান ভিসা সমস্যার আশু সমাধানের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত আমাদের জানিয়েছেন, সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিদ্যমান ভিসা আবেদন সংখ্যার অনুপাতে দূতাবাসে আবেদন প্রক্রিয়াকারী জনবলের সংকট রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে ওয়েটিং পিরিয়ড ছিল ১২-১৫ মাস। এরপর তা দাঁড়ায় ১৫-১৯ মাস। পরে তা বাড়িয়ে করা হয় ২৪ মাস। বর্তমানে দূতাবাস নোটিশ দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে যে, তারাও জানে না অপেক্ষার সময়কাল কতোদিন হবে।
জার্মান দূতাবাস বাংলাদেশের অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজে এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আবেদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায়, আপনার জন্য অপেক্ষার নির্দিষ্ট সময় সম্পর্কে আমরা কোনো ধারণা দিতে পারছি না। অনুগ্রহ করে ধৈর্য ধরুন এবং প্রক্রিয়ার জন্য যথাযথভাবে অপেক্ষা করুন।
জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের এক খবরে বলা হয়েছে, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মতো একই ধরনের ভোগান্তিতে পড়েছিলেন পাকিস্তানের শিক্ষার্থীরা। তবে, এখন সেই সংকট কাটিয়ে উঠতে পেরেছে দেশটি। প্রতিবেদন তথ্যমতে, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্টের পর ১২ মাস বা তারও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছিলো দেশটির শিক্ষার্থীদের।
গত ১২ মার্চের জামান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্রোস্টারের টুইটে দেওয়া তথ্য অনুসারে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম প্রান্তিকে ১০ হাজার ৯৫৫ জন, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ১০ হাজার ৬৩৫, তৃতীয় প্রান্তিকে ১৬ হাজার ৪৬৯ এবং শেষ প্রান্তিকে ১৪ হাজার ৪৭৬ জন জার্মানির ভিসার জন্য আবেদন করেন। এছাড়া ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত আবেদন জমা দিয়েছেন ৮ হাজার ৭৬২ জন শিক্ষার্থী। এ নিয়ে মোট আবেদনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৯ হাজার ৮৮০।