শিক্ষার্থীরা মারামারি করলে সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন কীভাবে দেখবো | বিশ্ববিদ্যালয় নিউজ

শিক্ষার্থীরা মারামারি করলে সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন কীভাবে দেখবো

ঢাবি ও সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে নীলক্ষেত ও নিউমার্কেট এলাকায় দীর্ঘ প্রায় ৪ ঘণ্টা সংঘর্ষ, ধাওয়া পালটা ধাওয়া চলে। এরপর শিক্ষার্থীরা আজ সকাল ৯টা থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট অবরোধ ঘোষণা করে। চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান নেয়া ইবতেদায়ি শিক্ষকদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার এক পর্যায়ে সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এ সময় পুলিশকে লাঠিপেটা করতে দেখা গেছে। এতে এক নারীসহ ছয়জন আহত হয়েছেন।

#সাত কলেজ #ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেছেন, আমরা জাতি হিসেবে কতটা বর্বর তা প্রতিদিন রাস্তাঘাটে যা ঘটে তা পৃথিবীর সামনে আমাদেরকে উলঙ্গ করে দেয়।

ঢাবি ও সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে নীলক্ষেত ও নিউমার্কেট এলাকায় দীর্ঘ প্রায় ৪ ঘণ্টা সংঘর্ষ, ধাওয়া পালটা ধাওয়া চলে। এরপর শিক্ষার্থীরা আজ সকাল ৯টা থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট অবরোধ ঘোষণা করে। চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান নেয়া ইবতেদায়ি শিক্ষকদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার এক পর্যায়ে সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এ সময় পুলিশকে লাঠিপেটা করতে দেখা গেছে। এতে এক নারীসহ ছয়জন আহত হয়েছেন।

সোমবার (২৭ জানুয়ারি) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন কাঠামো দশম গ্রেডে উন্নীত করার দাবিতে শহীদ মিনারে সমাবেশ করছেন শিক্ষকরা। সভা শেষে তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে মিছিল করে যেতে গিয়ে পুলিশের বাধার মুখে পরে। বেক্সিমকো গ্রূপের বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ থাকায় অনেকে বেতন না পেয়ে চাকরি হারা হওয়ার আশংকায় ভুগছে। এর ফলে তারাও দাবির পক্ষে রাস্তায় নামে এবং ভাঙচুর করে। এইরকম কোনো না কোনো ইস্যুতে প্রতিদিন রাস্তায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, মারামারি, অবরোধ ইত্যাদি চলছেই। এইগুলো কি কোন সভ্য দেশের কাজ? ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর বা নরসিংদীর চরাঞ্চলে টেঁটাসহ দেশীয় অস্ত্র মারামারির সংবাদ প্রায়ই পত্রিকায় আসে। এমনকি মাইকিং করে দিনক্ষণ ঠিক করে গ্রামবাসীদের মাঝে মারামারি হয়। বাংলাদেশের সাপেক্ষে ঐসব গ্রাম যতটা বর্বর পৃথিবীর সভ্য দেশের সাপেক্ষে বাংলাদেশ ততটা বর্বর।

অধ্যাপক মামুন বলেন, এইসব থেকে মুক্তির পথ হলো আমাদের জনগণকে আগে মানুষ বানাতে হবে। মানুষের মত দেখতে হলেই মানুষ হয় না। মানুষ হতে হলে যথাযথ শিক্ষার প্রয়োজন। গত ৫৩ বছর ধরেই আমরা এই জায়গাটাতে কোনো মনোযোগ দেই নাই। স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনিয়োগ করতে হবে। আর আজকে বিনিয়োগ করলেই কালকে ফল পাওয়া যাবে না। দ্রুত ফল আসবে না ভেবে কোনো সরকারই এই খাতে যথাযথ বিনিয়োগ করে নাই। যেই ব্যক্তি দূরের জিনিস দেখতে পায় না তাদেরকে আমরা শর্ট সাইটেড বলি আর যে পারে তাদেরকে আমরা ফার সাইটেড বলি। আমাদের সরকারেরা কখনোই ফার সাইটেড ছিলো না কারণ ফার সাইটেড হতে হলে শুধু বাহিরের দৃষ্টি না অন্তর্দৃষ্টিও থাকতে হয়।

অধ্যাপক মামুন আরো বলেন, আমাদের লেখাপড়ার মান কি তা আমাদের রাস্তাঘাটই বলে দেয়। আমার এক বিদেশি বন্ধুর পরিবার আছে যারা বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে আছে। তাদের মা বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছে। তাই তারা মাকে নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যায়। এরপর তারা শ্রীলংকায় বেড়াতে যায়। সেখান থেকে ফিরে এসে ওদের পরিবারের ছোট থেকে শুরু করে সেই বৃদ্ধ মা সবাই শ্রীলংকার ভূয়সী প্রশংসা করে। ওখানকার মানুষ, পরিবেশ, ট্রান্সপোর্ট, হোটেল রেস্টুরেন্ট সবকিছু খুবই ভালো। নিজের দেশের সমস্যা নিয়ে নিজে হাজারো সমালোচনা করি। কিন্তু বিদেশি কেউ বাংলাদেশ নিয়ে সমালোচনা বা কটু কথা বললে খুব কষ্ট পাই। কষ্ট পেলে কি হবে সমাধানের পথ বলা ছাড়া আর কিছু করার ক্ষমতা আমার নেই। কবে আমরা সভ্য হবো? কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যদি রাস্তাঘাটে মারামারি করে কিভাবে সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখবো?

#সাত কলেজ #ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়