একশ কোটি টাকার কাগজের কমিশন চারশ কোটি কী করে হয়! | বই নিউজ

একশ কোটি টাকার কাগজের কমিশন চারশ কোটি কী করে হয়!

একশ কোটির কমিশন চারশ কোটি কী করে হয়!

#বই

ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশের কারণে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্ট ও ডেইলি ক্যাম্পাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি)। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এনসিটিবি কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এনসিটিবি চেয়ারম্যান প্রফেসর এ কে এম রিয়াজুল হাসান এ কথা জানান। একশ কোটি টাকার কাগজের কমিশন চারশ কোটি কী করে হয়! একশ কোটি টাকার কাগজের কমিশন চারশ কোটি কী করে হয়!তিনি বলেন, ঢাকা পোস্ট হোক বা ডেইলি ক্যাম্পাসই হোক আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।

এ সময় এনসিটিবিকে জড়িয়ে ও পাঠ্যবইয়ের কাগজ কেনার কমিশন বাণিজ্যের দাবি তুলে সম্প্রতি প্রকাশিত সংবাদে আপত্তি জানান এনসিটিবি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, এনসিটিবির পাঠ্যবই ছাপার কাগজ কেনার সঙ্গে রাখাল রাহার কোনো সম্পর্কেই নেই। এ ব্যাপারে তিনি আসলে কিছুই জানেন না। কাগজ কেনার টেন্ডার শুরুর আগেই তিনি চলে গেছেন।

একশ কোটি টাকার কাগজের কমিশন চারশ কোটি কী করে হয়!

বিষয়টি আরো পরিষ্কার করে রিয়াজুল হাসান প্রশ্ন তোলেন, ঢাকা পোস্টের রিপোর্টে বলা হয়েছে, সদ্য সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ স্যারের ছাত্র হিসেবে নাকি রাখাল রাহা পরিচয় দিতেন এবং এ পরিচয়ে তিনি প্রভাব খাটিয়েছেন- এই তথ্য মোটেই সত্য নয়। পাঠ্যবইয়ের কাগজই কেনা হয়েছে ১০০ কোটি টাকার, সেখানে কীভাবে ৪০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে?

তিনি বলেন, ঢাকা পোস্ট ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। মিথ্যে গল্প সাজিয়েছে। প্রকৃত অর্থে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আমার এ বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। সেখানে আমাকে কোট করে যে বক্তব্য দেয়া হয়েছে তা ভিত্তিহীন। এটা আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা।

এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, বিগত ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের কারিকুলাম নিয়ে অভিভাবক মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। রাখাল রাহা সেই শিক্ষাক্রম নিয়ে অভিভাবকদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ ছাড়া আমরা আগেই রাখাল রাহার যোগ্যতা সর্ম্পকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। তিনি ত্রিভূবনের শিক্ষা নিয়ে একটি সংগঠন করেন। যার ফলে শিক্ষায় তার একটা ভালো দখল রয়েছে। সম্পাদনা নামেও তার একটা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আমরা রাখাল রাহার সব মতের সঙ্গে একমত নাও হতে পারি। তবে কারো ধর্ম বিশ্বাসের সঙ্গে এনসিটিবির কাজের কোনো সম্পর্ক নেই। কিছুদিন আগে একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে সম্ভবত মামলাও হয়েছে। এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়।

একশ কোটি টাকার কাগজের কমিশন চারশ কোটি কী করে হয়!

এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, এবার বিনামূল্যের পাঠ্যবই বিতরণ কার্যক্রম ব্যর্থ করতে সুচতুর চক্রান্ত করা হচ্ছে এবং সেটি চলমান রয়েছে৷ এই চক্রান্ত কারা করছে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। বিগত ১৫ বছরে কোন সময়ে সব বই দেয়া শেষ হয়েছে সেই পরিসংখ্যান আমাদের কাছে আছে। আমরা চেষ্টা করছি বই দ্রুত দেয়ার। আমাদের কিছু কর্মকর্তা এনসিটিবি কার্যালয়ে সারা দিন-রাত থেকে কাজ করছেন। কিছু প্রেস রয়েছে সিক, তাদেরকে টেনে তোলার চেষ্টা করছি।

এনসিটিবি চেয়ারম্যান আরো বলেন, ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে পাঠ্যবই পরিমার্জনে দুইমাস সময় লাগে- এটা এনসিটিবি থেকে কে বা কারা বলেছে জানি না। আমরা বছরজুড়েই বই পরিমার্জন করি। তবে এমন বক্তব্য দেয়া লোকদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন।

শিক্ষাক্রম নিয়ে রিয়াজুল হাসান বলেন, বিদেশের চক্রান্তমূলক শিক্ষাক্রম আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিলো। যাতে আমরা এগোতে না পারি। সেই জায়গা থেকে আমরা বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, আগের শিক্ষাক্রম বাতিলের জন্য রাখাল রাহার নেতৃত্বে অভিভাবকরা আন্দোলন করেছে। সে কারণেই আমরা আগের কারিকুলামে ফিরে আসতে পারছি। এর আগে কোভিডের মধ্যে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হয়েছিলো, যা মোটেই ঠিক হয়নি। এর ফলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বেশি ক্ষতি হয়েছে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের।

তানভীর নামের এক ছাত্র-সমন্বয়কের ৪০০ কোটি টাকার কমিশনে জড়িত থাকার বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, সমন্বয়করা কেউ রাস্তা থেকে উঠে আসেননি। তাদের এসব চুরি-চামারি করে খাওয়ার দরকার নেই। বরং উপদেষ্টাদের নির্দেশনায় সমন্বয়করা আমাদের কাজে সহযোগিতা করেছেন। বই ছাপার কাজ তারা তদারকি করেছেন। উপদেষ্টা মাহফুজ আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, পাঠ্যবইয়ে জুলাই বিপ্লবের বিষয় রাখা হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন।

গতকালের প্রেস ব্রিফিংয়ে বিভিন্ন ছাপাখানার মালিক ও আমদানিকারকদের প্রতিনিধিরাও কাগজ কেনার কার্যক্রম স্পষ্ট করেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এনসিটিবি সচিব শাহ্ মুহাম্মদ ফিরোজ আল ফেরদৌস, পাঠ্যপুস্তক সদ্যস প্রফেসর ড. রিয়াদ চৌধুরী, শিক্ষাক্রম সদস্য প্রফেসর রবিউল কবীর চৌধুরী, প্রধান সম্পাদক মুহাম্মদ ফাতিহুল কাদীর ও ছাপাখানার প্রতিনিধিরা, কাগজ আমদানিকারকেরা।

প্রসঙ্গত, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্ট ও ডেইলি ক্যাম্পাস সম্প্রতি প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, চলতি বছর পাঠ্যবই ছাপায় কাগজের বাজারদরের চেয়ে টনপ্রতি ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা বেশি দিতে হয়েছে মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানগুলোকে। নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে কাগজ না কিনলে বই ছাপার ছাড়পত্র মিলত না। কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে কাগজ কিনতে হবে তা নির্ধারণ করে দিত এনসিটিবি। যা এর আগে কখনও হয়নি। অভিযোগ আছে, এর নেপথ্যে ছিলেন এনসিটিবির সচিব, একজন সদস্য ও সাজ্জাদুর রহমান ওরফে রাখাল রাহা। তাদের পেছনে থেকে কাজ করেছেন তানভীর নামের এক ছাত্র-সমন্বয়ক। সর্বশেষ চীন থেকে সাড়ে আট হাজার টন কাগজ আমদানি করে এনসিটিবি। বাজারে এক লাখ ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকায় কাগজ পাওয়া গেলেও মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানগুলোকে জিম্মি করে টনপ্রতি দাম নেওয়া হয়েছে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা করে।

ওই প্রতিবেদনকে ভুয়া বলে উল্লেখ্য করে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, ঢাকা পোস্ট, ডেইলি ক্যাম্পাস উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এমন নিউজ করেছে। কারণ আমরা কাগজই কিনেছি ১০০ কোটি টাকার। এখানে কেমন করে ৪০০ কোটি টাকার কমিশন বাণিজ্য হবে।

গতকালের সংবাদ সম্মেলনে এনসিটিবি চেয়ারম্যান আরো জানান, চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত বই পেয়েছেন কিছু উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। তাদের শাস্তি পেতে হবে। ইতোমধ্যে, সেই আদেশ পাঠানো হয়েছে। শাস্তির ঘোষণার পর পরই দেখা গেছে, অনেক শিক্ষা কর্মকর্তা অতিরিক্ত বই ফেরত দেওয়া শুরু করেছেন। সেই বই আমরা অন্য উপজেলায় পাঠাচ্ছি।

এ সময় ১৬ মার্চের মধ্যে বিনামূল্যের সব পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যাবে বলেও জানান এনসিটিবি চেয়ারম্যান।

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল   SUBSCRIBE  করতে ক্লিক করুন।

#বই