যুদ্ধ হলে চীন পাকিস্তানকে কতটা সাহায্য করবে? | বিবিধ নিউজ

যুদ্ধ হলে চীন পাকিস্তানকে কতটা সাহায্য করবে?

ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হলে চীনের ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে বিশ্লেষক মহলে। পাকিস্তান আর চীনের মধ্যে যে সুসম্পর্ক আর চীনের প্রতি যে নির্ভরতা, সে কারণে কী ভারত চীন-পাকিস্তান দ্বিমুখি হামলার ভয়ে কোনো কড়া পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকবে? প্রায় ১৫০ কোটির মানুষের ভারতের বিশাল বাণিজ্যের বাজার ছেড়ে মাত্র ২৫ কোটি জনসংখ্যার পাকিস্তানের পাশে থেকে চীন এই বিতর্কে কতটা নিজেকে জড়াবে? উঠছে এসব প্রশ্নও।

#পাকিস্তান #ভারত #চীন #বাংলাদেশ

ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হলে চীনের ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে বিশ্লেষক মহলে। পাকিস্তান আর চীনের মধ্যে যে সুসম্পর্ক আর চীনের প্রতি যে নির্ভরতা, সে কারণে কী ভারত চীন-পাকিস্তান দ্বিমুখি হামলার ভয়ে কোনো কড়া পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকবে?

প্রায় ১৫০ কোটির মানুষের ভারতের বিশাল বাণিজ্যের বাজার ছেড়ে মাত্র ২৫ কোটি জনসংখ্যার পাকিস্তানের পাশে থেকে চীন এই বিতর্কে কতটা নিজেকে জড়াবে? উঠছে এসব প্রশ্নও।

ভারত পাকিস্তানের মধ্যে যদি কোনো বড় আকারের যুদ্ধ শুরু হয়, তবে চীনের কাছ থেকে পাকিস্তান কী ধরনের সাহায্য আশা করতে পারে, তা একটি জটিল প্রশ্ন।

এর উত্তর নির্ভর করে যুদ্ধের প্রেক্ষাপট, চীনের নিজস্ব কৌশলগত স্বার্থ এবং আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর। তবে ঐতিহাসিকভাবে চীন পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছে।

তবে, চীনের নীতি হলো কোনো সরাসরি সামরিক জোটে আবদ্ধ না হওয়া। তাই তারা সম্ভবত সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে। তাদের প্রধান লক্ষ্য থাকবে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং তাদের নিজস্ব স্বার্থ রক্ষা করা।

বিশ্লেষকদের মতে, চীন পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের "অল-ওয়েদার ফ্রেন্ডশিপ" বিদ্যমান থাকলেও, এর অর্থ এই নয় যে চীন কোনো পরিস্থিতিতেই সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ করবে। চীনের প্রধান মনোযোগ তাদের অর্থনৈতিক কৌশলগত স্বার্থের দিকে।

কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, চীন পাকিস্তানকে কূটনৈতিক, সামরিক সরঞ্জাম এবং অর্থনৈতিকভাবে সমর্থন করবে, তবে সরাসরি যুদ্ধে জড়ানো থেকে বিরত থাকবে। তারা মনে করেন, চীনের প্রধান উদ্দেশ্য থাকবে আঞ্চলিক ভারসাম্য বজায় রাখা এবং ভারতের ওপর পরোক্ষ চাপ সৃষ্টি করা।

আবার কিছু বিশ্লেষকের মতে, যদি ভারতের পদক্ষেপ চীনের আঞ্চলিক স্বার্থের জন্য বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করে, তবে চীন সীমিত আকারে সামরিক হস্তক্ষেপ করতেও পারে। তবে এই সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম।

অনেক বিশ্লেষকই মনে করেন, চীন চাইবে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমিত হোক। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হোক। কারণ আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

সাম্প্রতিক পাহালগাম হামলার পর চীনের প্রতিক্রিয়াও বেশ সতর্ক ছিল। তারা পাকিস্তানের প্রতি কূটনৈতিক সমর্থন জানিয়েছে এবং উভয় পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং স্পষ্ট করে বলেছেন যে সংঘাত কোনো পক্ষেরই স্বার্থের অনুকূল নয়।

চীনের কাছ থেকে পাকিস্তানের প্রত্যাশা কি?

পাকিস্তান তাদের পুরোনা সম্পর্কের উপর ভিত্তি করেই কিছু সহায়তা আশা করতেই পারে। এর মধ্যে প্রথম বিষয় হতে পারে কূটনৈতিক সমর্থন।

আন্তর্জাতিক স্তরে, বিশেষ করে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য ফোরামে চীন পাকিস্তানের পক্ষে জোরালো কূটনৈতিক সমর্থন দিতে পারে।

তারা ভারতের পদক্ষেপের সমালোচনা করতে পারে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের ওপর জোরও দিতে পারে।

এছাড়া সামরিক সরঞ্জাম প্রযুক্তিগত বিষয়ে পাকিস্তান চীনের দিকেই তাকিয়ে থাকবে। কারণ  চীন পাকিস্তানের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। যুদ্ধের পরিস্থিতিতে পাকিস্তান চীনের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম, গোলাবারুদ এবং প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সরবরাহের আশা করতে পারে।

এর মধ্যে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, নৌজাহাজ, সাবমেরিন এবং ক্ষেপণাস্ত্রও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। সম্প্রতি চীন পাকিস্তানকে দ্বিতীয় হ্যাংগর-ক্লাস সাবমেরিন হস্তান্তর করেছে। যা তাদের সামরিক সহযোগিতার অঙ্গিকারকে আরও দৃঢ় করে।

এছাড়াও ভারতে তুলনায় বহুগুন পিছয়ে থাকা পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক সহায়তাও দিতে হবে চীনকে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

চীন তখন পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক ঋণ, অনুদান বা বাণিজ্য সহায়তার মাধ্যমে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

পাকিস্তান গোয়েন্দা বিভাগে বেশ এগিয়ে থাকলেও যুদ্ধকালীন গোয়েন্দা তথ্য লজিস্টিকস সাপোর্ট চীন থেকে প্রত্যাশা থাকবে দেশটির।  

চীন পাকিস্তানকে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করতে পারে। যা যুদ্ধক্ষেত্রে পাকিস্তানের জন্য সহায়ক হতে পারে। এছাড়া, লজিস্টিকস এবং পরিবহন ক্ষেত্রেও চীন সাহায্য করতে পারে।

যুদ্ধের কৌশল হিসেবে সীমান্তে চাপ সৃষ্টি করেও পাকিস্তানকে সাহায্য করতে পারে চীন। ভারত যদি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করে, তবে চীন সম্ভবত তাদের পশ্চিমা সীমান্তে (ভারত-চীন সীমান্ত) সামরিক চাপ বৃদ্ধি করতে পারে।

এর ফলে ভারতকে তাদের মনোযোগ এবং সম্পদ মানে সামরিক শক্তি উভয় দিকেই বিভক্ত করতে হতে পারে।

পাকিস্তানের কাছে কি কি চীনা অস্ত্র আছে?

চীন দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের প্রধান সামরিক সরবরাহকারী। পাকিস্তান চীনের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের অত্যাধুনিক অস্ত্র সামরিক সরঞ্জাম পেয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

যুদ্ধবিমান: জেএফ-১৭ থান্ডার,এফ-১৬ (কিছু ক্ষেত্রে চীনা যন্ত্রাংশ ব্যবহৃত), জে-১০সি।

নৌবাহিনী: টাইপ ০৫৪এ/পি ফ্রিগেট, হ্যাংগর-ক্লাস সাবমেরিন।

স্থল বাহিনী: আল-খালিদ ট্যাংক, বিভিন্ন ধরনের কামান ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা।

ড্রোন: বিভিন্ন ধরনের নজরদারি যুদ্ধ ড্রোন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন পাকিস্তানের অস্ত্রের প্রধান উৎস হিসেবে আরও শক্তিশালী হয়েছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিপ্রি)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে পাকিস্তানের মোট অস্ত্র আমদানির ৮১ শতাংশই ছিল চীন থেকে।

যুদ্ধ ইস্যুতে চীন কী করতে পারে?

ভারত পাকিস্তানের মধ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতিতে চীনের ভূমিকা বেশ সতর্ক এবং কৌশলগত হতে পারে। সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা কম থাকলেও, চীন পাকিস্তানকে যে সাহায্য করতে পারে।

কূটনৈতিকভাবে মধ্যস্থতার চেষ্টা: চীন উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে এবং আলোচনার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছাতে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিতে পারে।

আন্তর্জাতিক সমর্থন জোগাড়: চীন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে পাকিস্তানের পক্ষে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করতে পারে এবং ভারতের পদক্ষেপের সমালোচনা করতে পারে।

সীমান্তে সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি: ভারত যদি পাকিস্তানের ওপর সামরিক চাপ বাড়ায়, তবে চীন তাদের সীমান্ত এলাকায় সামরিক মহড়া বা সৈন্য সমাবেশ করে ভারতকে একটি বার্তা দিতে পারে।

আর্থিক সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখা: যুদ্ধের কারণে পাকিস্তানের অর্থনীতি সামরিক সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে চীন তাদের প্রয়োজনীয় আর্থিক সামরিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখতে পারে। 

#পাকিস্তান #ভারত #চীন #বাংলাদেশ