উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষা আজ বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে। এবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ পরীক্ষার্থী। তবে সারা দেশে করোনাভাইরাস ও ডেঙ্গু রোগের সংক্রমণ হারের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় পরীক্ষাকেন্দ্রে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।
স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার পাশাপাশি প্রশ্নফাঁস রোধে এক ডজনের বেশি নতুন পদক্ষেপ, কেন্দ্রে নকল ঠেকাতে ব্যাপক রদবদল এবং ভেন্যু কেন্দ্র বাতিল করা হয়েছে। ফলে পরীক্ষা সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন করতে পারবেন-এমনটা আশা করছেন শিক্ষা বোর্ড সংশ্লিষ্টরা।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড জানিয়েছে, আজ ২৬ জুন থেকে তত্ত্বীয় পরীক্ষা শুরু হয়ে ১০ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ১১ থেকে ২১ আগষ্ট পর্যন্ত। এই পরীক্ষা ঘিরে নানা ধরনের সংকট ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তৈরি হলেও বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
এবারের পরীক্ষা অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশ চ্যালেঞ্জিং জানিয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, করোনাভাইরাস ও ডেঙ্গুর প্রকোপের মধ্যে পরীক্ষাটি নিতে হচ্ছে। এজন্য করোনাকেন্দ্রিক কিছু নির্দেশনা রয়েছে, যেগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, তা তদারকি করার জন্য বোর্ডের একাধিক টিম কাজ করবে।
বোর্ড কর্মকর্তারা জানান, পরীক্ষায় নকল ও প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট থানার ট্যাগ অফিসার ও পুলিশের উপস্থিতিতে প্রশ্নপত্র সঠিক সেট ও সংখ্যায় যাচাই করতে বলা হয়েছে। অব্যবহৃত প্রশ্নপত্রের সেট কোনো অবস্থাতেই খোলা যাবে না এবং অক্ষত অবস্থায় বোর্ডে ফেরত পাঠাতে হবে। পরীক্ষা শেষে উত্তরপত্র অবশ্যই সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে পুলিশি প্রহরায় জমা দিতে হবে।
করোনা-ডেঙ্গু নিয়ে একগুচ্ছ নির্দেশনা
পরীক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার করা, প্রতিটি কেন্দ্রে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখা, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে মেডিক্যাল টিম সক্রিয় রাখার পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও কেন্দ্রের সামনে যেন জটলা না থাকে, তা নিয়ন্ত্রণ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে কেন্দ্রের অভ্যন্তর এবং আশপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং পরীক্ষা শুরুর আগে মশক নিধন ওষুধ স্প্রে করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
শিক্ষা বোর্ডের ৩৩ নির্দেশনা
পরীক্ষা সুষ্ঠু, সুন্দর ও নকলমুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠানের জন্য কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রতি ৩৩ ধরনের নির্দেশনা দিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। এর মধ্যে রয়েছে পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে তিন দিন আগে ট্রেজারিতে ট্রাঙ্কে রক্ষিত প্রশ্নপত্রের প্যাকেট সঠিকভাবে সংরক্ষণ, ট্রেজারি অফিসার, কেন্দ্র সচিব এবং পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সদস্যদের অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে। কোনো অবস্থাতেই উপজেলা সদরের বাইরে প্রশ্নপত্রের ট্রাঙ্ক না রাখাসহ আরও বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নকল ঠেকাতে একগুচ্ছ জরুরি নির্দেশনা
পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে সব পরীক্ষার্থীকে অবশ্যই পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করে আসন নিতে হবে। অনিবার্য কারণে কোন পরীক্ষার্থী নির্ধারিত সময়ের পর পরীক্ষা কেন্দ্রে এলে রেজিস্ট্রারে নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময় ও দেরিতে আসার কারণ উল্লেখ করে দেরিতে আসা পরীক্ষার্থীদের তালিকা ঐদিনই সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডে দিতে হবে।কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া পরীক্ষা কেন্দ্রে অন্য কেউ মোবাইল ফোন ও মোবাইল ফোনের সুবিধাসহ ঘড়ি, কলম বা অননুমোদিত ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবে না। কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছবি তোলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাবিহীন একটি সাধারণ (ফিচার) ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। অননুমোদিত ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। ট্রেজারি, থানা, নিরাপত্তা হেফাজত থেকে প্রশ্নপত্র নিয়ে ও পরিবহন কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা, শিক্ষক, কর্মচারীদের কোন ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না এবং প্রশ্নপত্র বহন কাজে কালো কাঁচযুক্ত মাইক্রোবাস বা এরূপ কোন যানবাহন ব্যবহার করা যাবে না।
এক বা একাধিক কেন্দ্রের জন্য একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার) নিয়োগ দিতে হবে। ট্রেজারি, থানা, নিরাপত্তা হেফাজত হতে কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা তার মনোনীত উপযুক্ত প্রতিনিধি ট্যাগ অফিসারসহ প্রশ্নপত্র নিয়ে পুলিশ প্রহরায় কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা কর্মকর্তার (ট্যাগ অফিসার) উপস্থিতি ছাড়া প্রশ্ন বের করা যাবে না বা বহন করা যাবে না।ট্রেজারি, থানা, নিরাপত্তা হেফাজত হতে পরীক্ষার কেন্দ্রে বহুমুখী নির্বাচনী প্রশ্নসহ রচনামূলক সৃজনশীলের সকল সেট প্রশ্ন নিতে হবে। প্রশ্নের সেট কোড পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট পূর্বে জানানো হবে। সে অনুযায়ী নির্ধারিত সেট কোডে পরীক্ষা নিতে হবে। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার), কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতি ও স্বাক্ষরে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খুলতে হবে।
পরীক্ষা চলাকালীন এবং পরীক্ষা অনুষ্ঠানের আগে বা পরে পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা ছাড়া অন্যদের প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে। এ সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশকারী অননুমোদিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
অনিবার্য কারণবশত কোন পরীক্ষা বিলম্বে শুরু করতে হলে যত মিনিট বিলম্বে পরীক্ষা শুরু হবে পরীক্ষার্থীদেরকে প্রশ্নপত্রে উল্লিখিত নির্ধারিত সময় থেকে তত মিনিট অতিরিক্ত সময় দিতে হবে।
পরীক্ষা কেন্দ্রে ও প্রশ্ন পরিবহনে দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালন করবেন এবং প্রশ্নপত্র সর্টিং শেষে সংশ্লিষ্ট সবাই স্বাক্ষর করেছেন মর্মে একটি প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট বোর্ডে পাঠাতে হবে।
ডিএমপির নির্দেশনা
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে। পরীক্ষার দিন পরীক্ষার্থীদের হাতে ‘যথেষ্ট সময়’ নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়াসহ একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ।
ডিএমপি বলছে, যেসব পরীক্ষার্থী ব্যক্তিগত যানবাহনে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসবেন, তারা পরীক্ষা কেন্দ্রের সম্মুখে নামার পরিবর্তে কম ব্যস্ত নিকটবর্তী স্থানে নেমে পরীক্ষা কেন্দ্রে হেঁটে আসবেন। পরীক্ষা শেষে ফেরার সময়ও কেন্দ্র থেকে হেঁটে গিয়ে নিকটবর্তী কম ব্যস্ত কোনও স্থান থেকে গাড়িতে উঠবেন। কোনও যানবাহন পরীক্ষা কেন্দ্রের নিকটবর্তী সড়কে পার্কিং করে রাখা যাবে না। পার্কিং করলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও হুঁশিয়ার করা হয়েছে।
অভিভাবকদের পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশের সড়কে অবস্থান না করার অনুরোধ জানিয়ে ডিএমপি বলেছে, অভিভাবকদের সড়কে অবস্থান করে যান চলাচল বিঘ্ন করা সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী অর্থদণ্ডযোগ্য অপরাধ।
পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রে আসা যাওয়ার সুবিধার্থে পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে এবং পরীক্ষা শেষের এক ঘণ্টা পর পরীক্ষার্থী ছাড়া অন্য সব যাত্রীদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া পরীক্ষা কেন্দ্র সংলগ্ন সড়কগুলো যথাসম্ভব পরিহার করারও অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপি।
এবার ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় বসতে যাচ্ছে ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ৬ লাখ ১৮ হাজার ১৫ ছাত্র এবং ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬ ছাত্রী। সারাদেশে ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হবে।
প্রথম দিনে সাধারণ ৯ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১ হাজার ৬০৫ কেন্দ্রে বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা হবে। মাদরাসা বোর্ডের অধীন ৪৫৯টি কেন্দ্রে আলিমের কোরআন মাজিদ এবং কারিগরি বোর্ডের অধীন ৭৩৩টি কেন্দ্রে এইচএসসি (বিএম/বিএমটি) পরীক্ষা নেওয়া হবে। সব বোর্ডের প্রথম দিনের পরীক্ষা সকাল ১০টায় শুরু এবং শেষ হবে দুপুর ১টায়।
ঢাকা বোর্ডে পরীক্ষার্থী ২ লাখ ৯১ হাজার ২৪১, রাজশাহীতে ১ লাখ ৩৩ হাজার ২৪২, কুমিল্লায় ১ লাখ ১ হাজার ৭৫০, যশোরে ১ লাখ ১৬ হাজার ৩১৭ ও চট্টগ্রামে ১ লাখ ৩৫ জন। এ ছাড়া বরিশালে পরীক্ষার্থী ৬১ হাজার ২৫, সিলেটে ৬৯ হাজার ৬৮৩, দিনাজপুরে ১ লাখ ৩ হাজার ৮৩২ এবং ময়মনসিংহে ৭৮ হাজার ২৭৩ জন। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষার্থী ৮৬ হাজার ১০২ জন। কারিগরি বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৯ হাজার ৬১১ জন।