আরাকান আর্মি নিয়ে ’কে কী বলল, যায় আসে না’ | বিবিধ নিউজ

আরাকান আর্মি নিয়ে ’কে কী বলল, যায় আসে না’

‘একটি জিনিস বিবেচনায় রাখতে হবে। বাংলাদেশের সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ। এ সীমান্ত বাংলাদেশকে ম্যানেজ করতে হবে। রক্ষা করতে হবে। শান্তিপূর্ণ রাখতে হবে। ফলে ওপারে যে–ই থাক, তার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখব।’

বাংলাদেশ তার সীমান্ত সুরক্ষা এবং রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে নিজস্ব সার্বভৌম নীতিতে অবিচল রয়েছে।জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি-সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এই  মন্তব্য করেছেন।

তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘আমরা একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। সীমান্ত সুরক্ষার স্বার্থে সীমান্তের ওপারে যে থাকবে, তার সঙ্গেই যোগাযোগ রাখবে বাংলাদেশ। কে কী বলল, যায় আসে না।

তার এই মন্তব্য মিয়ানমারের সামরিক জান্তার সাম্প্রতিক কূটনৈতিক পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে এসেছে, যেখানে তারা রাখাইন রাজ্যের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি বড় অংশ এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। সীমান্ত এলাকার স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং সম্ভাব্য সংঘাত এড়াতে বাংলাদেশ ওই গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বলে দাবি সরকারের।

আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশের এই যোগাযোগ নিয়ে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের উদ্বেগের বিষয়ে জানতে চাইলে খলিলুর রহমান দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন, ‘বাংলাদেশ সার্বভৌম রাষ্ট্র। নিজ স্বার্থে যার সঙ্গে ইচ্ছা, তার সঙ্গে কথা বলব। কে কী বলল, যায় আসে না।’

তিনি বলেন,‘আমরা একটা স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করেছি এবং সেটি বাস্তবায়ন করছি। মিয়ানমার আরাকান আর্মিকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তারাও (মিয়ানমার) তো তাদের (আরাকান আর্মি) সঙ্গে যোগাযোগ করছে।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘একটি জিনিস বিবেচনায় রাখতে হবে। বাংলাদেশের সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ।

সীমান্ত বাংলাদেশকে ম্যানেজ করতে হবে। রক্ষা করতে হবে। শান্তিপূর্ণ রাখতে হবে। ফলে ওপারে যে থাক, তার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখব।’

তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার আর্মি যদি সেখানে সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে, তাহলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করব। আগে তো তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল।

রাখাইন থেকে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিষয়ে খলিলুর রহমান কঠোর বার্তা দেন।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ চেষ্টা করছে, যাতে নতুন করে রোহিঙ্গা না আসে। কথাটি খুব জোরের সঙ্গে আরাকান আর্মিকে জানিয়েছি।

জাতিসংঘের মাধ্যমে আরাকান আর্মিকে জানিয়েছি যে আরাকানে যে নতুন প্রশাসন তৈরি হচ্ছে, তার সব স্তরে রোহিঙ্গাদের দেখতে চায় বাংলাদেশ।

যদি সেটি তারা (আরাকান আর্মি) না করে, তাহলে সেটি হবে জাতিগত নিধনের একটি নিদর্শন, যেটি কোনোভাবেই আমরা সমর্থন করতে পারি না।

পদক্ষেপটি যদি আরাকান আর্মি না নেয়, তাহলে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়া খুব মুশকিল হবে।

আরাকান আর্মিকে দেওয়া এই বার্তার কোনো জবাব বাংলাদেশ পেয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘না, আমরা প্রশ্ন করেছি।

জবাব এলে বিচারবিবেচনা করে দেখব কী ধরনের জবাব পাচ্ছি। এখানে কোনো রাখঢাক নেই, বিষয়টি সাদাকালো।

হয় তারা জাতিগত নিধনের পক্ষে, নয় বিপক্ষে। আমরা পৃথিবীর কোথাও ধরনের জাতিগত নিধন সমর্থন করি না। এটি আরাকান আর্মির জন্য একটি পরীক্ষা। আমরা অপেক্ষা করছি, পরীক্ষায় তারা উত্তীর্ণ হতে পারছে কি না।

মিয়ানমারের সামরিক সরকারের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের যোগাযোগ বোঝাপড়া নিয়ে জানতে চাইলে খলিলুর রহমান জানান, ‘তাদের সঙ্গে আমাদের বোঝাপড়া রয়েছে।

কিছুদিন আগে ভূমিকম্পে বাংলাদেশ থেকে সহযোগিতা গেছে, মিয়ানমারের অনুরোধের অপেক্ষা করা হয়নি। মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা, বাণিজ্যসহ সব দিকে যোগাযোগ রয়েছে।

কোনো সমস্যা সমাধান চাইলে সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ থাকতে হবে, না হলে সমস্যার সমাধান হবে না।

মিয়ানমারের সার্বভৌম অখণ্ডতার প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন এবং একইসাথে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগের মধ্যে কোনো স্ববিরোধিতা আছে কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘না, আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগটি বাস্তবিক প্রয়োজনীয়তা।

ওপারে সীমান্তে তারা (আরাকান আর্মি) আছে, তাদের সঙ্গে তো আমাদের কাজ করতে হবে।

মানবিক করিডর প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ‘সব পক্ষ রাজি কি না, আমরা দেখব।

রাজি হলেই যে আমরা মানবিক সাহায্য দেব, এমন কোনো কথা নেই। এখানে অন্যান্য বিষয়ও রয়েছে।

আরাকানে যে নতুন কর্তৃপক্ষ তৈরি হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব চায়। সেখানে যেসব রোহিঙ্গা রয়েছে, তাদের ওপর যাতে কোনো অত্যাচার না হয়, তাদের সঙ্গে যেন বৈষম্য করা না হয়।

তারা যাতে দলে দলে বাংলাদেশে না আসে বিষয়গুলো মানতে হবে। জাতিগত নিধন কোনো অবস্থাতেই বাংলাদেশ মানবে না।

লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার ঘর বরাদ্দ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে নিরাপত্তা উপদেষ্টা জানান, ‘সবচেয়ে বেশি এসেছে ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালে জুলাইআগস্ট পর্যন্ত। পুরোটাই এসেছে সেখানকার যুদ্ধাবস্থার কারণে।

এর আগেও যারা এসেছিল, তারা বন কেটে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব রেখেছিল। বনের গাছগুলো পুনরায় ফিরিয়ে আনতে আমাদের অনেক সময় লেগেছে, অনেক কষ্টও হয়েছে। ফলে পরিবেশগত বিষয় গবেষণা না করে বাংলাদেশ কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না।

খলিলুর রহমানের এই স্পষ্ট বক্তব্য থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এবং সীমান্ত সুরক্ষায় একটি ভারসাম্যপূর্ণ বাস্তবসম্মত নীতি অনুসরণ করছে।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখেও বাংলাদেশ তার জাতীয় স্বার্থ এবং সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রেখে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

আরাকান আর্মির প্রতিক্রিয়া এবং মিয়ানমারের সামরিক সরকারের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপের ওপরই এখন এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা অনেকাংশে নির্ভর করছে।