মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসকারী অভিবাসীদের স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফেরার জন্য আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ থেকে ৫ মে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এই উদ্যোগের আওতায়, স্বেচ্ছায় দেশত্যাগ করতে ইচ্ছুক অভিবাসীদের এক হাজার ডলার ভাতা এবং ভ্রমণের খরচ দেয়া হবে ট্রাম্প প্রশাসন থেকেই।
মার্কিন সরকার "সিভিপি" (CVP) নামক একটি অ্যাপের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করছে। এই অ্যাপটি অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করে এবং এর মাধ্যমে অভিবাসীরা তাদের স্বেচ্ছায় দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত সরকারকে জানাতে পারবেন।
ট্রাম্প প্রশাসন এই উদ্যোগের মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াটিকে সহজ করতে চাইছে। তবে, স্বেচ্ছায় দেশত্যাগের জন্য সরকার যে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে, তা জোরপূর্বক বহিষ্কারের তুলনায় অনেক কম।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, একজন অভিবাসীকে জোরপূর্বক যুক্তরাষ্ট্রে থেকে বহিষ্কার করতে সরকারের প্রায় ১৭ হাজার ডলার খরচ হয়।
চলতি বছর দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসকারী লাখ লাখ অভিবাসীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর অঙ্গীকার করেছিলেন। সেই অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই এই নতুন উদ্যোগটি গ্রহণ করা হয়েছে।
অনেকে এই উদ্যোগটিকে "মন্দের ভালো" হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, জোরপূর্বক বহিষ্কারের চেয়ে স্বেচ্ছায় দেশত্যাগ করা অভিবাসীদের জন্য তুলনামূলকভাবে কম বেদনাদায়ক।
এছাড়াও, এই উদ্যোগের মাধ্যমে অভিবাসীরা কিছুটা আর্থিক সহায়তাও পাচ্ছেন।
তবে, এই উদ্যোগের সমালোচনাও করছেন অনেকে। তাদের মতে, এক হাজার ডলার ভাতা এবং ভ্রমণের খরচ যথেষ্ট নয়।
বিশেষ করে, যারা বছরের পর বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, তাদের জন্য এই সামান্য আর্থিক সহায়তা তেমন কোনো কাজে আসবে না।
এছাড়াও, সমালোচকরা বলছেন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চাইছে।
তারা মনে করেন, এই উদ্যোগের ফলে অনেক অভিবাসী স্বেচ্ছায় দেশত্যাগ করতে বাধ্য হবেন। যা তাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন একটি সিদ্ধান্ত।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ জানিয়েছে, এই উদ্যোগের মাধ্যমে তারা অবৈধ অভিবাসীদের একটি সম্মানজনক এবং মানবিক উপায়ে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে চায়।
তারা আশা করছে, এই উদ্যোগের ফলে অনেক অভিবাসী স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেবেন।
তবে, এই উদ্যোগের সাফল্য নির্ভর করছে অভিবাসীদের প্রতিক্রিয়ার ওপর। কতজন অভিবাসী স্বেচ্ছায় দেশত্যাগের জন্য আবেদন করবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
এই উদ্যোগের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের সংখ্যা কতটুকু কমবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। অনেকে মনে করেন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে কিছু অভিবাসী হয়তো দেশত্যাগ করবেন।
কিন্তু অবৈধ অভিবাসনের মূল কারণগুলো দূর না হলে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।
মার্কিন সরকার জানিয়েছে, তারা অবৈধ অভিবাসন সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য অন্যান্য পদক্ষেপও গ্রহণ করছে। এর মধ্যে রয়েছে সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা এবং অভিবাসন আইন সংস্কার করা।
তবে, এই উদ্যোগগুলো কতটুকু কার্যকর হবে, তা নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে। অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের মতে, অবৈধ অভিবাসন একটি জটিল সমস্যা এবং এর সমাধানের জন্য একটি সমন্বিত এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন।