ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে বাংলাদেশের কী প্রতিক্রিয়া | বিবিধ নিউজ

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে বাংলাদেশের কী প্রতিক্রিয়া

ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতে এই অঞ্চলের অর্থনীতি ও বাণিজ্য খাতে নানা প্রভাব পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত-পাকিস্তানের চলমান অবস্থা আপাতত দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও তা পরোক্ষভাবে ভৌগোলিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করবে। ফলে সেই প্রেক্ষাপটে উদ্বেগের অবকাশ রয়েছে।

#ভারত #পাকিস্তান

ভারত-পাকিস্তান সংঘাত ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।

দুই দেশকে মূলত সংযত হয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানানো হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। বুধবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি এ আহ্বান জানানো হয়। খবর বিবিসি বাংল‘র।

অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, "বাংলাদেশ মনে করে কূটনৈতিক দিক থেকে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা উচিত।

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা নিরসন করে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল অবস্থানে ফিরে আসবে বলে বাংলাদেশআশা করে। "

ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতে এই অঞ্চলের অর্থনীতি ও বাণিজ্য খাতে নানা প্রভাব পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত-পাকিস্তানের চলমান অবস্থা আপাতত দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও তা পরোক্ষভাবে ভৌগোলিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করবে। ফলে সেই প্রেক্ষাপটে উদ্বেগের অবকাশ রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক নিলয় রঞ্জন বিশ্বাস বিবিসি বাংলাকে বলেন, " এই কনফ্লিক্টটা এই অঞ্চলের সকল দেশকেই খুব স্বাভাবিকভাবে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন করে।"

"কারণ এটাএখন দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধআছে। কিন্তু ভৌগোলিক এক ধরনের স্থিতিশীলতা ব্যাহত হলে বাকি দেশগুলোর ক্ষেত্রে পরোক্ষ বহু ধরনের প্রভাবের সম্ভাবনা থাকে" বলেন মি. বিশ্বাস।

বাংলাদেশের সরকারের উদ্বেগ

ভারত শাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে গত ২২শে এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। শুরু থেকেই ভারত এ হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে।

পরে গত ২৪ শে এপ্রিল প্রথমে ভারত এবং পরে পাকিস্তান একে অপরের বিরুদ্ধে আকাশসীমা বন্ধ করাসহ পাল্টাপাল্টি এক গুচ্ছ কড়া পদক্ষেপ নেয়।

সে পরিস্থিতিতে গত ২৭শে এপ্রিল বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, ভারত - পাকিস্তানের চলমান পরিস্থিতি বাংলাদেশের ওপর প্রভাব ফেলবে না।

ভারত-পাকিস্তানের চলমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অবস্থান খুব স্পষ্ট বলেও উল্লেখ করেছিলেন তিনি। যে কোন উপায়ে দুই দেশের উত্তেজনা যাতে প্রশমিত হয়, সেটি বাংলাদেশের কামনা বলে জানিয়েছিলেন মি. হোসেন।

কিন্তু এখন দুই দেশ সংঘাতে জড়িয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে বুধবার অন্তর্বর্তী সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভারত ও পাকিস্তানের চলমান পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ।

সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

"উভয় দেশকে বাংলাদেশ অনুরোধ করেছে যেন তারা শান্ত থাকে, ধৈর্য প্রদর্শন করে এবং পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে, এমন পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকে" বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

''বাংলাদেশ আশা করছে, আঞ্চলিক শান্তি, উন্নতি এবং স্থিতিশীলতার জন্য কূটনৈতিকভাবে এই উত্তেজনার অবসান হবে'' বলেআশা প্রকাশ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, "ভারত, পাকিস্তানের এই সংঘাতে বাংলাদেশে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। এরপরও বংলাদেশের পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে ভারতের আকাশপথে কোনো সমস্যা হয় কি না, সেটা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।"

সাবেক কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবির বন্ধুপ্রতীম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বক্তব্যকে সঠিক বলে মনে করছেন।

"সরকার যেটা বলেছে যে, তারা উদ্বিগ্ন ও দুই দেশ এ পথ থেকে সরে এসে শান্তিপূর্ণ সমাধানে এগোক, বাংলাদেশ সরকারের এই অবস্থান সঠিক বলে আমি মনে করি" বলেন মি. কবির।

যুদ্ধ কখনোই ভালো কিছু বয়ে আনে না উল্লেখ করে মি. কবির বলেন, " এতে জানমালের ক্ষতি হয়। কাজেই এক্ষেত্রে আমরা পক্ষ নেওয়ার চাইতে বিষয়টির প্রতি বেশী মনোযোগী থাকা উচিত।

যাতে জানমালের ক্ষতি হয়, এমন কোন কাজ যাতে না ঘটে -সেটাকে আহ্বান জানানোই প্রধান কাজ বলে মনে হয়।" বাংলাদেশের এখনকার কৌশল যথার্থই বলে মনে করেন সাবেক এই কূটনীতিক।

'সরাসরি না হলেও পরোক্ষ প্রভাব পড়বে'

পাঁচই অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। গণ অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে চলে যাওয়ায় দিল্লির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে টান পড়তে শুরু করে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক নিলয় রঞ্জন বিশ্বাস বলছেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কে নির্দিষ্ট মাত্রা রয়েছে। পাকিস্তানের সাথে এখন যে সম্পর্ক তৈরি হচ্ছিল-এ সংঘাত দীর্ঘায়িত হলে তা ব্যাহত হবে।

" ভারতের সাথে আমাদের একটা নির্দিষ্ট ডাইমেনশন রয়েছে। সেই ডাইমেনশনের মধ্যে এখন যে স্টেজ পার করছি, এটার মধ্যে কিছু টেনশন আছে- যে জায়গা রিজলভ(সমাধান) করার প্রয়োজন আছে" বলেন মি. বিশ্বাস।

তিনি বলেন, "ভারত পাকিস্তান সম্পর্ক একদমই ভিন্ন ডাইমেনশনে হয়। ফলে একটা প্রভাব যখন পড়ে যদি এরকম কনফ্লিক্ট দীর্ঘায়িত হয়, তখন অন্য ইস্যুগুলো অপেক্ষাকৃত কম প্রায়োরিটি লিস্টে থাকবে।

পাকিস্তানের মধ্যে বাংলাদেশের এক ধরনের সম্পর্ক দৃশ্যমান হচ্ছিল। সেটাও কিন্তু এক ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়বে।"

পহেলগাম হামলার পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ইসাক দারের বাংলাদেশ সফর স্থগিত করার কথা উল্লেখ করে সরাসরি না হলেও পরোক্ষ প্রভাব পড়বে বলে মন্তব্য করেন মি. বিশ্বাস।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এই শিক্ষক মনে করেন, ভারত - পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির জায়গা প্রতিবেশী দেশ হিসেবে অধিকারের জায়গা। ফলে অধিকারের জায়গা বাস্তবায়নই গুরুত্বপূর্ণ।

সার্ক পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগও এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলেন জানান তিনি।

তিনি বলেন, " আমাদের সরকার ভালো একটা স্ট্যান্ড পয়েন্ট নিয়েছিল, যে সার্ক রিভাইভ করা উচিত। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে তো সার্ক রিভাইভ করার প্রশ্ন চিন্তাই করতে পারবে না। এগুলোই হচ্ছে চ্যালেঞ্জ।"

সূত্র:বিবিসি বাংলা।

#ভারত #পাকিস্তান