বৃহস্পতিবার রাত দশটা থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির দক্ষিনাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের বিচার এবং দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা’র সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
রাত দেড়টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তারা তাদের কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন। এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও অংশ নিতে দেখা গেছে।
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী উল্লেখযোগ্য সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জুলাই ঐক্য, ছাত্র শিবির, আপ বাংলাদেশ, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা এবং ইনকিলাব মঞ্চ।
এছাড়াও, বিভিন্ন সময়ে অন্যান্য ছোট ছোট সংগঠনের নেতাকর্মীরাও এসে শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি জানাচ্ছেন, ফলে অবস্থান সমাবেশটি ক্রমশ বড় হচ্ছে।
এদিকে, এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বাসভবনের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, শিক্ষার্থীরা সড়কের উপর অবস্থান নিয়ে তাদের দাবি আদায়ের জন্য বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।
তাদের কণ্ঠে উচ্চারিত স্লোগানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, আওয়ামীলীগ নো মোর, ‘খুনি লীগের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে হবে, এবং ‘ক্ষমতা না জনতা, জনতা জনতা।
এসব স্লোগানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগের প্রতি তাদের তীব্র অনাস্থা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এবং দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের জোরালো দাবি জানাচ্ছেন।
কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী উল্লেখযোগ্য নেতাদের মধ্যে রয়েছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, আপ বাংলাদেশের আলী আহসান জুনায়েদ, রাফে সালমান রিফাত, মোহাম্মদ হিযবুল্লাহ, ছাত্র শিবিরের দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ এবং ইনকিলাব মঞ্চের শরীফ ওসমান হাদি। এছাড়াও কওমী মাদ্রাসার বহু শিক্ষার্থী এই কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন।
অন্যদিকে, এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক তাসনীম জারা, যুগ্ম আহবায়ক মনিরা শারমিন, নুসরাত তাবাসসুম, তাজনূভা জাবীন এবং সারোয়ার তুষারও কর্মসূচিতে উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালনকারী আব্দুল কাদের, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদস্যসচিব জাহিদ আহসান, জুলাই ঐক্যের এবি জুবায়ের এবং মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ প্রমুখ ছাত্রনেতারাও কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন এবং শিক্ষার্থীদের মনোবল যোগাচ্ছেন।
শিক্ষার্থীদের এই অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনের সড়কে পুলিশ ব্যারিকেড স্থাপন করেছে। এর ফলে ওই সড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যা সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা ভোগান্তির সৃষ্টি করেছে।
তবে, শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না।
কর্মসূচিতে এনসিপির যুব উইংয়ের প্রধান তারিকুল ইসলাম দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, "আমরা দীর্ঘ সময় এখানে অপেক্ষা করবো। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আগে আমরা যমুনার সামনে থেকে যাচ্ছি না।"
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি আরও কঠোর ভাষায় তাদের অবস্থান ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, "আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে ইন্টেরিমকে আর সময় দিতে রাজি নই। হয় আমরা লাশ হয়ে ফিরবো, না হয় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে বাধ্য করবো।"
এনসিপির যুগ্ম আহবায়ক সারোয়ার তুষার বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, "নয় মাস কেটে গেছে, কিন্তু দৃশ্যমান কোনো বিচার কার্যক্রম নেই। আমরা দেখেছি, বিচার না করে ছয় শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকে পালিয়ে যেতে দেওয়া হয়েছে।
এই কারণেই আমরা দাবি জানিয়েছি, অবিলম্বে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে এবং উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন করতে হবে।"
এই পরিস্থিতিতে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বৃহস্পতিবার রাতে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করেন। তিনি সেখানে উল্লেখ করেন যে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে এবং এর প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
তবে, নাহিদ ইসলাম তাৎক্ষণিকভাবে এর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ফেসবুকে পাল্টা পোস্ট করেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন যে শুধুমাত্র যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগকে নিষিদ্ধ করার এই "প্রহসন" মেনে নেওয়া হবে না।
তিনি আওয়ামী লীগকে একটি "সন্ত্রাসী ও ফ্যাসিস্ট সংগঠন" হিসেবে ঘোষণা করে দলটিকে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করার এবং আইসিটি আইনে দল হিসেবে তাদের বিচার করার বিধান যুক্ত করার দাবি জানান।