মেহেদী হাসান আপন। ছবি : সংগৃহীত
‘আমি ভালো হতে পারলাম না, তাই নিজেই এই দুনিয়া থেকে চলে যাচ্ছি’ এমন চিরকুটে লিখে চিরদিনের মতো পৃথিবীর মায়া ছেড়ে বিদায় নিয়েছে জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার মেহেদী হাসান আপন (১৬) নামে এসএসসি পরীক্ষার্থী এক কিশোর। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) রাত ৯ টার দিকে ঘটনাটি ঘটেছে।
শুক্রবার (১৬ মে) দুপুরের দিকে সরিষাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
নিহত আপন উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের বয়ড়া গ্রামের শিপন মিয়ার ছেলে এবং বয়ড়া ইসরাইল আহমেদ উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। তিনি নিজ ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
চিরকুটে আপন উল্লেখ করেছেন, ‘শুরুতেই বলি সালাম নিবেন। আমি আপনাদের অনেক কষ্ট দিয়েছি, ক্ষতি করেছি, খারাপ ব্যবহার করেছি।
আমি ছোট থেকেই খারাপ, নিজেকে কখনও ভালো করতে পারিনি। বাবার কথা রাখতে পারিনি, তার মনে অনেক কষ্ট দিয়েছি। বাবা, আপনার পা দুটি ধরে মাফ চাইতে পারলাম না। আমাকে মাফ করে দিয়েন।
মা তুমি আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছো, অনেক বুঝিয়েছো। তবুও ভালো হতে পারলাম না। দাদার সম্মানও আমার জন্য হারিয়ে গেছে। আমি সবার মনে কষ্ট দিয়েছি।
তিনি আরও লেখেন, বন্ধুদের বলি, তোদের সঙ্গে কত আড্ডা, কত আনন্দ করেছি। আমার কোনো কথায় কিছু মনে করিস না।
আমার জানাজায় আসিস, আমার কবরে মাটি দিবি। আমার কাছে যদি কেউ টাকা পেয়ে থাকে, তবে আমি আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমি ভালো হতে পারিনি, তাই নিজেই পৃথিবী থেকে চলে যাচ্ছি।
আপনারা ভালো থাকবেন। আপনাদের খারাপ সন্তান আর নেই। ইতি-আপনাদের খারাপ ছেলে, আপন।’
এদিকে আপনের আত্মহত্যার খবরে তার স্কুলের সহপাঠি, শিক্ষক ও প্রতিবেশীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
সবাই তাকে একজন প্রাণবন্ত, হাসিখুশি ছেলে হিসেবে জানতেন। তার হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত সবাইকে বিস্মিত ও ব্যথিত করেছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন রাতে আপন প্রতিদিনের মতো খাওয়া-দাওয়া শেষ করে কিছুক্ষণ দাদার ঘরে অবস্থান করে। পরে সে একা নিজ ঘরে চলে যায়।
ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। দীর্ঘক্ষণ কোনো সাড়া না পাওয়ায় তার মা ডাকাডাকি শুরু করেন। একপর্যায়ে ঘরের দরজা না খোলায় পরিবারের সদস্যরা দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে তাকে ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান।
পাশে পড়ে ছিল একটি দুই পৃষ্ঠার চিরকুট। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে এবং প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে।
চিরকুটে লেখা কথাগুলো যে কোনো সংবেদনশীল মানুষকে নাড়িয়ে দেয়। সেখানে নিজের প্রতি অপরাধবোধ, আত্মগ্লানি এবং বাবা-মা ও পরিবারের প্রতি গভীর ভালোবাসার পাশাপাশি চরম হতাশার বহিঃপ্রকাশ উঠে এসেছে।
নিহতের ছোট বোন আছিয়া কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ভাইয়া রাতে খেয়ে দাদার ঘরে গিয়েছিল। পরে সে নিজ ঘরে যায়। মা কাজ থেকে ফিরে এসে ডাকাডাকি করতে থাকেন, কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে ভাইয়াকে ঝুলন্ত অবস্থায় পান।’
এ বিষয়ে সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুল হাসান বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। চিরকুটে আত্মহত্যার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে।
পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ দাফনের জন্য দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।'
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।