ধানমন্ডি থানার ওসিকে পুরস্কৃত করেন ডিএমপি কমিশনার। ছবি-সংগৃহিত
ধানমন্ডিতে গত সোমবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে একদল যুবকের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ ও মব সৃষ্টির চেষ্টাকে পেশাদারিত্ব ও ধৈর্যের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করে প্রশংসিত হয়েছেন ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ক্যশৈন্যু মারমা।
এই অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপনের স্বীকৃতিস্বরূপ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী তাঁকে পুরস্কৃত করেছেন।
আজ বুধবার রাতে ডিএমপির সহকারী কমিশনার (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) জাহাঙ্গীর কবির এই পুরস্কার প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পরবর্তীতে, ঢাকা মহানগর পুলিশের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও এ সংক্রান্ত একটি পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়।
ফেসবুক পোস্টে ডিএমপি কমিশনার ধানমন্ডি থানার ওসির ভূয়সী প্রশংসা করে উল্লেখ করেন, উত্তেজিত জনতাকে (মব) নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে ক্যশৈন্যু মারমার কৌশল এবং ধৈর্য্য অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের জন্য অনুসরণযোগ্য।
পরিস্থিতি বিবেচনা করে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন ওসি, যা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।
ঘটনার সূত্রপাত গত সোমবার রাতে ধানমন্ডির ৪ নম্বর সড়কে। সেখানে একদল যুবক, যারা নিজেদেরকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হিসেবে পরিচয় দিচ্ছিলেন। একজন প্রকাশককে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যায়িত করে তার বাসায় প্রবেশের চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ধানমন্ডি থানা পুলিশ।
পুলিশের উপস্থিতিতে ওই যুবকেরা প্রকাশকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করে এবং তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানায়।
তবে, পুলিশ প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানতে পারে যে ওই প্রকাশকের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার মামলা বা আইনি অভিযোগ নেই।
এমতাবস্থায়, ওসি ক্যশৈন্যু মারমা আইনগত বাধ্যবাধকতার কারণে ওই প্রকাশককে গ্রেপ্তার করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
পুলিশের এই অবস্থানে ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনকারীরা ওসির সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন এবং পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করেন।
তবে, ওসি ক্যশৈন্যু মারমা অত্যন্ত ধৈর্যের পরিচয় দেন এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে গেলে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে নেওয়া হয়।
এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে, সাধারণ মানুষ এবং বিভিন্ন মহলে ওসি ক্যশৈন্যু মারমার দায়িত্ববোধ, পেশাদারিত্ব এবং ধৈর্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
অনেকেই এমন কঠিন পরিস্থিতিতে বিচক্ষণতার সাথে আইন মেনে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তার প্রতি সাধুবাদ জানান।
এদিকে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অভ্যন্তরেও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ ওঠে। পরবর্তীতে, সংগঠনটির মোহাম্মদপুর থানার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বিকে সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, সোমবারের রাতের ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতা ছিল এবং সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থী আচরণের কারণেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার কর্তৃক ওসি ক্যশৈন্যু মারমাকে পুরস্কৃত করার এই ঘটনা পুলিশের অন্যান্য সদস্যদেরকেও দায়িত্ব পালনে আরও উৎসাহিত করবে এবং জনবান্ধব পুলিশিংয়ের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এটি প্রমাণ করে যে, যেকোনো পরিস্থিতিতে আইন মেনে চলা এবং ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা একজন পুলিশ কর্মকর্তার প্রধান কর্তব্য এবং এর যথাযথ স্বীকৃতিও প্রদান করা হয়।