বিসিএসের সিলেবাস: ‘বাদ’ যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ-বঙ্গবন্ধু, আরও যেসব পরিবর্তন | বিসিএস নিউজ

বিসিএসের সিলেবাস: ‘বাদ’ যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ-বঙ্গবন্ধু, আরও যেসব পরিবর্তন

মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও মার্চের ভাষণকে কৌশলে এড়িয়ে গেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন বা পিএসসি। নতুন করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসকে যুক্ত করা হয়েছে। যদিও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বিষয়টিকে স্বাভাবিক বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

#বিসিএস #পিএসসি #৪৭তম বিসিএস

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) নিয়োগ পরীক্ষার সিলেবাসে পরিবর্তন এনেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। বুধবার (২১ মে) ৪৮তম বিশেষ বিসিএসের সিলেবাস প্রকাশ করে সাংবিধানিক সংস্থাটি।

স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্যাডারের জন্য প্রকাশিত সিলেবাস বিশ্লেষণে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও মার্চের ভাষণকে কৌশলে এড়িয়ে গেছে পিএসসি। নতুন করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসকে যুক্ত করা হয়েছে। যদিও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বিষয়টিকে স্বাভাবিক বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশেষ বিসিএসের সিলেবাস বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে মূলত পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ অংশে জুলাই গণঅভ্যুত্থান এবং সংস্কার প্রস্তাব স্থান পেয়েছে। অন্যদিকে সিলেবাসের এ অংশ থেকে আগের সিলেবাসে থাকা মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, ৭ মার্চের ভাষণ ও স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। পিএসসির এই কৌশলকে সিলেবাস থেকে মুক্তিযুদ্ধকে ‘বাদ’ দেওয়া হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

এসব পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে পিএসসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেমকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভি করেননি। তবে সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘বিতর্ক এড়িয়ে যেতেই মূলত এ কৌশল নেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ৭ মার্চের ভাষণ এ বিষয়গুলো থাকবে। তবে স্বাধীনতার ঘোষকসহ সমালোচনা হতে পারে এমন বিষয়গুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। ৪৮তম বিসিএসের সিলেবাসের প্রতিফলন সাধারণ বিসিএসেও থাকবে বলে জানান তিনি।’

৪৭তম বিসিএস এবং ৪৮তম বিসিএসের সিলেবাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৪৭ বিসিএসের সিলেবাসের বাংলাদেশ বিষয়াবলি অংশের ১ নম্বর পয়েন্টের নাম ছিল ‘বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়াবলি’। সেখানে বিস্তারিত ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘প্রাচীনকাল হতে সম-সাময়িক কালের ইতিহাস, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস: ভাষা আন্দোলন; ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচন; ছয়-দফা আন্দোলন, ১৯৬৬; গণ অভুত্থান ১৯৬৮-৬৯; ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের সাধারণ নির্বাচন; অসহযোগ আন্দোলন ১৯৭১; ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ; স্বাধীনতা ঘোষণা; মুজিবনগর সরকারের গঠন ও কার্যাবলি; মুক্তিযুদ্ধের রণকৌশল; মুক্তিযুদ্ধে বৃহৎ শক্তিবর্গের ভূমিকা; পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণ এবং বাংলাদেশের অভ্যুদয়।’

আর সদ্য প্রকাশিত ৪৮তম বিশেষ বিসিএসের সিলেবাসে আগের সিলেবাসে থাকা বিষয়গুলো কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়াবলি অংশে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাস: আধুনিক যুগ (১৭৫৭ থেকে অদ্যাবধি)।

বাংলাদেশ বিষয়াবলির পরবর্তী পাঁচটি পয়েন্ট আগের বিসিএসের সিলেবাসের মতো এক থাকলেও ৭ নম্বর পয়েন্ট পরিবর্তন করা হয়েছে। আগের সিলেবাসে এই পয়েন্টে ‘রাজনৈতিক দলসমূহের গঠন, ভূমিকা ও কার্যক্রম, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের পারস্পরিক সম্পর্কাদি, সুশীল সমাজ ও চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীসমূহ এবং এদের ভূমিকা’ সম্পর্কিত বিষয়গুলো ছিল।

৪৮তম বিশেষ বিসিএসের এই অংশে ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ পরবর্তী এবং সংস্কার প্রস্তাবনা’ যোগ করা হয়েছে।

এদিকে বিশেষ বিসিএসের সিলেবাস থেকে মুক্তিযুদ্ধ শব্দ বাদ দেওয়া ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, সিলেবাসে যেভাবে শব্দ চয়ন করা হয়েছে সেটি দুঃখজনক।

মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করা মানে বাংলাদেশকে অস্বীকার করা। পিএসসি যেভাবেই ব্যাখ্যা করুক না কেন মুক্তিযুদ্ধ শব্দ তাদের রাখা দরকার ছিল। এর মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদকে অপমানিত করা হয়েছে।

#বিসিএস #পিএসসি #৪৭তম বিসিএস