ব্রিটিশ কাউন্সিলের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ | শিক্ষা নিউজ

ব্রিটিশ কাউন্সিলের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ

ব্রিটিশ গোয়েন্দারা রাশিয়ার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে ব্রিটিশ কাউন্সিলকে 'আচ্ছাদন' হিসেবে ব্যবহার করছে। এই অভিযোগ ব্রিটিশ কাউন্সিলের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির একটি গুরুতর অভিযোগের ইঙ্গিত দেয়। যা এর কার্যক্রমে চরম অবিশ্বাস এবং সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার রুশ ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস-এফএসবি 'অক্সফোর্ড রাশিয়া ফান্ড' নামের একটি ব্রিটিশ-সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানকে 'ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের' অভিযোগে রাশিয়ায় 'অনাকাঙ্ক্ষিত সংস্থা' হিসেবে ঘোষণা করেছে।

একই সাথে ব্রিটিশ কাউন্সিলকেও রাশিয়ায় 'অনাকাঙ্ক্ষিত সংগঠন' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

 যা কার্যত রাশিয়ায় এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করার সামিল। মেহের নিউজ এজেন্সির উদ্ধৃতি দিয়ে পার্সটুডের এই সংবাদটি রাশিয়া ব্রিটেনের মধ্যে চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মস্কো ব্রিটেনকে 'বিশ্বব্যাপী সংকটের হোতা' এবং 'যুদ্ধের উসকানিদাতা' হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

ব্রিটিশ কাউন্সিলের উপর নিষেধাজ্ঞা অভিযোগ:

ব্রিটিশ কাউন্সিল, যা বিশ্বব্যাপী সাংস্কৃতিক সম্পর্ক এবং শিক্ষামূলক সুযোগ বৃদ্ধির জন্য পরিচিত। এখন রাশিয়ায় তার কার্যক্রমের জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিল তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। রাশিয়ার প্রসিকিউটর জেনারেলের অভিযোগ অনুযায়ী, ব্রিটিশ কাউন্সিল ইংরেজি শেখানোর আড়ালে ব্রিটিশ স্বার্থ প্রচার করছে।

এছাড়াও 'এলজিবিটি আন্দোলন' সমর্থন করছে। যা রাশিয়ান আইন অনুযায়ী 'বেআইনি' রাশিয়ায় ২০১৬ সাল থেকে একটি আইন কার্যকর আছে, যা তথাকথিত 'সমকামী প্রচারণা' নিষিদ্ধ করে। বিশেষ করে অপ্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে। এই অভিযোগগুলো ব্রিটিশ কাউন্সিলের সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষামূলক কার্যক্রমকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে দেখছে রাশিয়া।

এছাড়াও, প্রসিকিউটর জেনারেল অভিযোগ করেছেন যে ব্রিটিশ কাউন্সিল "রুশ ফেডারেশনের দেশীয় পররাষ্ট্র নীতিকে একের পর এক অসম্মানিত করতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।" এটি একটি গুরুতর অভিযোগ, যা ইঙ্গিত করে যে রাশিয়া ব্রিটিশ কাউন্সিলের কার্যক্রমকে সরাসরি তার জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী বলে মনে করছে।

রুশ এফএসবি আরও অভিযোগ করেছে যে ব্রিটিশ গোয়েন্দারা রাশিয়ার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে ব্রিটিশ কাউন্সিলকে 'আচ্ছাদন' হিসেবে ব্যবহার করছে। এই অভিযোগ ব্রিটিশ কাউন্সিলের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির একটি গুরুতর অভিযোগের ইঙ্গিত দেয়। যা এর কার্যক্রমে চরম অবিশ্বাস এবং সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।

'অক্সফোর্ড রাশিয়া ফান্ড' এর বিরুদ্ধে অভিযোগ:

রুশ এফএসবি- ঘোষণা অনুযায়ী, 'অক্সফোর্ড রাশিয়া ফান্ড' রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং দেশটির স্থিতিশীলতা নষ্ট করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালাচ্ছে। যদিও এফএসবি সুনির্দিষ্টভাবে কোন ধরনের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের কথা উল্লেখ করেনি।

তবে সাধারণত 'অনাকাঙ্ক্ষিত সংস্থা' হিসেবে ঘোষিত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী কার্যকলাপে অর্থায়ন, প্রতিবাদ সংগঠিত করা, বা তথাকথিত 'রঙিন বিপ্লব' সমর্থন করার অভিযোগ আনা হয়। এই ধরনের অভিযোগ প্রায়শই পশ্চিমা-অর্থায়িত বেসরকারি সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে করা হয়। যাদের কার্যক্রমকে ক্রেমলিন নিজেদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখে।

নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপট:

এই নিষেধাজ্ঞাগুলো রাশিয়া ব্রিটেনের মধ্যে চলমান তীব্র ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনারই অংশ। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে ব্রিটেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং ইউক্রেনকে ব্যাপক সামরিক অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করেছে।

এর জবাবে রাশিয়া পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিচ্ছে। মস্কো ব্রিটেনকে 'বিশ্বব্যাপী সংকটের হোতা' এবং 'যুদ্ধের উসকানিদাতা' হিসেবে চিহ্নিত করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। যা রাশিয়ার পররাষ্ট্রনীতির কঠোর অবস্থানকে প্রতিফলিত করে। এই নিষেধাজ্ঞাগুলো রাশিয়ার পক্ষ থেকে ব্রিটিশ প্রভাব কমানো এবং পশ্চিমা হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে তার সার্বভৌমত্ব রক্ষার একটি স্পষ্ট বার্তা।

'অক্সফোর্ড রাশিয়া ফান্ড' এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের উপর এই নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ায় পশ্চিমা বেসরকারি সংস্থা এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমকে আরও সীমিত করবে।

এটি রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি প্রভাব কমানোর ক্রেমলিনের চলমান প্রচেষ্টার একটি অংশ। এই পদক্ষেপগুলো রাশিয়ায় স্বাধীন মত প্রকাশ এবং নাগরিক সমাজের উপর চাপ আরও বাড়াবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এটি রাশিয়া পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে অবিশ্বাস এবং উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি করবে। যা বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাশিয়ার এই সিদ্ধান্তগুলো মস্কো লন্ডনের মধ্যে তিক্ত সম্পর্কের একটি স্পষ্ট প্রতিফলন।

অক্সফোর্ড রাশিয়া ফান্ড' এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা কেবল দুটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমকেই প্রভাবিত করবে না, বরং রাশিয়া পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ গতিপথকেও প্রভাবিত করবে। এটি সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং শিক্ষা কর্মসূচির উপর ভূ-রাজনৈতিক প্রভাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। যা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জটিলতাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।