ছাত্র জীবন থেকেই রাত জাগার বদভ্যাস। দিন যত যাচ্ছে সেই অভ্যাস ক্রমে যাপনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। কিন্তু সমস্যা হল, এই রাত জেগে থাকার অভ্যাসই তরুণ প্রজন্মের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাচ্ছে।
সম্প্রতি ‘প্লস ওয়ান’ জার্নালে সেই সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকেরা প্রায় ৫৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ থেকে ২০ বছর বয়সী পড়ুয়াদের নিয়ে এই সমীক্ষা করেন। তাদের ঘুমের ধরন, মান, সময়কাল, একাগ্রতা, উদ্বেগ বা অবসাদের কারণ, মদ্যপানের অভ্যাস সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পর্যালোচনা করেন।
দেখা যায়, উপরে উল্লিখিত সব ক’টি কারণের জন্যই তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই ধরনের সমস্যা বাড়ছে। রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে জেগে থাকার অভ্যাস এমনিতেই শরীর, মনকে ক্লান্ত করে তোলে। তার ওপর একাগ্রতা নষ্ট হয়। আবেগ এবং অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাও লোপ পায়। ‘ইনসমনিয়া’র বা রাত জাগার অভ্যাস থাকলে সহজেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তে দেখা যায় কিংবা অবসাদ গ্রাস করে। গবেষকেরা বলছেন যাদের ঘুমের মান ভাল নয়, একই রকম সমস্যায় তারাও ভুগতে পারেন।
ভালো থাকার জন্য ভালো ঘুম হওয়া একান্ত প্রয়োজন। তবে অনেকেই আছেন, যাদের মোটেও ভালো ঘুম হয় না। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিদ্রা ফাউন্ডেশনের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সেখানে বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে শতকরা ৬০ জনই সপ্তাহে দুই রাত বা তার বেশি সময় ঘুমজনিত সমস্যায় ভোগেন। শতকরা ৪০ জনের বেশি লোক মাসে অন্তত দুই দিন অতি দিবানিদ্রালুতায় আক্রান্ত হয়ে দৈনন্দিন কাজে বাধাগ্রস্ত হন। সপ্তাহে দুই দিন এ ধরনের সমস্যায় পড়েন, এমন আছেন শতকরা ২০ জন। যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৪ লাখ লোক নিয়মিত ঘুমের সমস্যায় ভোগে। বড়দের ৫ ভাগ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত।
সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে গেলে কী করতে হবে?
মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে হলে ঘুমের গুরুত্ব বুঝতে হবে। রাতে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো অভ্যাস করতে পারলে ভাল। একান্ত যদি না পারেন, সে ক্ষেত্রে সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে না ওঠাই ভাল। খুব সকালের দিকে গুরুত্বপূর্ণ কোনও কাজ না রাখার চেষ্টা করবেন। সকালের দিকে স্কুল বা কলেজ থাকলে সমস্যায় পড়তে পারেন।
তবে আশার কথাও শুনিয়েছেন গবেষকেরা। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মনের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারলে মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত হবে। আর সেই নিয়ন্ত্রণ পেতে গেলে নিজেকে কিছু নিয়মে বেঁধে ফেলতে হবে। শুরুর দিকে অসুবিধা হলেও পরে তা অভ্যাসে পরিণত হবে।
পর্যাপ্ত না ঘুমালে কী হয়?
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে হার্ট অ্যাটাক, হার্টের অসুখ, অনিয়মিত হার্টবিট, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিসের মতো সমস্যা হতে পারে। ঘুম কম হলে কার্টিসল নামের একটা হরমোনের নিঃসরণ হয়। এটা ত্বকের কোলাজেন ভেঙে ফেলে। যাঁরা দিনে ছয় ঘণ্টার কম ঘুমান, তাঁদের মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা অন্যদের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি থাকে। কম ঘুমানোর সঙ্গে অবসাদগ্রস্ততার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। স্মৃতি হারিয়ে ফেলা, স্বাভাবিক জীবনের ছন্দ হারিয়ে ফেলা, ভুলে যাওয়া রোগ, ইনসমনিয়া, হ্যালুসিনেশনসহ নানা ধরনের জটিলতা হতে পারে।
কেন ঘুমাব?
ঘুম আমাদের মেটাবলিজম সিস্টেম আর ওজন নিয়ন্ত্রণ করে। জীবনে স্থিতি দেয়। ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করে। হৃদ্রোগের আশঙ্কা কমায়। দীর্ঘ আর স্বল্পমেয়াদি স্মৃতিশক্তি গুছিয়ে জড়ো করে রাখে। শারীরিক, মানসিক ও মস্তিষ্কের কার্যক্রম ঠিক রাখার জন্য জীবনের মোট সময়ের তিন ভাগের এক ভাগ ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। আট ঘণ্টা ঘুম মস্তিষ্কের কার্যক্রমকে সবচেয়ে ভালো রাখে। আমরা যখন ঘুমিয়ে পড়ি, তখন এমন কিছু কার্যক্রম চালু হয়, যেগুলো জীবনের জন্য খুবই জরুরি। শরীর ও মনের ঠিকভাবে কাজ করানোর জন্য, ‘কোয়ালিটি লাইফ’–এর জন্য প্রতিদিন তাই আট ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।