পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানের পূর্ব অনুমতি না নেওয়ায় কমিটির সভাপতি ও কালের কণ্ঠের পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি এমরান হাসান সোহেলকে জেল হাজতে ঢুকিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
সোমবার (১৯ মে) বাউফল আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহানারা বেগমের কক্ষে বসে তিনি এই হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেছেন দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি শহীদুল হক। তার এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বাউফল আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন পটুয়াখালী জেলা কার্যালয় ও বাউফল দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির আয়োজনে স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের দিনক্ষণ নির্ধারিত ছিল। দুপুর ১২টার সময় বিতর্ক প্রতিযোগিতার শেষ পর্বে অংশ নিতে বিদ্যালয়ে আসেন ইউএনও আমিনুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে এসেই ক্ষুব্ধ হন তিনি। এ নিয়ে এ এইচ এম শহীদুল হকের সঙ্গে ইউএনওর কথা-কাটাকাটি হয়। এ–সংক্রান্ত একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। ভিডিওতে দুজনের বাগ্বিতণ্ডার কথা শোনা যায়।
ইউএনও আমিনুল ইসলাম অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ না দেওয়ার কারণ জানতে চান শহীদুল হকের কাছে। তার প্রশ্নের জবাবে শহীদুল হক বলেন, আপনাকে একাধিকবার কার্যালয়ে গিয়ে পাইনি। এমনকি আপনাকে তিন দিন বিভিন্ন সময় ফোন করেছি, আপনি রিসিভ করেননি। এমন কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে ইউএনও বলেন, আপনারা একটা আয়োজন করতেছেন, ইউএনও জানে না আপনারা কীসের আয়োজন করতেছেন, আশ্চর্য ব্যাপার। ইউএনওকে অবহিত না করে আপনাকে এ আয়োজন করার এখতিয়ার কে দিয়েছে?
জবাবে শহীদুল হক বলেন, আপনাকে আমন্ত্রণের জন্য আপনার কমপ্লেক্সে তিন দিন যাওয়া হয়েছে। কিন্তু আপনাকে পাইনি। ইউএনও বলেন, উপজেলা কমপ্লেক্সে কে গেছে? আপনি আমার বাংলোতে গেলেন না কেন? আমার বাংলোও একটা অফিস। এমন প্রশ্নের জবাবে শহীদুল হক বলেন, আপনার বাংলোতে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। এর জবাবে ইউএনও বলেন, বাংলোতে যখন অ্যালাউ করব, তখন ঢুকবেন। আপনারা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি হয়ে মনে করছেন আপনারা রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি হয়ে গেছেন। আমি আপনার ফোন ধরতে বাধ্য না। আপনি আপনার ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ফোন দিলে আমি ধরব কেন?
এ সময় শহীদুল হক বলেন, আপনি ফোনই ধরলেন না, তা হলে ব্যক্তিগত স্বার্থ, নাকি রাষ্ট্রীয় কোনো কাজ বুঝলেন কীভাবে? আপনি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, একজন কৃষকের ফোনও ধরতেও বাধ্য। এর পর খেপে গিয়ে ইউএনও আমিনুল বলেন, প্রজাতন্ত্রের আমি এমন কর্মচারী মালিককে শাস্তিও দিতে পারি। তখন শহীদুল বলেন, ক্ষমতা আছে, আপনি দেন শাস্তি। এ সময় দুজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।
এ বিষয়ে জানতে ইউএনও আমিনুল ইসলামের মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনি কেটে দেন। পরে বার্তা পাঠিয়ে বলেন তিনি এখন ব্যস্ত। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন বলেন, আমার কাছে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য এখনো আসেনি, তথ্য পেলে মন্তব্য করতে পারব।
উপজেলা দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও সাংবাদিক এ এইচ এম শহীদুল হক বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহানারা বেগম অনুষ্ঠানে ইউএনওকে আমন্ত্রণ জানালে তিনি অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। এসেই চটে যান।
ঘটনার বিষয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক জাহানারা বেগম বলেন, ইউএনও মহোদয় তার বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। তাকে (ইউএনও) অবহিত করে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির কর্তৃপক্ষকে অনুষ্ঠান করার জন্য বলেছিলাম; কিন্তু ইউএনও মহোদয়কে অবহিত না করে তারা বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এ বিষয়ে জানতে চাওয়ায় ইউএনও স্যারের সঙ্গে শহীদুল হক উত্তেজিত হয়ে অসৌজন্যমূলকভাবে কথা বলেন। তখন ইউএনও স্যারও দুই-এক কথা বলেছেন।