বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রকাশিত গেজেট স্থগিত চেয়ে করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। পর্যবেক্ষণ, নির্দেশনাসহ এ আদেশ দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এই খবর পাওয়ার পরপরই রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচিতে থাকা ইশরাক সমর্থকরা আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
আদেশের পর আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, রিটটি সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। তার মানে দাঁড়াল, ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার জন্য আর কোনো বাধা থাকল না। আমরা মনে করি, যে উপদেষ্টা আছেন, যিনি হয়তোবা কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে এই বিষয়টি ঘুরাচ্ছিলেন, তিনিও এখন অন্তত আজকে রিট খারিজের পরে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা করবেন।
তবে রিট আবেদনকারীর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন বলেন, হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে। এতে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায় এবং ইসির গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চাওয়া হবে। রোববারের মধ্যে আপিল বিভাগে আবেদন করার চেষ্টা থাকবে।
ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায় এবং ইসির গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে মো. মামুনুর রশিদ নামে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ১৩ মে রিটটি করেন। রিটের ওপর গত মঙ্গলবার শুনানি নিয়ে গতকাল আদেশের জন্য দিন রাখেন। গতকাল বিষয়টি উঠলে শুনানি হয়। গতকাল শুনানি নিয়ে আদালত আজ সকালে আদেশের জন্য সময় নির্ধারণ করেন। এ অনুসারে আদেশের জন্য আজ রিটটি আদালতের কার্যতালিকায় এক নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন। নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায় ও ফল প্রকাশের গেজেট সমর্থন করে আইনসম্মত উল্লেখ করে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও আইনজীবী কায়সার কামাল শুনানিতে অংশ নেন। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান ও খান জিয়াউর রহমান শুনানিতে ছিলেন।
২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হন। একই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ভোটের ফলের গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। শপথ নিয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তাপস।
নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফলাফল বাতিল চেয়ে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক। তিনি বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য।
গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। একই বছরের ১৯ আগস্ট ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করা হয়। এর মধ্যে ইশরাকের করা নির্বাচনী মামলায় চলতি বছরের ২৭ মার্চ রায় দেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল। রায়ে তাপসকে নির্বাচিত ঘোষণা বাতিল করা হয়। ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করা হয়।
আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মেয়র হিসেবে ইশরাকের শপথের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশন থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠির পরও কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় ইশরাকের সমর্থকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন।