মেধার মূল্যায়নে দল-মত-ধর্ম টানা অনুচিত | বিশ্ববিদ্যালয় নিউজ

মেধার মূল্যায়নে দল-মত-ধর্ম টানা অনুচিত

তিনি বলেছেন, ‘মেধার বিচার কখনোই কারও পারিবারিক পরিচয় দিয়ে করা উচিত নয়। তার বাবা কে ছিলেন, দাদা বা নানা কী করতেন, এসব দেখে বিচার করা একেবারেই অনুচিত। যখন কোনো সমাজ এমন পরিচয়ভিত্তিক সুবিধা বা বঞ্চনার চর্চা শুরু করে, তখন সেই সমাজের শৃঙ্খলা ও ন্যায়বিচার ভেঙে পড়ে।’

#ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় #বিশ্ববিদ্যালয় #কামরুল হাসান মামুন #মেধা

কোনো জাতি যদি মেধা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল, ধর্ম বা জাত এসব বিষয় বিবেচনায় নেয়; তাহলে সেই দেশ কখনোই জ্ঞান, বিজ্ঞান বা অর্থনীতিতে উন্নতি করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন।

তিনি বলেছেন, ‘মেধার বিচার কখনোই কারও পারিবারিক পরিচয় দিয়ে করা উচিত নয়। তার বাবা কে ছিলেন, দাদা বা নানা কী করতেন, এসব দেখে বিচার করা একেবারেই অনুচিত। যখন কোনো সমাজ এমন পরিচয়ভিত্তিক সুবিধা বা বঞ্চনার চর্চা শুরু করে, তখন সেই সমাজের শৃঙ্খলা ও ন্যায়বিচার ভেঙে পড়ে।’

শুক্রবার (২ মে) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডির এক পোস্টে অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন এসব কথা লিখেছেন।

তিনি আরো বলেছেন, গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত ধারণা ছিলো—বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে যুক্ত তরুণ-তরুণীরা সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে নানা ধরনের বাধা ও বৈষম্যের মুখে পড়তেন। এমনকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও এই বৈষম্য আরও প্রকটভাবে দেখা যেতো।

এখন যদি এক নতুন পার্সেপশন গড়ে ওঠে—যেখানে বিএনপি কর্মীদের পরিবর্তে আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা, আর জামায়াত সংশ্লিষ্টদের জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা চাকরিতে বৈষম্যের শিকার হন—তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়, দেশ কি সত্যিই সঠিক পথে এগোচ্ছে?

মেধার কোনো রাজনৈতিক দল, ধর্ম বা জাত নেই। বিশাল একটা তরুণ জনগোষ্ঠীকে হতাশার মধ্যে রেখে দেশ কোনদিন সামনে আগাতে পারবে না।

যারা অপরাধ করেছে—হোক তা হত্যা, দুর্নীতি বা অন্য কোনো জঘন্য কাজ—তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ মামলা করুন, নিরপেক্ষ তদন্ত করুন এবং আইন অনুযায়ী বিচার করুন। কিন্তু কোনোভাবেই নির্দোষ, সাধারণ নাগরিকদের কেবল তাদের পরিচয়ের ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত করা কিংবা চাকরি বা সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয়।

‘টিট ফর ট্যাট’ নীতি—যেখানে একটি দল বা রাজনৈতিক গোষ্ঠী অতীতে তাদের ওপর সংঘটিত অন্যায়ের প্রতিশোধ হিসেবে একই ধরনের অন্যায় আরেক দলের ওপর প্রয়োগ করে—যে কোনো দেশের জন্য অস্থিতিশীলতা ও পতনের নিশ্চয়তা বহন করে। এই ধরনের নীতি হয়তো ক্ষণিকের জন্য প্রতিশোধের আকাঙ্ক্ষা মেটাতে পারে, কিন্তু এর ফলে ন্যায়বিচার, মেধাভিত্তিক সমাজব্যবস্থা এবং জাতীয় ঐক্যের মূল ভিত্তিগুলো ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।

যখন শাসনব্যবস্থা প্রতিশোধের চক্রে পরিণত হয়, তখন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নিরপেক্ষতা হারায়, নাগরিকদের আস্থা ভেঙে পড়ে, এবং ন্যায়ের ওপর দাঁড়িয়ে এগিয়ে চলা একটি সমাজের স্বপ্ন ধূসর হয়ে যায়।

সত্যিকারের অগ্রগতি তখনই সম্ভব, যখন অতীতের অন্যায়গুলোকে স্বীকার করে তা আইনসম্মত ও নৈতিক উপায়ে সমাধান করা হয়—প্রতিশোধমূলক প্রতিচ্ছবির মাধ্যমে নয়। একটি জাতি কখনোই উন্নত হতে পারে না, যদি প্রতিহিংসার চক্রকে আঁকড়ে ধরে রাখে; বরং সে তখনই এগিয়ে যেতে পারে, যখন সেই চক্র থেকে বেরিয়ে এসে সুবিচার ও উদারতার পথে হাঁটে

#ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় #বিশ্ববিদ্যালয় #কামরুল হাসান মামুন #মেধা