চোখ রাঙানি দিয়ে নারীদের প্রান্তিক করা সম্ভব না বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।
শনিবার (৩ মে) নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন।
গত ১৯ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় নারী সংস্কার কমিশন।
সে সময় নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে কমিশনের যেসব সুপারিশ এখনি বাস্তবায়নযোগ্য তা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা।
কিন্তু প্রতিবেদনটিকে ‘ইসলাম পরিপন্থী’ দাবি করে কমিশন ও প্রতিবেদন দুইই বাতিলের দাবি জানায় হেফাজতে ইসলাম এবং জামায়াতে ইসলামী।
প্রতিবেদন বাতিলসহ ৪ দফা দাবিতে গতকাল শনিবার রাজধানীতে মহাসমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম।
এই সমাবেশ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহও বক্তব্য রেখেছেন।
আগামী ২৩ মে একই দাবিতে সারাদেশে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে সংগঠনটি।
একই দিন জামায়াতে ইসলামের আমির রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশে সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।
কমিশনের বেশ কিছু সুপারিশ কুরআন-হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক। তাই দ্রুত এ কমিশন বিলুপ্ত করে নতুন কমিশন গঠন করতে হবে।’
ফেসবুক পোস্টে উমামা ফাতেমা লিখেছেন, ‘জুলাই এর পর মেয়েদের সাইডে বসায় দিয়ে এখন রাজনৈতিক পাড়ায় নারী অধিকার নিয়ে সালিস বসছে দেখছি। হায়রে নাটক! সরকার তো একটা ঐকমত্য কমিশন বানালো সংস্কার নিয়ে আলাপ করার জন্য।
সবগুলো সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট ঘেঁটে দেখলেই অনেক অবাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবনা চোখে পড়বে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রায়োরিটি বেসিসে সংস্কার প্রস্তাবনার পক্ষে/বিপক্ষে অবস্থান নিতে পারবে।’
জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম পরিচিত এই মুখ বলেন, ‘এর মধ্যে নারী সংস্কার কমিশনের রিপোর্টে সর্বস্তরের নারীদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রস্তাবনা ঠিক মনে না হলে মত-দ্বিমতের সুযোগ রয়েছে। সেটা না করে পুরো কমিশন বাতিলের কথা তোলা হচ্ছে কোন উদ্দেশ্যে?
আর নারীদের কতটুকু অধিকার থাকবে, সেটা নিয়ে তো নারীদের তুলনায় পুরুষদের মাথাব্যথা বেশি। এই কমিশনের রিপোর্ট বাতিল হলে বাকি সব সংস্কার কমিশনের রিপোর্টও বাতিলযোগ্য।’
উমামা লিখেছেন, ‘নারীরা কোনো ব্যবহারের বস্তু না যে আপনার গদি সিকিউর করে রান্নাঘরে ফিরে যাবে।
অভ্যুত্থানের পর দেশের ৫০ শতাংশ জনগণের অধিকারের প্রশ্ন যাদের কাছে উটকো ঝামেলা লাগে। তারা আসলে কোন ধরনের রাজনীতি করতে চায়, তারাই জানে।
নারী সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে, কিন্তু জনসম্মুখে সভা-সমাবেশ করে যে সকল বক্তৃতা ঝাড়া হচ্ছে, তাতে আপনাদের বিরোধের পরিবর্তে নারীবিদ্বেষটাই বেশি প্রকাশ পায়।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র বলেন, ‘স্পষ্ট করেই বলতে চাই, নারীদের অধিকার, সুযোগ-সুবিধার প্রশ্ন বাদ দিয়ে বাংলাদেশে কোনো রাজনীতি মেইনস্ট্রিম হবে না।
জুলাই অভ্যুত্থানে তা পরিষ্কারভাবেই বোঝা গেছে। স্টেজে গলাবাজি করে, চোখরাঙানি দিয়ে নারীদের প্রান্তিক করা সম্ভব না।’