বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয় অগ্রাধিকার তালিকায় না থাকা দু:খজনক | বিবিধ নিউজ

বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয় অগ্রাধিকার তালিকায় না থাকা দু:খজনক

‘বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ কমিশন রিপোর্টে থাকলেও, তা সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় স্থান পায়নি।’

#বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশন

বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ সংস্কার কমিশন রিপোর্টে থাকলেও, তা সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় স্থান না পাওয়াকে দু:খজনক। বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করার এখনই উপযুক্ত সময় এবং এটা নিশ্চিত করতে একটা শক্তিশালী ও কার্যকর বিচার বিভাগীয় সচিবালয় অপরিহার্য।

বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশনের উদ্যোগে শনিবার রংপুরে ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, পৃথক সচিবালয় ও গণঅভ্যুত্থানের পূর্ণতা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এমন মন্তব্য করেন।

রংপুরের আরডিআরএস এর বেগম রোকেয়া মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় রংপুর বিভাগের ৮ জেলার বিজ্ঞ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজসহ বিচার বিভাগীয় বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন রংপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ফজলে খোদা মোঃ নাজির। সভাপতিত্ব করেন এসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ আমিরুল ইসলাম।

সভায় বিচারকরা চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিচার বিভাগ সংস্কার উদ্যোগের ওপর বিশেষ আলোকপাত করেন। তবে তাঁরা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ কমিশন রিপোর্টে থাকলেও, তা সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় স্থান পায়নি।

ছবি : দৈনিক শিক্ষাডটকমছবি : দৈনিক শিক্ষাডটকম

বক্তারা বলেন, বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য এখনই উপযুক্ত সময়, এবং এটি নিশ্চিত করতে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর বিচার বিভাগীয় সচিবালয় অপরিহার্য। বর্তমান সংবিধানের ১০৯ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের ওপর হাইকোর্ট বিভাগের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা থাকলেও ১১৬ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিচার বিভাগে নিযুক্ত বিচারদের কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরীসহ নিয়ন্ত্রণ ও শৃংঙ্খলা বিধান রাষ্ট্রপতির হাতের ন্যস্ত রয়েছে।

অন্যদিকে সংবিধানের ১১৬ (ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিচার- কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তি এবং বিচারিক দায়িত্বে নিয়োজিত বিচারক ও ম্যাজিস্ট্রেটদের বিচারকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকার নিশ্চয়তার বিধান দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ তাত্ত্বিকভাবে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের সাথে সংবিধানের ১০৯ ও ১১৬ (ক) নং অনুচ্ছেদ সাংঘর্ষিক। আলোচকগণ সংবিধানের ১১৬ নং অনুচ্ছেদ সংশোধন করে জেলা আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরী ও শৃঙ্খলা বিধানের ক্ষমতা সুপ্রীম কোর্টের হাতে ন্যস্ত করার এবং বিচারকদের পদ সৃজন, বাজেট প্রণয়ন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য একটি পৃথক 'বিচার বিভাগীয় সচিবালয়' প্রতিষ্ঠার জোর দাবি জানান। সভায় আলোচকগণ বলেন, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ বিচার বিভাগের কার্যক্রমে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।

জেলা আদালতের বিচারকদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত ক্ষমতা সুপ্রীম কোর্টের অধীনে না থাকায় বিচার বিভাগ বারবার নির্বাহী প্রভাবের মুখোমুখি হচ্ছে। বক্তারা বিচারকদের জন্য ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের স্কেলে স্থবির হয়ে থাকা জুডিসিয়াল ভাতার অচলাবস্থারও সমালোচনা করেন এবং একটি পৃথক ও স্বাধীন পে-কমিশন গঠনের দাবি জানান। তারা বলেন, বিচারকগণ সংবিধান রক্ষার গুরু দায়িত্ব পালন করেন, তাই তাদের মর্যাদা ও আর্থিক প্রণোদনাও সেই দায়িত্বের সমতুল্য হওয়া উচিত।

বক্তারা আরও বলেন, অতীতে বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে, যা অনভিপ্রেত ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। একটি শক্তিশালী, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন বিচার বিভাগ ছাড়া রাষ্ট্রের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই বাস্তবতায়, তারা জ্যেষ্ঠতা, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে উচ্চ আদালতে জেলা আদালতের বিচারকদের ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানান। সভায় 'ইয়ং জাজেস ফোরাম'-এর সাহসী ভূমিকাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তারা বলেন, দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা ভেঙে একটি কার্যকর ও গণতান্ত্রিক এসোসিয়েশন গঠনের পথে তাঁরা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। একইসঙ্গে বক্তারা এসোসিয়েশনকে বিচার বিভাগের স্বার্থ রক্ষায় একটি কার্যকর প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান।

সভায় সর্বসম্মতভাবে অভিমত প্রকাশ করা হয়, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে একটি পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা ও বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির প্রত্যাশা পূরণে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বিচার বিভাগ পৃথককরণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার করেছিলো। পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হলে আমাদের হাতে সময় আরো কম। এই সময় সময়ে আমরা যদি উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হই তবে ভবিষ্যতে স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।

তারা বলেন, বর্তমান মাননীয় প্রধান বিচারপতি অধঃস্তন আদালতকে শুধু মুখে নয়, বুকে ধারণ করেন। প্রধান বিচারপতির ঘোষিত রোডম্যাপ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে স্বাধীন বিচার বিভাগের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

#বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশন