লন্ডনে ইউনূস-তারেকের বৈঠকে জামায়াত-এনসিপি নাখোশ | বিবিধ নিউজ

লন্ডনে ইউনূস-তারেকের বৈঠকে জামায়াত-এনসিপি নাখোশ

লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একান্তে বৈঠক করেছেন।

#তারেক রহমান #জামায়াত #এনসিপি #ড. মুহাম্মদ ইউনূস

লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একান্তে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকের পর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ইস্যুতে কিছু সিদ্ধান্ত এসেছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বৈঠকের পর অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপির পক্ষ থেকে এক যৌথ ঘোষণায় জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আনার কথা স্পষ্ট করা হয়েছে। নির্বাচনের তারিখ এগিয়ে আনার ঘোষণায় রাজনৈতিক দলগুলো খুশি। এ নিয়ে কোনো বির্তক না থাকলেও সরকারপ্রধানের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণা নিয়ে নাখোশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনও।

অন্যদিকে বৈঠককে ইতিবাচক উল্লেখ করে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ১২ দলীয় জোট, বাংলাদেশ এলডিপি, খেলাফত মজলিসসহ কয়েকটি দল।

দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবার জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দলটির আমির শফিকুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দলটি তাদের প্রতিক্রিয়া জানায়। প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠককে স্বাভাবিক মনে করলেও যৌথ ব্রিফিংকে 'ভালোভাবে' নেয়নি দলটি। ব্রিফিংয়ে একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ পেয়েছে এবং তা প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ণ করেছে বলে মনে করে জামায়াত।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। তার এই ঘোষণার পর লন্ডন সফরকালে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিদেশে যৌথ প্রেস ব্রিফিং এবং বৈঠকের বিষয় সম্পর্কে যৌথ বিবৃতি প্রদান করা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় গলে আমরা মনে করি। এর মাধ্যমে তিনি একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তার নিরপেক্ষতা ক্ষুন্ন করেছে। আমরা মনে করি দেশে ফিরে এসে প্রধান উপদেষ্টার অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে অভিমত প্রকাশ করাই সমীচীন ছিল।'

অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে শুধু একটি দলের নেতার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের বিষয়টিকে নেতিবাচকভাবে দেখছে এনসিপিও। গত শুক্রবার ইউনুস-তারেক বৈঠকের পরপরই এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, একটি রাজনৈতিক দলকে খুশি করার জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে আন্য হচ্ছে, যা জুলাইয়ের শহীদদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল।

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, একটি দলের সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ পুনর্বিবেচনা করার মধ্য দিয়ে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার আগে জুলাই আন্দোলনে ভূমিকা রাখা রাজনৈতিক দল, শহীদ পরিবারসহ সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিতে হবে।

আরিফুল ইসলাম আদীব আরও বলেন, তবে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন নিয়ে সরকার দুটি শর্ত দিয়েছে। তারা বলছে, নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে এবং বিচার ও সংস্কার পর্যাপ্ত অগ্রগতি হলে। বিষয়টি আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখি। দুটি শর্ত সম্পন্ন হলে নির্বাচনের তারিখ ও সময় নিয়ে আমাদের মেজর আপত্তি নাই।' তবে ইউনূস-তারেকের বৈঠক নিয়ে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, জনগণ যাদের ক্ষমতায় বসাবে তারা শক্তিশালী হয়ে যাবে। ফলে তারা বিচার প্রক্রিয়াও করতে পারবে, সংস্কারও করতে পারবে। নির্বাচন দ্রুত হলে চলমান সংকট নিরসন সম্ভব।

বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষার্ধের মধ্যেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। কারণ তফসিল ঘোষণা থেকে ভোটগ্রহণ পর্যন্ত ৪৫-৫০ দিন সময় লাগে। সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, 'সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত এই নিরপেক্ষ সরকার মূলত একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এই সরকারের প্রধানতম কর্ম এবং এজেন্ডা হচ্ছে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করা।

বিএনপির সমমনা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বিবৃতিতে বৈঠককে ঐকমত্যের সূচনা আখ্যা দিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন। মৌলিক সংস্কারের জন্য দ্রুত জাতীয় সনদ প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছে জেএসডি। নির্বাচন এগিয়ে আনার সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক বলেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, কয়েকজন উপদেষ্টা ও বিএনপি নেতার অপরিণামদর্শী বক্তব্য সরকার এবং দলটির মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়ে তুলছিল। লন্ডন বৈঠকে তা আপাতত কাটল। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক অনিশ্চয়তা ও উৎকণ্ঠা দূর হয়ে সমঝোতার পথ তৈরি হয়েছে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, বিচার ও সংস্কারে অগ্রগতি অর্জনের আলোচনা ইতিবাচক। এখন এসব বিষয় জাতীয় ঐকমত্য তৈরিতে মনোযোগ পাবে বলে আশা করি।

বিএনপির সমমনা ১২ দলীয় জোট বিবৃতিতে বলেছে, জাতির জন্য স্বস্তির বার্তা এনেছে লন্ডন বৈঠকের যৌথ বিবৃতি। স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ, হেফাজতে ইসলামের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব প্রমুখ।

যদিও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চেয়েছে; দলটির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, বিচারের অগ্রগতি ও সংস্কার করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব।

#তারেক রহমান #জামায়াত #এনসিপি #ড. মুহাম্মদ ইউনূস