বিচারপতি দিলীরুজ্জামান
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে অপসারণ করা হয়েছে। বুধবার (২১ মে) আইন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সংবিধানের ৯৬(৬) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে অপসারণ করেন রাষ্ট্রপতি।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) এ তথ্য জানায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
খোন্দকার দিলীরুজ্জামান ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ৩১ মে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হন। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে ৩০ মে তিনি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হন।
এর আগে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খিজির হায়াতকে বিচারক পদ থেকে অপসারণ করেন। সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের দফা (৬) অনুযায়ী তাকে অপসারণ করা হয়। এ বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ গত ১৮ মার্চ প্রজ্ঞাপন জারি করে।
খিজির হায়াত ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ৩১ মে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হন। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ মে তিনি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হন।
রাজনৈতিক পট পরিবতর্নের পর গত বছরের ১৬ অক্টোবর থেকে হাইকোর্ট বিভাগে ১২ জন বিচারপতিকে প্রাথমিকভাবে কোনো বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না বলে জানায় সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা। সেই তালিকাও দেখা গেছে বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের নাম।
সে সময় শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনা শেষে এ সিদ্ধান্ত হয়।
রেজিস্ট্রার জেনারেলের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বৈঠকে অংশ নেয়া বাংলাদেশ আইন সমিতির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট এম মাহবুবুর রহমান জানান, ওই ১২ বিচারপতি হলেন- বিচারপতি আতাউর রহমান খান, বিচারপতি নাঈমা হায়দার, বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ, বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার, বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস, বিচারপতি খিজির হায়াৎ, বিচারপতি এসএম মনিরুজ্জামান, বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান, বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিন, বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামান, বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলাম এবং বিচারপতি এসএম মাসুদ হোসাইন দোলন।
আওয়ামী লীগের ‘ফ্যাসিস্ট’ বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবিতে ১৬ অক্টোবর দুপুর থেকে হাইকোর্ট ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে আসছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। অন্যদিকে হাইকোর্ট বিভাগের ‘দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ’ বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি পালন করছিল বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী সমাজ। আর ফ্যাসিবাদের দোসর বিচারপতিদের অনতিবিলম্বে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করছিল জাতীয় নাগরিক কমিটি-লিগ্যাল উইং। এসব দাবির প্রেক্ষিতেই সে সময় ১২ বিচারপতিকে কোনো বেঞ্চ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
তার আগে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১০ আগস্ট একইভাবে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ হয়েছিলো। তখন পদত্যাগ করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতি। ওই দিনই বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে বাংলাদেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। পরে আপিল বিভাগে আরো চারজনকে বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়।
হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা ১০১। সরকার পতনের পর বিভিন্ন পক্ষ থেকে এই বিচারপতিদের অনেকের পদত্যাগের দাবি তোলা হচ্ছিলো। সংখ্যাটি কখনো ২০, কখনো ২৫, কখনো ৩০ বলা হচ্ছিলো।
এদিকে গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা ১২ বিচারপতির বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে ‘পেশাগত অসদাচরণের’ অভিযোগ তদন্তের বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
এতে বলা হয়েছিলো, ১২ বিচারপতির মধ্যে একজন পদত্যাগ করেছেন। দুইজন বিচারপতি হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগ পাননি এবং দুইজন বিচারপতি অবসর নিয়েছেন। এছাড়া চারজন বিচারপতির বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলে পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং অপর তিনজন বিচারপতির বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া প্রায় তিন ডজন বিচারপতির অপসারণের দাবি ওঠে। সুপ্রিম কোর্টে বিভিন্ন সময়ে বিক্ষোভ করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবির মুখে ১০ আগস্ট তৎকালীন প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতি পদত্যাগ করেন। এছাড়া ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগের ১২ বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠান বর্তমান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। পরে তাদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এবার অপসারণ করা হলো বিচারতি খোন্দকার দীলুজ্জামানকে।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।