কাতারের আমীরের রাজকীয় বিমানে লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া | বিবিধ নিউজ

কাতারের আমীরের রাজকীয় বিমানে লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া

উন্নত চিকিৎসায় খালেদা জিয়ার লন্ডন যাওয়ার জন্য কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ বিমান এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেছে। সোমবার রাত পৌনে আটটার দিকে বিমানটি অবতরণ করে।

#বিবিধ

কাতারের আমীরের পাঠানো বিশেষ এয়ার এম্বুলেন্সে লন্ডন যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আজ রাত ১০টায় ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে তাকে বহনকারী বিশেষ এয়ার এম্বুলেন্স। লন্ডন পৌঁছেই বেগম খালেদা জিয়া সরাসরি ‘লন্ডন ক্লিনিকে’ ভর্তি হবেন। পরবর্তীতে লন্ডন ক্লিনিক সুপারিশ করলে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি হসপিটালে নেয়া হতে পারে।

উন্নত চিকিৎসায় খালেদা জিয়ার লন্ডন যাওয়ার জন্য কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ বিমান এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেছে। সোমবার রাত পৌনে আটটার দিকে বিমানটি অবতরণ করে।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এ সময় বিমানবন্দরে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

সোমবার (৬ জানুয়ারি) রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন এসব তথ্য জানান।

সূত্র জানায়, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরুর পর কাতারের আমীর শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি তার রাজকীয় বহরে থাকা বিশেষ এয়ার এম্বুলেন্সটি খালেদা জিয়ার সম্মানে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। এটি একটি বিশেষ বিমান, যার মধ্যে সব ধরনের বিশেষায়িত চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। এয়ার এম্বুলেন্সে কাতারের রাজকীয় চার চিকিৎসক ও প্যারামেডিকও ঢাকা আসবেন। গতকাল রাত ৭টা ৪০ মিনিটে এই বিশেষ এয়ার এম্বুলেন্স ঢাকা পৌঁছায়।

আজ রাত ৮টায় গুলশানের বাসা ফিরোজা থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন বেগম খালেদা জিয়া। এরপর বিমানবন্দরে উপস্থিতি ও ইমিগ্রেশন বিষয়ক কার্যাদি সম্পন্ন শেষে রাত ১০টায় রয়েল কাতার আমারি ‘এয়ার এম্বুলেন্সে’ লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন তিনি।

ওদিকে সাত বছর পর লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বড় ছেলে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের দেখা হবে। ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমানও যাচ্ছেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে। চিকিৎসক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মিলে ১৬ জন সফরসঙ্গী যাচ্ছেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে।

সংবাদ সম্মেলনে জাহিদ হোসেন বলেন, এ মুহূর্তে যে সকল প্রস্তুতি আছে সেগুলো সম্পন্ন করে মঙ্গলবার রাত ১০টায় ইনশাআল্লাহ কাতারের আমীরের স্পেশাল এয়ার এম্বুলেন্সে ম্যাডাম ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-দোহা এবং দোহা-লন্ডনের হিথ্রো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। লন্ডন ক্লিনিক বলে একটা পুরনো ঐহিত্যবাহী হসপিটাল আছে সেখানে উনাকে (খালেদা জিয়া) ভর্তি করা হবে। হিথ্রো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে উনাকে সরাসরি সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। এই হসপিটালে উনি চিকিৎসাধীন থাকবেন।

কাতারের আমীর শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার কথা জেনে রাজকীয় বহরের এই বিশেষ বিমান দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, কাতারের আমীরের বিশেষ এয়ার এম্বুলেন্সটি সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এই বিমানেই ম্যাডামের মঙ্গলবার রাতে লন্ডন যাত্রা শুরু হবে। আমীরের পাঠানো বিশেষ এয়ার এম্বুলেন্সের রাজকীয় কাতারের চারজন চিকিৎসক এবং প্যারা মেডিক্সরা থাকবেন। ঢাকা থেকে খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল বোর্ডের ছয়জন সদস্য এই বিমানে যাবেন। এরা হলেন- অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার, অধ্যাপক এফএম সিদ্দিক, অধ্যাপক নরুদ্দিন আহমেদ, ডা. জাফর ইকবাল, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন ও ডা. মোহাম্মদ আল মামুন। এ ছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার ছোট ছেলের স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল ও খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তারসহ ব্যক্তিগত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে।

ডা. জাহিদ বলেন, আপনাদের মাধ্যমে সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই যারা ম্যাডামের সুস্থতার জন্য দোয়া করেছেন, বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বিভিন্নভাবে প্রার্থনা করেছেন তাদের সবার কাছে দলের পক্ষ থেকে আমরা কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। ম্যাডাম সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, দল ধন্যবাদ জানিয়েছে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবও ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ম্যাডামের আগামী চিকিৎসাটা যাতে সুস্থ হয়ে আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে উনি আবার আমাদের মাঝে ফেরত আসতে পারে সেজন্য দেশবাসীকে দোয়া করার জন্য দলের পক্ষ থেকে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সবাই আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। ম্যাডামের পরিবারও ম্যাডামের জন্য দোয়া চেয়েছেন।

এখন লন্ডনের হসপিটালেই চিকিৎসা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ম্যাডামের নানা শারীরিক জটিলতা রয়েছে, যা আমরা বিভিন্ন সময়ে বলেছি। সর্বোপরি উনার লিভারের জটিলতাটা অর্থাৎ লিভার সিরোসিস পরবর্তীতে কম্পেনসেন্টারি লিভার ডিজিজ বলে গ্রেট-টু সেটার জন্য টিপস (চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিশেষ পদ্ধতি টিআইপিস-টিপস) করা হয়েছে। টিপসের কিছু টেকনিক্যাল এসপেক্ট আছে এডজাস্টমেন্টের বিষয় আছে, আপনি দেখতে হার্টে স্টেন্টিং করার পর চেক করে আবার সেটার জন্য রি-স্টেন্টিং করে অথবা চেক করে দেখে যে, স্টেন্টিংটা ভালোভাবে কাজ করছে কি না, এই জিনিসগুলো তো আমরা করতে পারি নাই।

হার্টে খালেদা জিয়ার একাধিক ব্লক ছিল উল্লেখ করে জাহিদ হোসেন বলেন, লাইসেইভিং যেটুকু পোরসন সেইটুকু করা হয়েছিল ওই সময়ে। কারণ ওই সময়ে উনার শারীরিক সুস্থতা ওইরকম ছিল না। উনার আরও যে ব্লক আছে সেটা অ্যাডড্রেস করার দরকার আছে, উনার ক্রনিক কিডনি ডিজিজ যেটা আছে সেটা অ্যাডড্রেস করতে হবে, উনার করোনা পরবর্তীতে কিছু জটিলতা হয়েছে সেগুলো নিরসন করার ব্যবস্থা নিতে হবে, এটা ওভার অল থ্রো চেকিংয়ের জন্য যেটা আমাদের দেশে হয়েছে, আমাদের দেশের ফিজিশিয়ানরা, এভারকেয়ার হসপিটালের স্টাফ তারা বেস্ট, এ ব্যাপারে আমাদের ম্যাডামের পক্ষ থেকে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে, পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের ডি-সেটিসফেকশন নাই, সবাই হ্যাপি, উই আর হ্যাপি অলসো, দল হ্যাপি। কাজেই আরও কিছু উন্নত করার জন্য সেখানে আরও থ্রো চেকিং হবে।

তিনি বলেন, লিভার ট্রান্সপ্লান্টের, আমাদের মনে রাখতে হবে উনার যে বয়স, লিভার ট্রান্সপ্লান্টের বিষয়টি সিদ্ধান্ত দেবে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিটে যাওয়ার পরে, ওখানে ওই সুবিধাটা আছে, সো দে উইল ডিসাইড যে, ওয়াট উইল বি দ্য নেক্সট কোর্স অব টিট্রমেন্ট। এখানে বসে আমরা জানি না, আমাদের কালকের জার্নিটা কেমন হবে। আমাদের এমনও হয়েছিল যে, আমরা ডেট করে ফেলেছিলাম কিন্তু সেই ডেট ডিফার করতে হয়েছে ডিউ টু হার হেলথ কন্ডিশন।

যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ডা. জাহিদ বলেন, যদি আমরা ওখানে (লন্ডন ক্লিনিক) সুপারিশ করি যে, ইয়েস সি নিডস, তাদের এখানে নাই, জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি হসপিটাল নিয়ে যেতে হবে, তখন হয়তো যাওয়ার একটা প্রশ্ন আসে।

পবিত্র ওমরাহ্‌ পালনে সৌদি আরব যাবেন কি না এরকম প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুস্থ থাকলেই ফেরার সময়ে বা কোনো এক সময়ে, কিন্তু মানুষ চাইলে ওমরাহ্‌ করা যায় না, আল্লাহ্‌ চাইতে হয়। কাজে রাব্বুল আ’লামীন যদি ইনশাআল্লাহ কবুল করেন ডেফিনেটলি ম্যাডাম সেটা করবে। এটা কিন্তু প্রিডিসাইড না যে, এটা করবেনই। হজ এবং ওমরাহ্‌ অবশ্যই আল্লাহ্‌ চাইতে হবে। টিকিট করার পরে যাওয়ার পরও এমনও হয়েছে অনেকে করতে পারেন না। কাজেই উনি একজন ধার্মিক মানুষ মনের ইচ্ছা আছে। উনি সুযোগ পেলে হজ করেছেন, ওমরাহ্‌ করেছেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেশ কয়েকবার।

এদিকে লন্ডন যাত্রার সব প্রস্তুতি শেষ হওয়ার মধ্যে রোববার রাত ৯টায় গুলশানের বাসায় বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময় করেছেন খালেদা জিয়া। সাক্ষাৎ শেষে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাত্রার দিনক্ষণ আনুষ্ঠানিভাবে জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে আইসিইউতে রেখে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিক্যাল বোর্ডের মাধ্যমে তাকে দীর্ঘ সময়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। তার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড বারবার তাকে বিদেশ নেয়ার পরামর্শ দিলেও তৎকালীন শেখ হাসিনার সরকার তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি।

#বিবিধ