জিএসটি গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষা বহাল রাখার নির্দেশনা দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ২৭ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শারমিনা নাসরীনের স্বাক্ষরিত এ চিঠি আগের গুচ্ছভুক্ত সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে পাঠানো হয়েছে।
মন্ত্রণালয় বলছে, সম্প্রতি গুচ্ছভুক্ত কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুরোধ অগ্রাহ্য করে নিজস্ব উদ্যোগে পৃথকভাবে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এককভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য তা বাড়তি চাপ ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করবে বলে মনে করছে মন্ত্রণালয়।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তিচ্ছু প্রায় ৫ লাখ শিক্ষার্থীর স্বার্থ ও দাবি বিবেচনা করে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম কঠোরভাবে মেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নির্দেশ দেওয়া হয় চিঠিতে।
এদিকে দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীদের দাবি, শিক্ষক সমিতির সিদ্ধান্ত ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে গত ৭ ডিসেম্বর গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যায় সিলেটের শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)। স্বতন্ত্রভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিতে ইতোমধ্যে ভর্তি পরীক্ষার তারিখও ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দাবি ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার পর মানসম্মত শিক্ষার্থীর সংকট, ফাঁকা আসন নিয়ে ক্লাস শুরু, দীর্ঘ ভর্তি প্রক্রিয়া, মেধাবীদের ভর্তিতে অনাগ্রহ, স্বকীয়তা হারানো, গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েও শিক্ষার্থী না পাওয়া, অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং পরিচিতি ও ব্র্যান্ড ভ্যালু ক্ষতিসহ নানামুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এমনকি গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার পর থেকে বিশ্ব র্যাংকিংয়ে শাবিপ্রবির অবস্থান দিনদিন তলানিতে যাচ্ছে বলেও মনে করেন অনেকে।
গুচ্ছে না থাকার দাবি জানিয়ে গত ১০ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলন করেছেন শিক্ষার্থীরা। এমনকি ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে গত ১৫ নভেম্বর মানববন্ধন করেছেন তারা। সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের দেওয়া চিঠির ব্যাপক প্রতিক্রিয়াও দেখাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, পূর্বে শাবিপ্রবির প্রশ্নপত্রের যে মান ছিল, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল এবং সময় সাপেক্ষ। এই প্রক্রিয়া শাবিপ্রবির জন্য উপযুক্ত নয়। গুচ্ছে যুক্ত হওয়ার পর থেকে সেশনজট সমস্যার তৈরি হয়েছে। তাই শাবিপ্রবি প্রশাসনকে গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় না যাওয়ার অনুরোধ জানান তারা।
গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র কার্যক্রম পরিচালনা করতে একাট্টা দাবি জানিয়ে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও। গত বছরের ৩০ অক্টোবর ও ৪ ডিসেম্বর শিক্ষক সমিতির এক সাধারণ সভায় গুচ্ছে না থাকার সিদ্ধান্তে একমত পোষণ করেন প্রায় সকল শিক্ষক। গুচ্ছে যুক্ত থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কোন ধরনের সহযোগিতা না করারও সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষক সমিতি।
মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার পর শাবিপ্রবির শিক্ষকরা বলেন, দুই বছর আগেও শিক্ষা ও গবেষণায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরেই শাবিপ্রবির অবস্থান ছিল। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দেশসেরা ছিল শাবিপ্রবি। কিন্তু গুচ্ছে যুক্ত হওয়ার পর থেকে র্যাংকিং অনেক পিছিয়েছে। এমনকি চূড়ান্ত ভর্তির তিন মাস পরেও আসন পূরণ করা যাচ্ছে না। যা উদ্বেগজনক।
গুচ্ছ প্রক্রিয়ার জটিলতায় ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ১৬২টি আসন ফাঁকা রেখে ক্লাস কার্যক্রম শুরু করতে হয়েছিল বলে জানান ওই বর্ষের ভর্তি কমিটির সদস্যসচিব ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুল হাকিম। আর ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে কয়েকবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও শিক্ষার্থী পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, গত বছরের ১১ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে গুচ্ছে না থাকার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঢাবি, রাবি, চবি ও জাবি যদি স্বতন্ত্রভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারে তাহলে আমাদেরকে কেন বারবার বলা হচ্ছে গুচ্ছে যুক্ত হতে? ইতোমধ্যে স্বতন্ত্রভাবে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন নেওয়া হয়েছে।
গুচ্ছে যুক্ত হতে বাধ্যবাধকতা নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) অধ্যাপক ড. এম আমিনুল ইসলাম। বুধবার রাত ৯টায় শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি একথা জানান। তিনি আরও বলেন, 'গুচ্ছে যুক্ত হবে কি-না সেটা অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলই নির্ধারণ করবে।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।