আওয়ামী লীগ নেতাই এইচএসসি পরীক্ষার দায়িত্বে, অভিভাবকদের ক্ষোভ | পরীক্ষা নিউজ

আওয়ামী লীগ নেতাই এইচএসসি পরীক্ষার দায়িত্বে, অভিভাবকদের ক্ষোভ

অভিযোগে বলা হয়, আমির হোসেন আমুর লোক হিসেবে রফিকুল ইসলাম কলেজ থেকে কোটি কোটি টাকা মেরে দিয়েছেন। কাউকে তোয়াক্কা করেননি। তার মধ্যে কোনোদিন শিক্ষক সুলভ আচরণ দেখা যায়নি। বাসশ্রমিক ও রিকশাওয়ালাদের সঙ্গে বিড়ি ফুঁকতে দেখা যেতো পাঁচ আগস্ট অব্দি। শিক্ষকতা পেশার মান যাদের জন্য নীচে নেমেছেন তাদের তালিকার শীর্ষে রফিকুলরা।

#এইচএসসি পরীক্ষা #আওয়ামী লীগ #প্রশ্নপত্র #গ্রেফতার #আমির হোসেন আমু

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ওরফে কবির মোল্লার হাতে চলতি বছরের এইচএসসির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র থাকায় খবরে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধেও পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দোসরপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। রফিকুল ইসলাম কবিরের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক শাস্তি ও গ্রেফতারের দাবিতে শিক্ষা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন অভিভাবকরা।

অভিযোগে বলা হয়, পতিত ও প্রয়াত স্বৈরাচার এরশাদ আমলে নকল করে এসএসসি, এইচএসসি পাস করা রফিকুল ইসলাম কবির নতুন পতিত আওয়ামী লীগের নেতা আমির হোসেন আমুর হাতেপায়ে ধরে বরিশালের একটি বেসরকারি কলেজে শিক্ষক পদে চাকরি বাগিয়েছিলেন। যোগ্যতা না থাকলেও সেখান থেকে আবার বেসরকারি নলছিটি কলেজে উপাধ্যক্ষ পদে আসেন। কলেজটি কয়েকবছর আগে সরকারি হলেও রফিকুল আওয়ামী লীগের পদে থেকে গেছেন। ৫ আগস্ট অব্দি তিনি ওই পদে ছিলেন। কয়েকমাস পলাতক থাকার পর স্থানীয় কয়েকজন তস্যকর্মীকে ম্যানেজ করে সম্প্রতি কলেজে আসা শুরু করেন।

আরো পড়ুন: নলছিটি সরকারি কলেজের অবৈধ অধ্যক্ষ কবিরের পদত্যাগ দাবি

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ জুন এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হলে বিগত বছরগুলোর মতোই রফিকুল নকল ও পাস বাণিজ্যে লিপ্ত হন। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নলছিটি বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পদ বাগান। কেন্দ্রটিতে সরকারি নলছিটি ডিগ্রি কলেজ, গোলাম মোস্তফা কলেজ, জেড এ ভুট্টো কলেজ ও দপদপিয়া ইউনিয়ন কলেজসহ কয়েকটি কলেজে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেন।

২৬ জুন সকালে রফিকুল তার পুরনো দাগি শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে নকল ব্যবসা শুরু করলে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করা শুরু করেন। ক্ষোভ প্রশমনে নকলে জড়িত মাত্র ছয়জন শিক্ষককে পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ক্ষোভের মাত্রা তীব্র হলে উপজেলা পরীক্ষা প্রশাসন থেকে রফিকুলকে পরামর্শ দেওয়া হয় পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চাওয়ার আবেদন জমা দিতে।

অভিযোগে বলা হয়, আমির হোসেন আমুর লোক হিসেবে রফিকুল ইসলাম কলেজ থেকে কোটি কোটি টাকা মেরে দিয়েছেন। কাউকে তোয়াক্কা করেননি। তার মধ্যে কোনোদিন শিক্ষক সুলভ আচরণ দেখা যায়নি। বাসশ্রমিক ও রিকশাওয়ালাদের সঙ্গে বিড়ি ফুঁকতে দেখা যেতো পাঁচ আগস্ট অব্দি। শিক্ষকতা পেশার মান যাদের জন্য নীচে নেমেছেন তাদের তালিকার শীর্ষে রফিকুলরা।

অভিযোগের বিষয়ে রফিকুল ইসলাম কবির সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলা পরীক্ষা প্রশাসন আমাকে পরীক্ষার দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি নির্দোষ।

এর আগে গত বছরের ৭ অক্টোবর দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে ঝালকাঠির নলছিটি সরকারি ডিগ্রি কলেজের অবৈধভাবে নিয়োগকৃত ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলামের পদত্যাগ দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন কলেজের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ সুগন্ধা নদীর তীরে মনোরম পরিবেশে অবস্থিত বেসরকারি কলেজটি কয়েকবছর আগে সরকারি হলেও অধ্যক্ষ রফিকুল এখনও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক পদে রয়েছেন। রফিকুলের কর্মকান্ডে শিক্ষক সমাজ সম্পর্কে এলাকায় ঘৃণা জন্মেছে। সরকারিকৃত হওয়ার পর কলেজটির পড়াশোনার মান লাটে উঠেছে।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন- কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম বাবু, বর্তমান সভাপতি রাকিব গাজী, সদস্যসচিব হিমেল ও শিক্ষার্থী রাকিব আহমেদ।

বক্তারা অভিযোগ করেন, রফিকুল ইসলাম কবির নলছিটি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক পদে রয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুর ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তাকে অবৈধভাবে নলছিটি ডিগ্রি কলেজে উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয়া হয়। কলেজে অধ্যক্ষ পদ শূন্য রেখে তিনিই বছরের পর বছর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার অবৈধ নিয়োগের বিরুদ্ধে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে একটি মামলা করা হয়েছিলো। মামলায় নিয়োগ স্থগিত করা হলেও দলীয় প্রভাবে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি বরিশাল সিটি কলেজে ১২ বছর প্রভাষক হিসেবে

দায়িত্ব পালন না করে সরাসরি উপাধ্যক্ষ নিয়োগ পান, যেটা পুরোপুরি অনিয়মতান্ত্রিক একটি নিয়োগ ছিলো। তার নিয়োগ পরীক্ষায় ২৯ জন প্রার্থী থাকার পরও দলীয় চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে কাউকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেয়া হয়নি। দুইজন ডামি প্রার্থী রেখে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়।

তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হয়ে কলেজ সরকারিকরণের কথা বলে শিক্ষকদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় ভর্তি ফি ১ হাজার ২৫০ টাকা বোর্ড থেকে নির্ধারণ করে দেয়া হলেও তিনি ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার হাজার টাকা নিয়ে ভর্তি বাণিজ্য করেছেন। এইচএসসি পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড দেয়া বাবদ প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর কাছ থেকে ৫০০ টাকা নিয়েছেন। এভাবে নানা কৌশলে অনিয়ম এবং বাণিজ্য করে দীর্ঘ ১২ বছরে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ।

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

#এইচএসসি পরীক্ষা #আওয়ামী লীগ #প্রশ্নপত্র #গ্রেফতার #আমির হোসেন আমু