শুরু হয়েছে মধু মাস। সরকারিভাবে বিভিন্ন এলাকায় গাছ থেকে আম এবং লিচু সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। বাজারে আগাম জাতের আম, লিচু, জামরুল কেনাবেচা শুরু হয়েছে। এ সময় অনেকে
আমের ভালো দামের আশায় বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে আম পাকান, যেটা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
রাজধানীর ফুটপাত থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাজারেই এখন আম বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজারে যে আম পাওয়া যাচ্ছে, এর বেশির ভাগই স্বাভাবিকভাবে পাকা নয়। অপরিপক্ব কাচা আম কার্বাইড দিয়ে পাকিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এখানেই শেষ নয়, কৃত্রিমভাবে পাকানো আমের পচন ঠেকাতে ব্যবহার করা হচ্ছে ফরমালিন। ক্রেতার কাছে আকর্ষণীয় করতে মেশানো হচ্ছে কৃত্রিম রঙ। রঙে-রূপে লোভনীয় এসবআম খেতে স্বাদহীন। প্রকারান্তরে আম নয়, যেন বিষই কিনছেন ক্রেতারা।[inside-ad-১]
এদিকে লোভনীয় এই ফলের 'দাম' এখনো চড়ে
আছে মগডালে। অর্থাৎ দুর্মূল্যের এই বাজারে আমের দাম আমজনতার, মানে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নেই খুব একটা। বিত্তবানদের পাতে ফলের রাজার দেখা মিললেও গরিবের পাতে আম এখনো অধরাই রয়ে গেছে।
সরেজমিন দেখায় যায়, ফার্মগেট মোড়ে ১৫০-২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে আম। এই আম উচ্চবিত্তরা কিনে খেতে পারলেও আমজনতা পারছেন না। মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর ফল মার্কেটে গোপালভোগ আমের কেজি ৩০০ টাকা হাকছেন বিক্রেতারা। মহাখালী কাঁচাবাজারে নামহীন পাকা আম ১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সেখানে কথা হয় ক্রেতা আমজাদ খানের সঙ্গে। তিনি জানান, বক্ষব্যাধি হসপিটালে তার রোগী আছে। রোগী আম খেতে চেয়েছেন, তাই ১৮০ টাকা কেজি দরে দেড় কেজি আম কিনেছেন।
এ দিন রাজশাহীতে গুটি আম বিক্রি হয় এক হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা মণ দরে। বানেশ্বরের আমের হাটে কথা হয় ব্যবসায়ী আরিফুল আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, অন্য বছর ৭০০-৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হতো। কিন্তু আম চাষিরা বাজারে এসব আম এক হাজার ৩০০-এক হাজার ৫০০ টাকা মণ পেয়েছেন। গোপালভোগ আম দুই হাজার ৭০০ টাকা মণ দরে কিনেছি। দাম তুলনামূলক বেশি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের আমের সঙ্গে দেশীয় অপরিপক্ব কাচা আম কার্বাইড দিয়ে পাকিয়ে বিক্রি হচ্ছে। কৃত্রিমভাবে পাকানো এই আম মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। চড়া দামে এসব আম কিনে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা। রাজধানীর বিভিন্ন ফলের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সাতক্ষীরার আম প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৮০ টাকা।ভেজাল আম খাওয়ার কারণে বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি হতে পারে। যেমন নাক–মুখ ও গলায় জ্বালাযন্ত্রণা করা, ডায়রিয়া, শরীর দুর্বল অনুভূত হওয়া, বমি হওয়া, বুক ও পেটে জ্বালাপোড়া করা, এমনকি চোখেরও ক্ষতি হতে পারে।
আমের ভেজাল রোধে অসাধু ব্যবসায়ীদের এবং এ ধরনের কাজে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। আমসহ সব ফলের ভেজালের কুফল সম্পর্কে বিভিন্ন আলোচনা সভার মাধ্যমে মানুষকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানানো উচিত।
শিশুদের এই ফরমালিনযুক্ত আম অথবা অন্য যেকোনো ফল খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন। নিজে সতর্কতা অবলম্বন করুন, অন্যকে সতর্ক করুন।