ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-বোনাস চার মাস ধরে বন্ধ। পরিবার নিয়ে ৮৮ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী অর্থসংকটে ধারদেনা করে দিন কাটাচ্ছেন।
জানা যায়, ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হওয়া মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের আওতায় শিক্ষকদের বেশির ভাগই মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেম। প্রতি মাসে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা করে বেতন জানুয়ারি থেকে বন্ধ।
এ বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (ডিজি) আ. ছালাম খান বলেন, এটি খুবই বেদনাদায়ক। বেতন বন্ধের বিষয়ে আমার জানা নেই।
তিনি বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এবং ফ্যাসিস্ট কর্মকর্তাদের বদলি করায় দীর্ঘদিন প্রকল্পের গুরুত্বপুর্ণ পদ খালি থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আগামী একনেকের বৈঠকে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। আশা করছি, ঈদুল আজহার আগেই শিক্ষকদের বকেয়া বেতন-ভাতা দেওয়া হবে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সারা দেশের মসজিদ অবকাঠামো ব্যবহার করে মসজিদের নিকটবর্তী শিশুদের জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে প্রাক-প্রাথমিক ও কোরআন শিক্ষা দেওয়াই এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য। এ ছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীর ভর্তির হার বৃদ্ধি এবং শিক্ষার্থীদের ঝরে যাওয়া রোধ করাও আছে লক্ষ্যের মধ্যে।
১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হওয়া এই কার্যক্রম এরই মধ্যে ছয়টি পর্যায় শেষে সপ্তম পর্যায় গত বছর ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় সারা দেশের ৭৩ হাজার ৭৬৮টি কেন্দ্রের একজন করে শিক্ষক, দুই হাজার ৫০ মডেল কেয়ারটেকার, ৬৫ কর্মীসহ মোট ৮৮ হাজার জনবল রয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে কেউ কোনো ধরনের বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না।
এমনকি গত ঈদুল ফিতরের সময়ও তারা বেতন-বোনাস পাননি। প্রতিটি সাধারণ শিক্ষাকেন্দ্রে ৩০ জন এবং সহজ কোরআন শিক্ষা কেন্দ্রে ৩৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সেই হিসাবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশে এক কোটি ২১ লাখ ৫১ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে।
গোপীনাথপুর মজমপাড়া স্কুল মক্তবের শিক্ষক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, কোনোরকম ধার করে চলছি। গতকালকেও একজনের কাছে থেকে ২ হাজার টাকা ধার করেছি।
চরপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কেন্দ্রের শিক্ষক মো. কারামত আলী বলেন, চার মাস ধরে বেতন বন্ধ। বেতন না পেলেও পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, আমাদের শিক্ষকদের বেশির ভাগই মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেম। এই কেন্দ্রের শিক্ষকতার পাশাপাশি বাসায় বাসায় টিউশনি করে কোনো রকমে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বেঁচে আছি। বেতন-ভাতা বন্ধ হওয়ায় আমাদের ধারদেনা করে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের গত ১৫ বছরে আমাদের জামায়াত-শিবির বলে অবহেলা করা হতো। ঠুনকো অজুহাতে প্রকল্পের বেতন-ভাতা বন্ধ রাখা হতো। আমাদের দিয়ে দলীয় কর্মীর মতো খাটিয়ে নিত। এখন ছাত্র-জনতার সরকার ক্ষমতায়, এখনো যদি শেখ হাসিনার আমলের মতো আমাদের বেতন-ভাতা বন্ধ থাকে, তাহলে খুবই দুঃখজনক। আমরা প্রকল্পটি রাজস্ব খাতে নেওয়ার দাবি জানাই।
মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা শিক্ষক কল্যাণ পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোহা. আবুল হোসাইন বলেন, চার মাস ধরে আমরা কেউ বেতন-ভাতা পাচ্ছি না। এই বাজারে অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন শিক্ষকেরা। সামনে পবিত্র ঈদুল আজহা, অথচ আমাদের বেতনের কোনো খবর নেই। আমরা প্রধান উপদেষ্টা ও ধর্ম উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চাই।