সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি না পেয়ে প্রেসক্লাবে জড়ো হচ্ছেন জনতা | বিবিধ নিউজ

ম্যাস গেদারিং ফর ফিলিস্তিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি না পেয়ে প্রেসক্লাবে জড়ো হচ্ছেন জনতা

প্রায় সবার হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা, গায়ে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে নানা রকমের প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।

#ফিলিস্তিন #গাজা

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসন ও গণহত্যার প্রতিবাদে এবং ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সংহতি জানাতে শনিবার রাজধানী ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিশাল গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

‘ম্যাস গেদারিং ফর ফিলিস্তিন’ ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি না পাওয়ায় সকাল থেকেই প্রতিবাদী জনতা প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে জড়ো হতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে পুরো এলাকা ফিলিস্তিনের পতাকা ও সংহতিমূলক প্ল্যাকার্ডে ছেয়ে যায়। যা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তীব্র জনরোষ ও ফিলিস্তিনের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন স্পষ্ট করে তোলে।

সকাল ১০টা থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সাধারণ নাগরিকরা ছোট ছোট মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে আসতে শুরু করেন। নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকলের হাতেই ছিল ফিলিস্তিনের জাতীয় পতাকা। অনেকের গায়ে দেখা যায় ফিলিস্তিনের সমর্থনে লেখা টি-শার্ট ও ব্যাজ।

হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডগুলোতে ইসরায়েলের বর্বরতা বন্ধের দাবি, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে স্লোগান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতার সমালোচনা করা হয়।

‘ফিলিস্তিন মুক্তি পাক’, ‘ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধ কর’, ‘আমরা ফিলিস্তিনের পাশে আছি’ – এমন বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত ছিল প্রেসক্লাব ও এর আশপাশের এলাকা।

আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মূলত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই গণজমায়েতের আয়োজন করার পরিকল্পনা ছিল। তবে শেষ মুহূর্তে অনুমতি না পাওয়ায় স্থান পরিবর্তন করে প্রেসক্লাবের সামনে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

স্থান পরিবর্তনে কিছুটা বিশৃঙ্খলা দেখা গেলেও প্রতিবাদী মানুষের মনোবল ছিল দৃঢ়। তারা প্রেসক্লাবের সামনের সড়কেই অবস্থান নিয়ে তাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রাখেন।

এই গণজমায়েতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ছাত্র, শ্রমিক, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ গৃহিণীও তাদের সংহতি জানাতে উপস্থিত ছিলেন।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। তাদের হাতে থাকা ব্যানার ও ফেস্টুনে ফিলিস্তিনের দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ইতিহাস এবং ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার ভয়াবহতা তুলে ধরা হয়।

গণজমায়েতে বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ফিলিস্তিনের প্রতি তাদের জোরালো সমর্থন ব্যক্ত করেন। ইসরায়েলের আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানান।

বক্তারা বলেন, ইসরায়েল বছরের পর বছর ধরে ফিলিস্তিনিদের উপর যে অমানবিক নির্যাতন ও গণহত্যা চালাচ্ছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই বিষয়ে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।

একইসাথে, ফিলিস্তিনের জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে বাংলাদেশের জনগণের পূর্ণ সমর্থন থাকবে বলে তারা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তারা।

বক্তারা আরও বলেন, ফিলিস্তিনের মাটি মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদি – সকল ধর্মের মানুষের জন্য পবিত্র স্থান। ইসরায়েল সেখানে যে দখলদারিত্ব চালাচ্ছে এবং নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে, তা মানবতার চরম লঙ্ঘন। এই গণহত্যা বন্ধে বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত হতে হবে এবং ফিলিস্তিনের জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে।

এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী অনেকেই তাদের ব্যক্তিগত অনুভূতি ও ফিলিস্তিনের প্রতি তাদের ভালোবাসার কথা জানান।

একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বলেন, “ফিলিস্তিনের মানুষের উপর যে অত্যাচার হচ্ছে, তা দেখে আমি ব্যথিত। আমার মনে হয়, বিশ্বের সকল শান্তিকামী মানুষের আজ ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ানো উচিত।”

একজন শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা ফিলিস্তিনের তরুণদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করছি। তাদের মুক্তির সংগ্রাম আমাদেরও সংগ্রাম।”

গণজমায়েতের একটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল বিভিন্ন ধর্মের ও মতাদর্শের মানুষের এক প্ল্যাটফর্মে আসা। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নির্বিশেষে সকলেই ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও সংহতি প্রকাশ করেন।

এটি প্রমাণ করে যে ফিলিস্তিনের বিষয়টি কোনো একক ধর্ম বা গোষ্ঠীর নয়, বরং এটি একটি মানবিক ইস্যু।

প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই গণজমায়েতের কারণে যান চলাচলে কিছুটা অসুবিধা সৃষ্টি হয়। তবে প্রতিবাদী জনতা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সতর্ক ছিলেন।

এই ‘ম্যাস গেদারিং ফর ফিলিস্তিন’ কর্মসূচি শুধুমাত্র একটি প্রতিবাদ সমাবেশ ছিল না। এটি ছিল ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের গভীর ভালোবাসা ও সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ।

এই কর্মসূচি বিশ্বকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, ইসরায়েলের অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ সর্বদা সোচ্চার থাকবে এবং ফিলিস্তিনের জনগণের ন্যায্য অধিকারের পক্ষে তাদের লড়াই অব্যাহত রাখবে।

আয়োজকরা আশা প্রকাশ করেন, এই গণজমায়েতের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সম্ভব হবেন। তারা ফিলিস্তিনের জনগণের উপর চলমান নিপীড়ন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

তারা আরও জানান, ফিলিস্তিনের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণ তাদের সমর্থন ও সংহতি অব্যাহত রাখবে।

এই কর্মসূচি নিঃসন্দেহে ফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

#ফিলিস্তিন #গাজা