ফাইল আটকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) রাজশাহীর উপপরিচালক (ডিডি) ড. আলমগীর কবীরকে বদলি করা হয়েছে।
রোববার (১৮ মে) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সরকারি কলেজ-২ শাখার এক প্রজ্ঞাপনে তাকে ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মাউশি রাজশাহীর পরিচালক মোহা. আছাদুজ্জামান বলেন, তার বদলির আদেশটা দেখলাম। আগামী ২৫ মের মধ্যে তাকে অবমুক্ত হতে বলা হয়েছে। তা না হলে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত বলে গণ্য হবেন।
অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই বদলি কি না, জানতে চাইলে আছাদুজ্জামান বলেন, এটা আমি বলতে পারব না। মন্ত্রণালয় বদলি করেছে, কারণ মন্ত্রণালয় জানে।
আলমগীর কবির ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরে মাউশির কলেজ শাখার ডিডি হিসেবে প্রথম রাজশাহীতে যোগ দেন। তারপর তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। তদন্ত চলাকালে তাকে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়। গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি সবেতনে তিনি পরিচালক হওয়ার জন্য তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন। কিন্তু পরিচালক হতে পারেননি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ১৮ নভেম্বর তাকে মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডিডি হিসেবে পদায়ন করা হয়। এরপর শিক্ষকদের এমপিও এবং বকেয়া বিলের ফাইল আটকে রেখে ঘুষ আদায়ের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের ডিসেম্বরে রাজশাহীর পবা উপজেলার ডাঙ্গেরহাট মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আসলাম আলীকে ফোন করে টাকা দাবি করা হয়। পরে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ আসলাম আলী মাউশির রাজশাহীর পরিচালক মোহা. আছাদুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করে জানান, তার কলেজের ৪৩ জন শিক্ষকের বকেয়া বিলের ৯০ লাখ টাকার ফাইল আটকে আছে ডিডি আলমগীর কবীরের টেবিলে। এই অবস্থায় দ্রুত ফাইল ছাড়তে এক নারী তার কাছে ফোন করে টাকা চেয়েছেন।
এ ঘটনায় ১১ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযান চালায় আলমগীর কবীরের দপ্তরে। তখন অগ্রগতি সময় পার হয়ে গেলেও ১৫১টি ফাইল আটকে রাখার প্রমাণ পায় দুদক। এ নিয়ে দুদকের সদর দপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানো হয়।
২৮ মার্চ মাউশির রাজশাহীর পরিচালক ফাইল আটকে রাখাসহ সাত অভিযোগ এনে ডিডি আলমগীরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। আলমগীর এর সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। পরে আবারও ফাইল আটকে রাখার অভিযোগ উঠলে ৩০ এপ্রিল দুদক আবারও তার দপ্তরে অভিযান চালায়। সেদিন ৯১টি ফাইল আটকে রাখার প্রমাণ পায় দুদক।
অভিযান শেষে দুদকের সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বলেন, ডিডি আলমগীরের কাছে ৯২টি ফাইল পেন্ডিং আছে। ফাইলগুলো অনৈতিকভাবে ধরে রেখে তিনি পরিচালকের কাছে ফরওয়ার্ড করেননি। দুই সপ্তাহ আগে আমরা তার বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযান পরিচালনা করেছি। আজকে একই অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করলাম। আমি জানি না কোন অদৃশ্য শক্তির বলে এখনো তিনি স্বপদে বহাল আছেন। আমার মনে হয়, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখা উচিত।
এর ১৭ দিনের মাথায় তার বদলির আদেশ হলো। এ বিষয়ে কথা বলতে ডিডি আলমগীর কবীরের মোবাইল ফোনে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করে সাড়া না পাওয়ায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।