সেগমেন্টাল পাশ ও ক্যারিঅন চালুসহ পোস্ট গ্রাজুয়েশন রিফর্ম ইনিশিয়েটিভের সাত দফা দাবি আদায়ে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. শামীম আহমেদকে স্বারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল কমিউনিটি। রোববার (১৩ এপ্রিল) এই স্মারকলিপি দেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। একই দাবিতে বিভিন্ন বিভাগেও স্মারকলিপি বিতরণ করা হয়েছে।
সংগঠনটির নেতারা জানিয়েছেন, সেগমেন্টাল পাশ, ক্যারিঅন ব্যবস্থা চালু, পরীক্ষা ও ভর্তি ফি কমানো, আবাসন ও বিভিন্ন গ্রান্ট সুবিধা, পরীক্ষার পদ্ধতি সংস্কার, সংস্কার কমিটি গঠন ও ট্রেনিংয়ের স্বীকৃতিসহ সাত দফা দাবিতে এই স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
তারা জানান, সেগমেন্টাল পাশসহ আমাদের বেশিরভাগ প্রস্তাবনার সাথে শিক্ষকরা একমত পোষণ করেছেন। আমরা অতিশীঘ্রই আমাদের প্রস্তাবনাগুলোর বাস্তবায়নে কার্যকরী পদক্ষেপ আশা করছি।
এর আগে গত ২২ মার্চ বিএমইউ ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম, প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রো-ভিসি (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার ও রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম প্রমুখের কাছে স্মারকলিপি বিতরণ করা হয়।
ওইদিন বিভিন্ন কর্মসূচিও ঘোষণা করে বিএমসি। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে—২২ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত অনলাইন এবং অফলাইনে জনমত তৈরি, ৬ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি বিভাগের শিক্ষকদের কাছে স্মারকলিপি প্রদান এবং ১৩ এপ্রিল প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দুপুর ১২টা থেকে এক ঘণ্টা প্রতীকি কর্মবিরতি ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন।
বিএমসির সাত দফা দাবি
রেসিডেন্সি ও নন-রেসিডেন্সি সংস্কার কমিটি গঠন
ক. যুগের সাথে তাল মিলিয়ে কোর্স কারিকুলাম আপডেট করে ট্রেইনিদের হাতে কলমে ইন্টারভেনশন এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি শেখার সুযোগ দিতে হবে।
খ. বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য ই-লগবুক নিশ্চিত করতে হবে।
গ. সকল প্রতিষ্ঠানে সকল রেসিডেন্টদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা, থিসিস গ্র্যান্ট, বুক গ্র্যান্ট, ট্রেনিং মডিউলসহ সমান সুযোগ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
ঘ. রেসিডেন্ট ও নন-রেসিডেন্টদের সুনির্দিষ্ট বেতন কাঠামো প্রণয়ন করে বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট, উৎসব ভাতা, চিকিৎসা ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
ঙ. সকল প্রতিষ্ঠানে ক্লাস ও ট্রেনিং ব্লকের অভিন্ন মান নিশ্চিতকরণে অবিলম্বে কোয়ালিটি অ্যাশিউরেন্স টিম গঠন করতে হবে।
চ. কোর্স ডিউরেশনের ব্যাপারে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
ছ. ট্রেনিংয়ের স্বীকৃতি দিতে হবে এবং ট্রেনিং অন্য যেকোনো পোস্ট গ্রাজুয়েশন এ গ্রহণযোগ্য হতে হবে।
সেগমেন্টাল পাস নিশ্চিতকরণ
কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সেগমেন্টাল পাসের একটা সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করে জানুয়ারি ২০২৫ সেশনে যারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের থেকেই কার্যকর করতে হবে।
পরীক্ষা পদ্ধতির যুগোপযোগী সংস্কার
ক. আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে পরীক্ষা পদ্ধতি পুরোপুরি ঢেলে সাজাতে হবে।
খ. প্রতিটি পরীক্ষায় ডিপার্টমেন্ট ও প্রতিষ্ঠানভিত্তিক পাস রেটের অসামঞ্জস্য দূর করে নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করতে হবে।
গ. ভর্তি পরীক্ষা, ফেইজ-এ এবং ফেইজ-বি পরীক্ষার মার্ক পরীক্ষার পর দ্রুততম সময়ে প্রকাশ করতে হবে।
ঘ. পরীক্ষক এবং প্রশিক্ষকদের জন্য রিভিউ সিস্টেম চালু এবং তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
ঙ. পরীক্ষার কেন্দ্র বাড়িয়ে বিএমইউ ছাড়াও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও ইনস্টিটিউটে পরীক্ষার আয়োজন করতে হবে।
ভর্তি পরীক্ষাকেন্দ্রিক সংস্কার
ক. ভর্তি পরীক্ষার ফি সর্বোচ্চ এক হাজার টাকার মধ্যে রাখতে হবে।
খ. পরীক্ষায় অংশ নিতে ইন্টার্ন শেষ হওয়ার পর এক বছর সম্পন্ন হওয়ার বাধ্যবাধকতা বাতিল করতে হবে।
গ. ন্যূনতম তিনটি সাবজেক্ট চয়েসের (মাল্টিপল চয়েস) ব্যবস্থা করতে হবে।
ঘ. ভর্তি পরীক্ষায় ওয়েটিং লিস্ট এবং মাইগ্রেশন প্রক্রিয়া চালু করতে হবে।
ফেইজ-এ, ফেইজ-বি এবং ডিপ্লোমা ফাইনাল পরীক্ষা কেন্দ্রিক সংস্কার
ক. পরীক্ষার ফি সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে রাখতে হবে।
খ. ভর্তি ফি সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অভিন্ন হবে এবং অবশ্যই তা পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকার মধ্যে রাখতে হবে।
গ. সরকারি চিকিৎসকদের ডেপুটেশন অবস্থায় বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের সুযোগ দিতে হবে।
ক্যারি অন সিস্টেম
যেকোনো পরীক্ষায় ফেল করলে পরিক্ষার্থীর জন্য ন্যূনতম এক বছর ক্যারি অন সিস্টেম চালু করতে হবে।
ডিপ্লোমা ডিগ্রির নাম পরিবর্তন
ক. ডিপ্লোমা ডিগ্রির নাম পরিবর্তন করে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নাম দিতে হবে।
খ. গবেষণায় গুরুত্ব দিতে হবে।