জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) জলছাপযুক্ত অফ হোয়াইট কাগজে পাঠ্যবই ছাপার ঘোর বিরোধিতা শুরু করেছেন বাংলাদেশের কাগজ মিল মালিকরা। নিম্নমানের কাগজে পাঠ্যবই ছাপা ঠেকাতে এই জলছাপযুক্ত কাগজের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নিয়েছে এনসিটিবি। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত ১০ মার্চ এ বিষয়ে ২৫ জন কাগজ মিল মালিক ও তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ে বসেছিলেন এনসিটিবির কর্তারা। ওই সভাতেই জলছাপযুক্ত কাগজে বই ছাপার ঘোর বিরোধিতা করেন কাগজ মিল মালিকরা। তাদের মধ্যে মাগুরা পেপার মিল, মেঘনা পেপার, সোনালী ও আল নূরস পেপার মিলসের প্রতিনিধিরা অন্যতম। সে সময় অত্যন্ত আপত্তিকর কথাও বলেন কেউ কেউ। একজন মিল মালিক তো বলেই বসেন, ‘এতো ভালোমানের কাগজে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যের বই ছাপানোর দরকার কী। যে বইয়ের ব্যবহার মাত্র একবছর।’ এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা ওই বক্তব্যে তীব্র আপত্তি তোলেন। সভায় অংশ নেওয়া একধিক পেপার মিল ও এনসিটিবি কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সভায় আলোচনা হয়, সারা দুনিয়ায় সৃজনশীল বই ছাপা হয় অফ হোয়াইট কাগজে। আমাদের দেশেও সৃজনশীল বই অফ হোয়াইটে কাগজেই ছাপা হয়। পাঠ্যবইও একই কাগজে ছাপার পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছেন মুদ্রণকারীরা। কিন্তু সিন্ডিকেটের বাধায় তা বাস্তবায়ন হয় না। মিলি মালিকদের প্রতিনিধিরা এই বক্তব্যেরও বিরোধিতা করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান গতকাল বুধবার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আগামী সপ্তাহে প্রিন্টার্সদের সঙ্গে বসবেন এনসিটিবি কর্মকর্তারা। পাঠ্যবইয়ের প্রিন্টার্সরা জলছাপযুক্ত কাগজে বই ছাপতে আগ্রহী। তাদেরকে কাগজের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার তাগিদ যুক্ত করে দেয়া হয়েছে।
আগামী প্রকাশনীর কর্ণধার এবং বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সাবেক সভাপতি ওসমান গণি বলেন, জলছাপযুক্ত অফ হোয়াইট কাগজে এনসিটিবির পাঠ্যবই এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে।
জানা যায়, শত চেষ্টা করেও পাঠ্যবইয়ে নিম্নমানের কাগজের ব্যবহারের ঠেকাতেই পারছে না সরকার। অধিক মুনাফার আশায় এমন অপকর্ম করেই চলেছে কতিপয় মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান। সঙ্গে আছেন মিল মালিকরা। নিম্নমানের কাগজে ছাপা বইয়ের স্থায়িত্ব কম হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যগত দিকেও অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এমন জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হতে সরকার এবার নতুন উপায় বের করেছে। বইয়ে ব্যবহার করা কাগজে এনসিটিবির লোগের জলছাপ রাখার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।
এনসিটিবি জানায়, আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য ৩৪ থেকে ৩৬ কোটি পাঠ্যবই ছাপতে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ মেট্রিক টন কাগজ দরকার হতে পারে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী এই কাগজের সিংহভাগ দেশীয় প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করা হবে। আর বাদবাকী কাগজ আমদানি করা হবে।
প্রসঙ্গত, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব স্কুল ও মাদরাসার শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করে সরকার। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এই বই লেখা, সম্পাদনা ও প্রকাশ এবং বিতরণের যাবতীয় কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত। পাঠ্যবই মুদ্রণ, বাঁধাই ও উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষা অফিস অবধি পরিবহনের কাজটা বেসরকারি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে দিয়ে উন্মুক্ত টেন্ডারের মাধ্যমে করিয়ে থাকে। যুগ যুগ ধরে মুদ্রণ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি এনসিটিবি তথা কোটি কোটি শিক্ষার্থী। কখনো কাগজের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে আবার কখনো সময়মতো বই ছাপা শেষ না করে নোট-গাইড বই বাজারে চালিয়ে দেয়। এমন জিম্মিদশা থেকে রক্ষা পেতে সরকার নানা পদ্ধতি বাস্তবায়ন করে আসছে।
জানা যায়, নিম্নমানের কাগজে বই ছাপা হলে শিশুদের চোখেও সমস্যা হয়, আবার বইয়ের পাতা ওল্টাতে অনেকেই আঙুলে থুতু ব্যবহার করেন। এভাবে শিশুদের পেটে চলে যায় নিম্নমানের কাগজে ব্যবহার করা বিষাক্ত কেমিক্যালস। কাগজে এনসিটিবির জলছাপ নিশ্চিত করা গেলে এসব ক্ষতি সহজেই রোধ করা সম্ভব হবে।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।