সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার বাসায় ঢুকে ‘মব’ তৈরি এবং তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ‘মব’ ঘটনার সঙ্গে দলের কেউ জড়িত থাকলে তদন্ত করে শৃঙ্খলাবিরোধী ব্যবস্থা নেবে বলেছে বিএনপি।ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ যদি এতে জড়িত থাকে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব ‘পালন না করে’ উল্টো ‘ভয়-ভীতি দেখিয়ে’ জনগণের ভোট ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন করার অভিযোগে রোববার বিএনপির দায়ের করা মামলায় আসামি হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মাথায় সাবেক সিইসি কে এম নুরুল হুদাকে রাজধানীর উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরের বাসা থেকে আটক করে কথিত জনতা। এ সময় তাদের কয়েকজন নিজেদের বিএনপির একটি সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী হিসেবে পরিচয় দেয়।
পরে সন্ধ্যার দিকে নুরুল হুদাকে হেফাজতে নেয় উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। আটকের সময় কথিত জনতা নুরুল হুদার ওপর চড়াও হয়। তারা বাসায় ঢুকে তাকে অপদস্থ করে। ওই সময় কথিত জনতার মধ্যে থাকা কেউ কেউ ভিডিও করেন। এমন একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সাবেক সিইসির গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেন এক ব্যক্তি। তার গেঞ্জির কলার ধরে রেখে বক্তব্য দিতে দেখা যায় ওই ব্যক্তিকে। এ সময় ওই ব্যক্তির পাশে পুলিশের পোশাক পরা একজনকে দেখা যায়।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের বিবৃতি
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার বাসায় ঢুকে ‘মব’ তৈরি এবং তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
রোববার সন্ধায় রাজধানীর উত্তরায় এ ঘটনার পর রাতে এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়।
সরকার বলছে, এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, গ্রেফতারের সময় সৃষ্ট বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ও অভিযুক্তকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে। তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা বেআইনি, আইনের শাসনের পরিপন্থি ও ফৌজদারি অপরাধ।
বিএনপির অবস্থান
মব কালচারে বিএনপি বিশ্বাস করি না জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে অবিরাম সংগ্রাম করে যাচ্ছি। আমরা চাই দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও আদালতের রায় বাস্তবায়ন হবে, বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা থাকবে।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার গ্রেফতার প্রক্রিয়া এবং তার বিচার প্রক্রিয়া আইনগতভাবে পরিচালিত হবে এটা আমরা প্রত্যাশা করি। তবে তার ওপরে যে অবমাননাকর ব্যবহার করা হয়েছে এটা আমরা সমর্থন করি না। এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। বিএনপির যেকোনো নেতাকর্মী এই ঘটনায় জড়িত থাকলে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ডিসিপ্লেনারি অ্যাকশন (শৃঙ্খলা বিরোধী ব্যবস্থা) আমরা নেব। এটা আমাদের (বিএনপি) অবস্থান, বলেন তিনি।
সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা চাই, কোনো ব্যক্তি যত বড় অপরাধীই হোন না কেন, তার আইনি ও সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করার অধিকার যেন অক্ষুন্ন থাকে, তার আইনি ও সাংবিধানিক অধিকার যেন ক্ষুন্ন না হয়।
রাজধানীর শেরেবাংলা থানায় করা মামলায় গ্রেফতার সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাকে ৪ দিনের রিমান্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। সোমবার শুনানি শেষে ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজ রহমান এ আদেশ দেন।
এ দিন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার আসামির ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
এর আগে গত রোববার শেরেবাংলা নগর থানায় দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পরিচালনাকারী কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, কে এম নুরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করে বিএনপি। দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন খান বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ২৪ জনকে আসামি করা হয়।