চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আগামী ২৬ জুন। এবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্র ৬ লাখ ১৮ হাজার ১৫ জন ও ছাত্রী ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬ জন। গত বছর এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৯৯৩ জন পরীক্ষার্থী। সে অনুযায়ী এ বছর পরীক্ষার্থী কমেছে ৮১ হাজার ৮৮২ জন। যা গত তিন বছরের তুলনায় এবার পরীক্ষার্থী কম। তবে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে দুই বছর আগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তির পর রেজিস্ট্রেশন (নিবন্ধন) করেও সোয়া চার লাখের বেশি শিক্ষার্থী এবার পরীক্ষা দিচ্ছেন না। শতাংশের হিসাবে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে এই হার বেশি। আর সংখ্যায় তা এইচএসসিতে বেশি।
এ বিষয়ে আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, ওপরের শ্রেণিতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কিছু শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে সবসময়ই। এই ঝরে পড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দারিদ্র্য এবং শিক্ষার্থীদের বিয়ে হয়ে যাওয়া বলে জানান তিনি।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, এসএসসি পাসের পর অনেক শিক্ষার্থী কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে। এটাও ঝরে পড়ার আরেকটি বড় কারণ। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের ওপর একটি জরিপ করতে গিয়ে তারা এ রকম তথ্য পেয়েছেন। এখন উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়েও প্রকৃত কারণ জানার জন্য এ রকম একটি - জরিপ করা হবে।
এ বছর নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে নিয়মিত-অনিয়মিত মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থী ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন। এর মধ্যে নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষার্থী ১০ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি। গতবারের তুলনায় এ বছর এইচএসসিতে প্রায় ৭৩ হাজার পরীক্ষার্থী কমেছে। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন আলিমে পরীক্ষার্থী কমেছে প্রায় দুই হাজার। আলিমে এবার পরীক্ষার্থী ৮৬ হাজারের বেশি। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন মোট পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৯ হাজারের বেশি। কমেছে সাত হাজারের মতো।
আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি সূত্রে জানা গেছে, মাদরাসা-কারিগরিসহ ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে নিবন্ধন করেছিলেন ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৯ জন। তাদের মধ্যে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছেন ১০ লাখ ৫০ হাজারের বেশি। অবশ্য নিয়মিত এসব শিক্ষার্থীর পাশাপাশি অনিয়মিত শিক্ষার্থী মিলিয়ে এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী আরও বেশি।
শিক্ষা বোর্ড সূত্রমতে, নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের আওতায় একাদশ শ্রেণিতে (২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ) ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৯৬৭ জন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৮ লাখ ৭৬ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছেন। নিয়মিত এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩ লাখ ২০ হাজারের মতো (প্রায় ২৭শতাংশ) পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেননি। এ রকম শিক্ষার্থী সবচেয়ে বেশি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে, ৭৫ হাজারের বেশি। এই বোর্ডে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির পর নিবন্ধন করেছিলেন সোয়া তিন লাখের মতো শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছেন আড়াই লাখের মতো শিক্ষার্থী।
একই শিক্ষাবর্ষে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের আওতায় আলিম প্রথম বর্ষে ১ লাখ ২৮ হাজার ৭৫৯ শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। তাদের মধ্যে ৭৯ হাজারের মতো শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করেছেন। নিবন্ধন করা প্রায় ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেননি।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় একাদশ শ্রেণিতে (ভোকেশনালে) প্রায় ১ লাখ ৫৯ হাজার শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। তাদের মধ্যে ৯৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করেছেন। নিয়মিত এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে সাড়ে ৬৩ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেননি। ফরম পূরণ না করা শিক্ষার্থীর হার প্রায় ৪০ শতাংশ।
এসএসসি পাসের পরও বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষা না দেওয়ার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার অন্যতম একটি কারণ দারিদ্র্য। এইচএসসি পর্যায়ে পড়াশোনা নানা কারণে ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে, যেটা অনেক অভিভাবকের পক্ষে বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অনেক শিক্ষার্থী কর্মে প্রবেশ করছে, অনেকেই কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে যাচ্ছে। বিয়েও আরেকটি বড় কারণ।
তিনি ঝরে পড়ার প্রকৃত কারণ বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, এসএসসি পাসের পর বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী মাঝপথে হোঁচট খেল, এটা জাতির জন্য বিরাট ক্ষতি। এমনটা যেন না হয়, সে জন্য সরকারকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।