মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সুবিধা দিতে নিয়ম ভেঙে এক বছরে দুই বার এমফিল ডিগ্রিতে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রতিবছর একবার এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিলেও চলতি শিক্ষাবর্ষে এ বিজ্ঞপ্তি দুই বার দেওয়া হয়েছে। ডাকসুর ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও প্রার্থী হওয়ার সুযোগ তৈরিতে কিছু মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীকে সুযোগ করে দিতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষার্থীরা মনে করছেন নিয়মিত শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে অছাত্র এবং অযোগ্যদের ডাকসুতে নির্বাচিত করার ষড়যন্ত্র করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবন সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) নাবিলা-নূর-উস-সাবা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তির আবেদন আহ্বান করা হয়। তাতে ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জানুয়ারি ২০২৫-এর মধ্যে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু এরপর, চলতি মাসের ২২ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মুনশী শামস উদ্দিন আহম্মদ স্বাক্ষরিত আরও একটি নতুন ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়, যেখানে একই শিক্ষাবর্ষের (২০২৫-২৬) জন্য পুনরায় এমফিলে আবেদন আহ্বান জানানো হয়।
নিয়ম ভেঙে দ্বিতীয় বার এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি জানান, এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) বিস্তারিত বলতে পারবেন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ জানান, এমফিলে বছরের যে কোনো সময়ে ভর্তি হওয়া যায়। শুধু নিয়ম অনুসরণ করার জন্যই ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এক শিক্ষাবর্ষে দুই বার ভর্তি বিজ্ঞপ্তির কারণ জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) নাবিলা-নূর-উস-সাবা বলেন, প্রতিবছর সাধারণত এমফিলে এক বার ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়, এ বছর প্রথম বিজ্ঞপ্তিতে মাত্র ১০০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। অন্যান্য বছরের তুলনায় কম শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ায় নতুন এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।'
গত ১৬ জুন ঘোষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের যোগ্যতা নির্ধারণী নীতিমালায় বলা হয়েছে ভোটার বা প্রার্থী হতে হলে শিক্ষার্থীকে পূর্ণকালীন শিক্ষার্থী হতে হবে এবং স্নাতক, মাস্টার্স অথবা এমফিল প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত ও আবাসিক হলে অবস্থানরত অথবা সংযুক্ত থাকতে হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আবদুল কাদের বলেন, নতুন করে এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তির বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি নিয়ে আমরা জেনেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি ডাকসু নির্বাচনে বিশেষ কাউকে সুবিধা দিতে এই সিদ্ধান্ত নেয়, সেটি অবশ্যই দুঃখজনক। যেটি তাদের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে। এমন কিছু হলে ডাকসু নির্বাচন তার নিরপেক্ষতা হারাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসিমউদ্দীন হল শাখার প্রচার সম্পাদক শেখ তানভীর বারি হামিম বলেন, ডাকসু নির্বাচন কমিশন গঠনের পরে হঠাৎ একই বছরে এমফিলে ২য় বার ভর্তির সুযোগ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন দিয়েছেন তারাই ভালো জানেন, যেখানে প্রতিবছর এক বারই এমফিলে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।ঢাবি ছাত্রদল নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থতার দায়ে ভিসি ও প্রক্টরের পদত্যাগ চেয়েছে বহু পূর্বেই। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের সব কার্যক্রমকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। কোনো পক্ষপাতিত্ব কিংবা দুরভিসন্ধির ছিটেফোঁটা পরিলক্ষিত হলে পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযোগে প্রশাসনের পদত্যাগের চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু করতে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হবে।