স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম অকার্যকর | স্কুল নিউজ

স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম অকার্যকর

প্রযুক্তি ব্যবহার করে বড় পর্দায় (প্রজেক্টর) কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদান, মনোযোগ আকর্ষণ ও সহজে পাঠ রপ্ত করানো এবং স্কুলের যাবতীয় তথ্য ই-প্রাইমারি স্কুল সিস্টেমে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে সরকার পিইডিপি প্রকল্পের আওতায় ল্যাপটপ দিয়েছে। স্কুলগুলোর একজন করে শিক্ষককে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি ট্রেনিং), এ বিষয়ে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ স্কুলের ল্যাপটপ, প্রজেক্টর ও মডেম শিক্ষক ও নৈশপ্রহরীরা রেখেছেন নিজের বাড়িতে

#স্কুল #স্কুলছাত্রী #প্রাথমিক বিদ্যালয়

শিক্ষাকে আনন্দময় করতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করেছে সরকার। তবে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ২০৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এসব উপকরণ কোনো কাজে আসছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা যায়, প্রযুক্তি ব্যবহার করে বড় পর্দায় (প্রজেক্টর) কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদান, মনোযোগ আকর্ষণ ও সহজে পাঠ রপ্ত করানো এবং স্কুলের যাবতীয় তথ্য ই-প্রাইমারি স্কুল সিস্টেমে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে সরকার পিইডিপি প্রকল্পের আওতায় পার্বতীপুরের ২০৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ দিয়েছে। স্কুলগুলোর একজন করে শিক্ষককে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি ট্রেনিং) বিষয়ে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ স্কুলের ল্যাপটপ, প্রজেক্টর ও মডেম শিক্ষক ও নৈশপ্রহরীরা রেখেছেন নিজের বাড়িতে। ফলে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শিক্ষালাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৯ হাজার শিক্ষার্থী।

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি ৩-৪) আওতায় ২০৬ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেওয়া হয়েছে ল্যাপটপ, প্রজেক্টর, মডেম-সিম, ওয়াই-ফাই রাউটারসহ নানা সরঞ্জাম। প্রতিটি বিদ্যালয়ে ওয়াই-ফাই রাউটারের জন্য প্রতি মাসে ৪০০ টাকার প্যাকেজে ২০ জিবি ডেটাও সরবরাহ করা হচ্ছে। একটি ওয়াই-ফাই রাউটারের মাধ্যমে এ ইন্টারনেট সংযোগ সর্বোচ্চ ১০ জন শেয়ার করে ব্যবহার করতে পারে। আবার কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি থাকায় দুটি করে ল্যাপটপ দেওয়া হয়েছে। তবে বিতরণের আগে এসব বিদ্যালয়ের একজন করে শিক্ষককে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি ট্রেনিং) দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসব শিক্ষাসামগ্রী অনেক শিক্ষক রেখেছেন নিজের বাড়িতে। এতে করে বিদ্যালয়ের শিখন-শেখানো কার্যক্রমের বাইরে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইউটিউব ব্যক্তিগত ডিভাইসে ব্যবহার করে শেষ হচ্ছে সরকারি টাকায় কেনা ডেটা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কোনো বিদ্যালয় ল্যাপটপ পেয়েছে, কোনো বিদ্যালয় ল্যাপটপ পেলেও প্রজেক্টর পায়নি। প্রজেক্টর পেলেও ল্যাপটপ পায়নি, এমন বিদ্যালয়ও আছে। কিবোর্ড অকেজো, ব্যাটারি ও সাউন্ডে সমস্যার কথা জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা। বিতরণ করা ল্যাপটপ, প্রজেক্টরের মধ্যে কতটি বর্তমানে সচল আছে, কতটি বিদ্যালয়ে চুরি ঘটনা ঘটেছে তার পরিসংখ্যান, তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি পার্বতীপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. এনামুল হক সরকার।

প্রায় আট বছর আগে এলজিএসপি সরকারি প্রকল্পের দোয়েল ল্যাপটপ উপজেলার ২০৬ বিদ্যালয় পায়। চুরি ও নিরাপত্তার কথা বলে প্রায় ২২৫ ল্যাপটপ, ২০৬ প্রজেক্টর ও ২০৬ মডেম প্রধান শিক্ষক ও নৈশপ্রহরী বাড়িতে রাখা হয়েছে। তবে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, ওয়াই-ফাই রাউটার বিদ্যালয়ের চেয়ারের নিচে কিংবা টেবিলে লাগানো রয়েছে। বন্ধের দিন রাউটার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।

উপজেলার ২০৬ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মধ্যে অর্ধশতাকি স্কুল সরেজমিন গিয়ে ল্যাপটপ, প্রজেক্টর ও মডেল বিদ্যালয়ে পাওয়া যায়নি। শিক্ষকদের দাবি, স্কুলে চুরির ভয়ে তারা বাড়িতে নিয়ে রাখেন। বাঘাচোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুলের প্রধান শিক্ষক আসমাউল হোসনা বলেন, চুরি ভয়ে রাতে স্কুলে রাখা হয় না। আবার স্কুলে নিয়ে আসি। স্কুলের শিক্ষক অমিত কুমার রায় বাড়িতে ল্যাপটপ ও মো. আবদুল মান্নানের বাড়িতে রয়েছে প্রজেক্টর। জাহানাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর দেখাতে পারেননি ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সেলিনা বেগম। তিনি জানান, ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর স্কুলের নৈশপ্রহরীর বাড়িতে আছে।

এদিকে গত ১ মে উপজেলার ১৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রজেক্টর ফেরত নিয়েছে পার্বতীপুর উপজেলা শিক্ষা অফিস। গত আট মাস আগে প্রজেক্টরসহ অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষাকে আধুনিক ও ডিজিটাল করতে প্রজেক্টরের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর দিনাজপুর বাফার কেন্দ্রে প্রজেক্টর ও অন্যান্য সামগ্রী আসে। সেই হিসেবে প্রাথমিক বিদ্যালয়কে প্রজেক্টর ও প্রজেক্টরের সঙ্গে ব্যবহৃত সামগ্রী বিতরণ করা হয়। সেই প্রজেক্টর দিয়ে চলছিল আধুনিক ও ডিজিটাল শিক্ষা কার্যক্রম। দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিস থেকে নির্দেশে পার্বতীপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রজেক্টর ও প্রজেক্টরের সঙ্গে ব্যবহৃত সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে, তা ভুল করে দেওয়া হয়েছিল। তাই দ্রুত সময়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে ফেরত দিতে বলা হয়।

পার্বতীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. এনামুল হক সরকার বলেন, স্কুলে শিক্ষার্থী না থাকার শিক্ষকদের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। বর্তমানে ২০৭ স্কুলে ২৯ হাজার শিক্ষার্থী। এক সময় ৩৯ হাজার ছাত্রছাত্রী ছিল। এ অবস্থার জন্য শিক্ষকরাই দায়ী। উপজেলায় ৮১ কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে, যার একটিরও অনুমতি নেই। এদের মধ্যে ১০ থেকে ১২ কিন্ডারগার্টেন অনুমতির জন্য আবেদন করেছে শুনেছি।

তিনি বলেন, বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ, প্রজেক্টর, রাউটার ও মডেল স্কুলের থাকার কথা। প্রধান শিক্ষক ও নৈশপ্রহরীর বাড়িতে থাকার বিষয়ে কিছু জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪)-এর আওতায় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের এটিওরা খেলাধুলার সরঞ্জাম প্রকল্পে কেনাকাটায় জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সবশেষে স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস বাধ্যতামূলক। কেন নেওয়া হচ্ছে খোঁজ নিয়ে জানাব।

#স্কুল #স্কুলছাত্রী #প্রাথমিক বিদ্যালয়