শিক্ষক সংকটে ময়মনসিংহের ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) তিনটি ব্যাচের ১৫৬ শিক্ষার্থীর পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে ডা. সাইফুল ইসলাম খান অধ্যক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি চালু করলেও চলতি বছরের মার্চে পদোন্নতি পেয়ে সিভিল সার্জন হিসেবে যোগ দেন তিনি। এর পর থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যক্ষের পদ শূন্য। অধ্যক্ষ না থাকায় প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
বিল বকেয়া থাকায় গত ২৫ জুন ক্যাম্পাসের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। ৯ লাখ টাকার বেশি বিল বকেয়া। কোনো অধ্যক্ষ না থাকায় বিদ্যুৎ অফিসের অসংখ্য চিঠির বিষয়ে কেউ ব্যবস্থা নেয়নি। পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যুৎ অফিস, সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে সমস্যার কথা জানালে বিদ্যুৎ সংযোগ সচল হয়।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, সরকারি কলেজটিতে তিনটি ব্যাচ চলমান। কিন্তু শিক্ষক সংকটের কারণে সেশনজটে পড়ে কোনো ব্যাচের শিক্ষার্থীরাই এখনও প্রথম বর্ষের গণ্ডি পার হতে পারেননি। প্রতিষ্ঠানটিতে দুটি বিভাগে কার্যক্রম চলমান। এগুলো হলো– ল্যাবরেটরি ও রেডিওলজি বিভাগ। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা গত ফেব্রুয়ারিতে শেষ হলেও ফলাফল পায়নি চার মাসেও।
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের দু’জন শিক্ষক অতিথি শিক্ষক হিসেবে ক্লাস নিচ্ছেন। তারা হলেন– এনাটমি বিভাগের ডা. আতিকুর রহমান ও কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস।
তাছাড়া মাত্র একজন সিকিউরিটি গার্ড দিয়ে চলছে পুরো কলেজ ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ মামুন নামে গার্ড দিনের বেলায় কলেজ ক্যাম্পাসে উপস্থিত থাকেন না। তিনি শুধু রাতে এসে ঘুমান।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় বহিরাগত ও চোরের উৎপাতে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা। নারী শিক্ষার্থীদের অনেকেই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, অনেকেই ক্যাম্পাসে না থেকে বাইরে ভাড়া বাসায় অবস্থান করছেন।
ল্যাবরেটরি বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী তাজরিন আক্তার পলি বলেন, এত সুন্দর একটি কলেজে ভর্তি হয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেছিলাম। পরে দেখি কলেজটি নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত। পুরো ক্যাম্পাস ঘন জঙ্গলে আচ্ছাদিত। রাত-বিরাতে বহিরাগত ছেলেরা ক্যাম্পাসে এসে আনাগোনা করে।
আবু বক্কর সিদ্দিক নামে আরেক শিক্ষার্থী জানান, আইএইচটিতে কোনো স্থায়ী বিভাগ ভিত্তিক শিক্ষক নেই। মাত্র দু’জন অতিথি শিক্ষক দিয়ে সপ্তাহে দু’দিন দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যাচের একটি করে ক্লাস নেওয়া হয়। প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের কোনো ক্লাসই হয় না। এর ফলে ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থীদের প্রায় ছয় মাস ধরে ক্লাস বন্ধ। এই অবস্থা তাদের শিক্ষাজীবনকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে।
অন্যান্য শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শ্রেণিকক্ষ ও আবাসিক হলগুলোতে পর্যাপ্ত চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ, বিছানা নেই। ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও সরবরাহ করা হয়নি। আবাসিক হলগুলোতে শতাধিক ছাত্রছাত্রী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। পর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী না থাকায় ক্যাম্পাসে দুইবার চুরিও হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, পুরো ক্যাম্পাস জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। এর ফলে সাপসহ অন্যান্য পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়েছে। জমে থাকা ময়লার স্তূপ ক্যাম্পাসকে অস্বাস্থ্যকর করে তুলেছে এবং কোনো পরিচ্ছন্নতাকর্মীও নেই।
সংকট নিরসনে প্রশাসনের কাছে বেশকিছু দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো– অবিলম্বে অধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে হবে। বিভাগ ভিত্তিক স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে সব ব্যাচের জন্য পর্যাপ্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে হবে। একটি বিভাগীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। একাডেমিক ভবনের সব শ্রেণিকক্ষে পর্যাপ্ত আসবাব নিশ্চিত করতে হবে। ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
কথা হয় সাবেক অধ্যক্ষ ও ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ছাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তার ভাষ্য, কলেজটিতে কোনো পদ সৃষ্টি না করে, কোনো নিয়োগ না দিয়ে কোনো পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে উদ্বোধন করানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি যতদিন অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলাম, ততদিন ঢাকায় বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়াদৌড়ি করে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মহিউদ্দিন মাতুব্বরের মতে, জনবল নিয়োগের ব্যাপারটি স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালকের নয়। এ বিষয়ে বলতে পারবেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন)।