১০ মাসে ২২৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম বদল | কলেজ নিউজ

১০ মাসে ২২৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম বদল

শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামকরণে এখন ‘ব্যক্তিনির্ভরতা’ বাদ দিয়ে ‘স্থানীয়তা’ ও ‘গণগ্রাহ্যতা’কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পূর্ববর্তী সরকার যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম রাজনৈতিক ও পারিবারিকভাবে নির্ধারণ করেছিল, সেগুলোর নাম এখন সংশ্লিষ্ট জেলা, উপজেলা বা এলাকা অনুযায়ী পুনর্নামকরণ করা হচ্ছে।

#শেখ পরিবার #শেখ মুজিব #গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় #শেখ হাসিনা

২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১০ মাসে ২২৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। নাম পরিবর্তনের এ প্রক্রিয়ায় বাদ পড়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাদের পরিবারের সদস্য এবং আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট নেতাদের নাম।

সর্বশেষ ৪ জুন ২৪টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন হয়েছে। তবে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ ডিগ্রি কলেজের নাম বদলের সিদ্ধান্ত এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করায় সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী জানান, এ কলেজের নাম পরিবর্তন করা হবে না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, না পরিবর্তনের এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।

শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামকরণে এখন ‘ব্যক্তিনির্ভরতা’ বাদ দিয়ে ‘স্থানীয়তা’ ও ‘গণগ্রাহ্যতা’কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পূর্ববর্তী সরকার যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম রাজনৈতিক ও পারিবারিকভাবে নির্ধারণ করেছিল, সেগুলোর নাম এখন সংশ্লিষ্ট জেলা, উপজেলা বা এলাকা অনুযায়ী পুনর্নামকরণ করা হচ্ছে।

২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করে ছয়টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজের নাম পরিবর্তন করা হয়। এর মধ্যে— কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজ, মানিকগঞ্জের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘মানিকগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ’ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ, ফরিদপুরের নাম হয় ‘ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ’।

২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ ফেব্রুয়ারি দেশের ১৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন নাম নির্ধারণ করা হয়। যেমন– নেত্রকোনার ‘শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়’ এখন ‘নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয়’ এবং কিশোরগঞ্জের ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়’ এখন ‘কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে পরিচিত।

এরপর ১৫ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বিএসএমএমইউ) তিনটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে অধ্যাদেশ জারি করা হয়। বিএসএমএমইউর নাম হয় ‘বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়’, খুলনার শেখ হাসিনা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হয় ‘খুলনা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়’ এবং সিলেটের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হয় ‘সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়’।

এ ছাড়া ২৯ মে দেশের ৩৭ জেলার ৬৮টি সরকারি কলেজের নাম পরিবর্তনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামকরণেও এসেছে বড় পরিবর্তন। ১৩ এপ্রিল ১৫টি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের নাম থেকে শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ নেতা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নাম বাদ দেওয়া হয়।

২৪ এপ্রিল নাম বদল হয় আরও ২১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের, যার মধ্যে রয়েছে ১৬টি স্কুল, তিনটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও ২টি কলেজ। প্রাথমিক স্তরেও ব্যাপক নাম পরিবর্তন হয়েছে। গত ১০ মাসে মোট পাঁচ দফায় ৭৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হয়। সর্বশেষ ১৮ মে ১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার সুবাদে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নানা স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামকরণ হয়েছিল দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে। অন্তর্বর্তী সরকারের এ উদ্যোগকে তারা দেখছেন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘অরাজনৈতিকীকরণ’-এর একটি অংশ হিসেবে।

তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এটি কেবল প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং একটি রাজনৈতিক বার্তা। এতে করে অন্তর্বর্তী সরকার নিজেদের পক্ষ থেকে ‘নিরপেক্ষতা’ এবং ‘অরাজনৈতিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার’ পক্ষপাত প্রদর্শন করছে।

২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার তাদের শাসনামলে বিভিন্ন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসনিক ও অবকাঠামোগত প্রতিষ্ঠানের নামকরণে একটি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক ও পারিবারিক চিহ্ন যুক্ত করেছে।

সম্প্রতি দেশে আবারও কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হতে দেখা গেছে। এরপরই আবার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে সরকার।

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

#শেখ পরিবার #শেখ মুজিব #গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় #শেখ হাসিনা