এমপিওভুক্ত থাকার পরও গত ১৬ বছর কুমিল্লার দেবিদ্বারে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামে স্কুল থাকায় পায়নি সরকারি বরাদ্দ। শিক্ষায় গুণগত মানসম্পন্ন দেবিদ্বার পৌরসভার মরিচাকান্দা এলাকায় অবস্থিত জিয়া স্মৃতি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়টি চরমভাবে বৈষম্যের শিকার হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, পতিত সরকারের আমলে উপজেলার সব বিদ্যালয় সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও নতুন ভবন পেলেও ব্যতিক্রম দেখা গেছে জিয়া স্মৃতি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে। বিষয়টি নিয়ে এলাকার শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ জনসাধারণের মাঝে ক্ষোভ রয়েছে।
জানা গেছে, ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে শহিদ জিয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেবিদ্বার উপজেলার মরিচাকান্দা এলাকায় জিয়া স্মৃতি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১ একর জমিতে অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য আবুল কাশেম উদ্যোক্তা হয়ে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। এতে ওই এলাকার প্রায় ১০টি গ্রামের ছেলে-মেয়েরা সহজে শিক্ষা লাভের সুযোগ পায়। শুরুতে টিনের ঘরে ৫ জন শিক্ষক স্বেচ্ছাশ্রমে শিক্ষার্থীদেরকে পাঠদান করেন। নানা প্রতিবন্ধকতার পর ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত করা হলেও শহিদ জিয়ার নামের কারণে মেলেনি কোনো সরকারি বরাদ্দ। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে দুই কক্ষের একটি দোতলা ভবন বরাদ্দ দেওয়া হয়। এতে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীর পাঠদান ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থা হয়। দিনে দিনে শিক্ষার গুণগত মান ও শিক্ষার্থী বৃদ্ধি পায়।
স্থানীয়দের দাবি, ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জিয়ার নামের কারণে পুনরায় বিদ্যালয়টি বৈষম্যের শিকার হতে থাকে। উপজেলার ৫২টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫১টি বিদ্যালয় আধুনিক নতুন ভবন ও নানা সুযোগ-সুবিধা পেলেও চরমভাবে বঞ্চিত হয় মরিচাকান্দা জিয়া স্মৃতি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। গত ১৬ বছরে ভবন তো দূরের কথা ন্যূনতম টিআর কাবিখা থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। তাছাড়া শহিদ জিয়ার নাম থাকার কারণে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের দায়িত্ব গ্রহণ করতেও অপারগতা প্রকাশ করেন। এতে অনেক কষ্ট করে এ বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা পাঠদান ও শিক্ষার্থীরা পাঠ গ্রহণ করছেন।
প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ১৫ জন শিক্ষক ও ৭১৫ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করছেন। তবে ভবন সংকটের কারণে প্রায়ই রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে বারান্দা ও খোলা মাঠে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। দীর্ঘদিনের টিনের ঘরটি অনেকটাই জরাজীর্ণ হয়ে আছে। যে কোনো সময় ঝড়ে ভেঙ্গেঙ পড়তে পারে একমাত্র একাডেমিক ভবনটি। এতে স্কুল কর্তৃপক্ষ অনেকটাই চিন্তার মধ্যে রয়েছে। প্রধান শিক্ষক নান্নু মিয়া বলেন, শুধু জিয়ার নামের কারণে আমাদের বিদ্যালয় সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ভবন সংকটের কারণে ৭১৫ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করতে আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দেওয়ান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেন এই স্কুলে ভবন বরাদ্দ দেওয়া হয় সেজন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতিপূর্বে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ওই বিদ্যালয়ের ভবন বরাদ্দের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।