সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের নাম বরিশালের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আজ ১৪ জুন কলেজটির ১৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। তবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কোনো আয়োজন ছিলো না কলেজে। কোনো আয়োজন না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। ঈদের ছুটিতে সবাই বাড়ি ছিলো এমন মুহুর্তে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীরে আয়োজন হলে সেটি সবার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকতো বলে অভিমত তাদের।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, কলেজটি শুধু বরিশাল নয়, সমগ্র বাংলাদেশে জ্ঞান চর্চার অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শিক্ষার্থীদের দ্বারা। নানা গুণীজন এই কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।
কলেজটির সাবেক একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলে তারা কলেজকে ঘিরে নানা অনুভূতি তুলে ধরেন। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা স্মৃতি তুলে ধরেন ছাত্রজীবনের।
কলেজটির অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, পড়াশোনা শেষ হয়েছে প্রায় ১ যুগ আগে। আজও স্মৃতিতে জড়িয়ে আছে কলেজটি। কলেজের ডিগ্রি হলের ২২১ নম্বার রুমটি আমার
জীবনের সবচেয়ে মধুর সময়ের সাক্ষী। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে এই কলেজ যেমন ভূমিকা রেখেছে তেমনি বাস্তব জীবন সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা দিয়েছে। যা এখনও আমার কাজে লাগছে। সাবাইকে ভীষণ মনে পরে কলেজের।ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী খান মো. আল আমিন শিক্ষাডটকমকে জানান, বিএম কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা গর্বিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর দক্ষিণের শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ ছিলো বিএম কলেজ। এই কলেজের শিক্ষা নিয়েছে ৪ পুরুষ এমনও শুনেছি। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের প্রাণের স্থান বিএম কলেজ। জন্মদিনে কলেজকে শুভেচ্ছা।
কলেজটির অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন বরিশাল জেলা শাখার আহ্বায়ক সাব্বির হোসেন সোহাগ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, পাশাপাশি কলেজটির আজ জন্মদিন হলেও প্রশাসন থেকে কোনো আয়োজন ছিলো না। এটা দুঃখের। হয়তো অজুহাত দেয়া যেতে পারে কলেজ বন্ধ। তবে বিএম কলেজে শুধু বরিশাল শহরে যে শিক্ষার্থী আছে তাতেই পুরো ক্যাম্পাস ভরে যেতো যদি একটি আলোচনা সভা রাখা যেত। তবে সেটা করা হয়নি। আশাকরি ভবিষ্যতে কলেজ প্রশাসন এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবে।
সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. শেখ মো. তাজুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আসলে দীর্ঘদিন কলেজ বন্ধ থাকার ফলে চাইলেও আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। তবে কলেজ খুললে আলোচনার মাধ্যমে সুন্দর একটি আয়োজনের চেষ্টা করা হবে।
জানা গেছে, ১৮৫৩ খ্রিষ্টাব্দে বরিশাল জিলা স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ অঞ্চলে আধুনিক শিক্ষার ক্ষেত্রে যে নবজাগরণ শুরু হয় তারই ধারাবাহিকতায় বরিশালের তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বাবু রমেশচন্দ্র দত্তের অনুরোধে ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জুন অশ্বিনী কুমার দত্ত তার বাবা ব্রজমোহন দত্তের নামে সত্য, প্রেম, পবিত্রতার মহান আদর্শে ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত বিএম স্কুল ক্যাম্পাসে ব্রজমোহন কলেজ স্থাপন করেন।
ব্রজমোহন কলেজ ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে অশ্বিনী ভবনে শুরু হয়। ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে বিএম কলেজ ও বিএম স্কুল বর্তমান বিএম স্কুল ভবনে স্থানান্তরিত হয়।
১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে ব্রজমোহন কলেজে পুনরায় অর্থনীতিতে অনার্স কোর্স খোলা হয়। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুলাই কলেজটি প্রাদেশিকীকরণ অর্থাৎ সরকারিকরণ করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে ১৮ আগস্ট বিএম কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ঘোষণা করা হয়। এ ব্যাপারে তৎকালীন মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের (১৯৭১-৭২ শিক্ষাবর্ষে) সরকারি ব্রজমোহন কলেজে বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস, হিসাব বিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, রসায়ন ও পদার্থবিদ্যা এই সাতটি বিষয়ে অনার্স এবং বাংলা, অর্থনীতি, ইতিহাস ও রসায়ন এই চারটি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স খোলা হয়। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে ইতিহাসে অনার্স কোর্স চালু করা হয়। ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজি ও মৃত্তিকাবিজ্ঞানে মাস্ট্রার্স ১ম পর্ব এবং ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজি, দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, গণিত, মৃত্তিকা বিজ্ঞান ও প্রাণিবিজ্ঞান-এই সাতটি বিষয়ে অনার্স আর গণিতের মাস্টার্স ১ম পর্ব এবং ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজি, দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, গণিত, মৃত্তিকা বিজ্ঞান ও প্রাণিবিজ্ঞান-এই সাতটি বিষয়ে অনার্স আর গণিতের মাস্টার্স ১ম পর্ব পাঠ্যক্রম চালু করা হয। ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জুন ব্রজমোহন কলেজের শতবর্ষ পূর্ণ হয় এবং ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে ২৫, ২৬ ও ২৭ অক্টোবর কলেজের শতবর্ষপূর্তি উৎসব উদযাপিত হয়। ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দের সমাজকল্যাণে এবং ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ইসলামি শিক্ষা, সংস্কৃতি, দর্শন, সমাজ বিজ্ঞান প্রাণিবিজ্ঞান ও উদ্ভিদ বিজ্ঞানে মাস্টার্স পাঠ্যক্রম চালু করা হয়। ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে সমাজকল্যাণে এবং দীর্ঘ ১০ বছর পর ২০০৫-২০০৬ শিক্ষাবর্ষে ইসলামি শিক্ষায় মাস্টার্স কোর্সে খোলা হয়। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে সর্বশেষ পরিসংখ্যান বিভাগ তৈরি করে অনার্স কোর্স খোলা হয়।