সরকারের ৪ ভুলের একটি শিক্ষাকে গুরুত্ব না দেওয়া: অধ্যাপক মামুন | বিবিধ নিউজ

সরকারের ৪ ভুলের একটি শিক্ষাকে গুরুত্ব না দেওয়া: অধ্যাপক মামুন

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ৪ ভুলের একটি শিক্ষাকে গুরুত্ব না দেওয়া বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন।

#অন্তর্বর্তীকালীন সরকার #শিক্ষক #স্কুল #কলেজ

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ৪ ভুলের একটি শিক্ষাকে গুরুত্ব না দেওয়া বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন।

রোববার (২৫ মে) দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে অধ্যাপক মামুন এ মন্তব্য করেন।

তার পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো—

এই সরকারের প্রথম ভুল: ছাত্রদেরকে ক্ষমতার অংশীদার করা! শুধু তাই না। আরও বড় ভুল ছিল তাদের মধ্যে এই ধারণা ঢুকিয়ে দেওয়া তোমরাই আমাদের নিয়োগকর্তা। সব কিছুর একটা রাইট টাইম এবং রাইট স্পেস লাগে।

ছোট ছোট বাচ্চাদের এত বড় বড় ক্ষমতা দেওয়ার আগে ক্ষমতা ধারণ করতে পাড়ার পাত্র তৈরি করতে হয়। ক্ষমতা পাওয়ার আগে জ্ঞান, struggle ও অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।

দেখা গেছে লটারি জিতে কোটি কোটি টাকার মালিক যারা হয়েছে তাদের ৯৫ শতাংশই ৫ বছরের মধ্যে তাদের আগের রূপে বা তার চেয়েও খারাপ অবস্থায় চলে যায়। হঠাৎ পাওয়া কোন সম্পদই প্রকৃত সম্পদ নয়।

তেমনি হঠাৎ পাওয়া ক্ষমতাও মানুষের ধ্বংসের কারণ হতে পারে। বরং ড. ইউনূসের বলা উচিত ছিল তোমরা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছ তাই আমার ওপর আস্থা রেখে তোমরা তোমাদের জায়গায় চলে যাও আর আমাদেরকে আমাদের কাজ করতে দাও। যারা ছাত্র তারা আবার পড়াশোনায় যাও। আর যাদের লেখাপড়া শেষ তারা তাদের ভবিষ্যৎ জীবন গড়ার কাজে লেগে পড়ো।

নিজেকে দেশের কাজের জন্য প্রস্তুত করো। দল তৈরি করলেও নিজ যোগ্যতায় একটি আদর্শ স্থাপন করে ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষের সাথে মেলবন্ধন সৃষ্টি করে আস্তে আস্তে ক্ষমতা গ্রহণের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হয়। ক্ষমতাকে লটারি মনে করলে ব্যর্থতা অবশ্যম্ভাবী।

এই সরকারের দ্বিতীয় ভুল: এইটা ঠিক এই সরকারের কিনা নিশ্চিত নই তবে শেষমেশ তাদের ওপরই এসে পরে। ৫ আগস্টের পর সেনাপ্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে দেখা করার পর তিনি কেন একটি ইসলামিক দলকে বিশেষ গুরুত্ব দিলেন? এরপর থেকেই দেশে একটি গোষ্ঠী ভাবতে শুরু করল এটা তাদের সরকার, এটা তাদের আন্দোলনের ফসল, এখন সময় তাদের।

এই বাতাস যখনই পারকোলেট করতে লাগলো চারিদিকে দেখলাম মূর্তি ভাঙা আর মাজার ভাঙা শুরু হলো, খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের স্বাভাবিক চলাফেরায় এক ধরণের বাধা তৈরি হতে শুরু করলো। এর মাধ্যমে জুলাইয়ের আন্দোলনের স্পিরিট ক্ষয় হতে শুরু করলো, জুলাই আন্দোলনের শক্তি ক্ষয় হতে শুরু করলো।

এই সময়ে দেখি জুলাইয়ের আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা প্রগতিশীল মানুষজনদেরকে হরেদরে নানা ট্যাগ দেওয়া যেমন শাহবাগী, ইসলাম/বিদ্বেষী ইত্যাদি শুরু হলো। সাবেক আওয়ামী শাসনামলে একটা ন্যারেটিভ তৈরি করেছিল যে এই দেশে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ না থাকলে দেশে ইসলামিক জঙ্গিবাদীর বিস্তার ঘটবে।

সরকার ঠিক সেই ফাঁদেই পা দিয়ে তাদের গড়ে যাওয়া জুজুর ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠিত করে ফেলল যার শুরুটা সেনা প্রধানই করেছিলেন।

এই সরকারের তৃতীয় ভুল: উপদেষ্টা পরিষদ অতিমাত্রার এনজিও মানসিকতা নির্ভর। খুবই আশ্চর্যের বিষয় হলো একজনও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মানুষ নাই। এইটা কখনো হতে পারে?

এই সরকারের চতুর্থ ভুল: শিক্ষাকে গুরুত্ব না দেওয়া। অথচ শিক্ষার ধাক্কা এই দেশের প্রতিটি ঘরে লাগে। গত নয় মাস ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই ছিল সবচেয়ে বেশি অশান্ত।

শিক্ষার্থী ও নানা শ্রেণির শিক্ষকরাই সবচেয়ে বেশি রাস্তায় নেমেছিল কারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাই গত ১৪ বছর সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত ও অবহেলিত ছিল।

এত এত সংস্কার কমিশন হলো অথচ শিক্ষা সংস্কার কমিশন হলো না। শিক্ষা ও গবেষণা খাতে কিছু মেজর সিদ্ধান্ত নিয়ে জনমনে আস্থা অর্জনে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারতো।

ঘোষণা দিতে পারতেন যে গণভবনের একটি অংশে একটা বিশ্বমানের ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট তৈরি হবে।

সেখানে কাজের জন্য বিশ্ববিখ্যাত গবেষককে নিয়োগ দিতে পারতেন যার নেতৃত্বে এই ইনস্টিটিউট হতে পারতো। ঘোষণা দিতে পারতেন যে আগামী বাজেটে শিক্ষায় জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হবে।

ঘোষণা দিতে পারতেন সকল শ্রেণির শিক্ষকদের জন্য একটি স্বতন্ত্র ও উন্নত বেতন স্কেলের। এইসব ঘোষণার মাধ্যমে একটা বার্তা যেত। মানুষ এই সরকারের প্রতি আস্থা পেত।

#অন্তর্বর্তীকালীন সরকার #শিক্ষক #স্কুল #কলেজ