লাখো বেকার, চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে যেন রীতিমতো ছেলেখেলা শুরু করেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এনটিআরসিএর ‘উদ্ভট’ আর ‘বিধিবহির্ভূত’ কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে চাকরিপ্রার্থী তরুণ-তরুণীরা প্রতিদিনই বিক্ষোভ-সমাবেশ করছেন রাজধানীতে। তাদের আন্দোলনে অস্থির হয়ে উঠছে ঢাকা। রবিবার তারা ‘লং মার্চ টু সচিবালয়’ শুরু করলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর থেকে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ-সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন চাকরিপ্রার্থীরা। বুধবার দিনভর বৃষ্টিতে ভিজে ইস্কাটনে এনটিআরসিএ দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ করেছেন তারা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এনটিআরসিএর ফটক বন্ধ করেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন এর কর্মকর্তারা। আন্দোলন চলাকালে আলেয়া আকতার নামে এক তরুণী অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় শুক্রবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটির বাকী অংশ পড়ুন:
বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদরাসায় শিক্ষক পদে নিয়োগের লক্ষ্যে পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করে থাকে এনটিআরসিএ। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষক নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে থাকে। সম্প্রতি (৪ জুন) ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করেছে এনটিআরসিএ। এরপরই শুরু হয়েছে অসন্তোষ। কারণ, মৌখিক পরীক্ষাতেই বাদ দেওয়া হয়েছে ২৩ হাজারের বেশি চাকরিপ্রার্থীকে। অথচ এনটিআরসিএ সনদ প্রদান করা হয়ে থাকে শুধু লিখিত পরীক্ষার নম্বরের ওপর ভিত্তি করে। ১৮তম নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, মৌখিক পরীক্ষায় পাস করতে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। প্রার্থীদের অভিযোগ ৪০ শতাংশের বেশি নম্বর পেলেও ফেল করানো হয়েছে। কারণ ২০ নম্বরের মধ্যে ১২ নম্বর দেওয়া হয় শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেটের ওপর। আর প্রশ্নোত্তরের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয় ৮ নম্বর। খাদিজা আকতার নামের এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, মৌখিক পরীক্ষার প্রশ্নগুলো ভালোভাবে উত্তর দিয়েছিলাম।
সে হিসেবে ২০ এর মধ্যে ১৪ থেকে ১৮ নম্বর পাওয়ার কথা আমার। কিন্তু আমাকে ফেল করানো হয়েছে। চাকরিপ্রার্থীরা বলেন, বিধি লঙ্ঘন করে আমাদের ফেল করিয়েছেন এনটিআরসিএ কর্তাব্যক্তিরা। মৌখিক পরীক্ষায় অনভিজ্ঞ, বিষয় সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ না থাকা ছাড়াও মৌখিক পরীক্ষায় অবান্তর নানা প্রশ্ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন প্রার্থীরা। বিক্ষোভ থেকে ‘এনটিআরসিএর কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘প্রহসনের ভাইভা মানি না মানব না’, ‘এনটিআরসিএর দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। এ সময় অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে আন্দোলনকারীরা এনটিআরসিএ চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করেন।
গত ১৬ জুন ১ লাখ ৮২২ বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে এনটিআরসিএ। এ বিজ্ঞপ্তির পর শুরু হয়েছে চাকরিপ্রার্থীদের বড় অসন্তোষ। চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন, এ বিজ্ঞপ্তিতে এনটিআরসিএ অবান্তর আর উদ্ভট শর্ত জুড়ে দিয়েছে।
এর ফলে নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও তারা চাকরির আবেদন করতে পারছেন না। কারণ বিজ্ঞপ্তির শর্তে বলা হয়েছে, আবেদনকারীর বয়স গত ৪ জুন (১৮তম নিবন্ধনের ফল প্রকাশের দিনে) সর্বোচ্চ ৩৫ বছর হতে হবে। অথচ এ নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল ২০২৩ সালের নভেম্বরে। প্রার্থীরা বলছেন, বয়স নির্ধারণ হতে হবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন, ফল প্রকাশের দিন নয়। এনটিআরসিএর এ সিদ্ধান্ত উদ্ভট আখ্যা দিয়ে এটি বেকারদের স্বার্থ পরিপন্থি বলে উল্লেখ করেন চাকরিপ্রার্থীরা। তা ছাড়া বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে চূড়ান্ত ফল প্রকাশে দেড় বছরের বেশি পার হয়ে গেছে। ফল প্রকাশে এ বিলম্বের দায় চাকরিপ্রার্থীরা কেন নেবে? তারা বলছেন, এনটিআরসি কর্মকর্তারা চাকরির অপেক্ষায় থাকা বেকার তরুণ-তরুণীদের কথা না ভেবে ফল প্রকাশের দিনকে বয়সসীমা হিসেবে ধরেছেন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্য জানতে গত বুধবার এনটিআরসিএ দপ্তরে গিয়ে জানা গেছে চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ মফিজুর রহমান ছুটিতে রয়েছেন। চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা মুহম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকীর কাছে মন্তব্য চাইতে গেলে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।পরে সচিব এএমএম রিজওয়ানুল হক , ভবিষ্যতে নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিনকেই বয়স নির্ধারণ করে দেওয়ার ভাবনা রয়েছে এনটিআরসিএর। তবে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আর যারা মৌখিক পরীক্ষায় ফেল করানোর অভিযোগ করছেন তাদের বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে।