'সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫' বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আজ বৃহস্পতিবার থেকে নতুন কর্মসূচি পালন করবেন সচিবালয়ের কর্মচারী নেতারা। প্রতি কার্যদিবসে সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করা হবে।
বুধবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান মো. বাদিউল কবীর এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের যে ন্যায্য দাবি অবৈধ কালাকানুন বা কালো আইন সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে আমরা মোটামুটি একটি সবুজ সংকেত পেয়েছি। আশা করি আলাপ-আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে যে ফলাফল আসবে এতে তারা (কর্মচারী) সন্তুষ্ট হবেন। এরই মধ্যে অধ্যাদেশ বাতিলের বিষয়ে উত্থাপিত দাবি নিয়ে সরকারের উচ্চমহলে বিচার-বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, অনেকেই বিষয়টির কুফল সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন। এই কালো বা নিবর্তনমূলক আইন রাষ্ট্রের সাধারণ জনগণ ও কর্মচারীদের জন্য নতুন কোনো কিছু বয়ে আনবে না। রাষ্ট্রের স্বার্থ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বিবেচনায় রেখে কর্মচারীদের মান-মর্যাদা ও কর্মস্থলের সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ অনুকূল কর্মপরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে আমরা উপদেষ্টামণ্ডলীর সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। সচিব পর্যায়েও আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
বাদিউল কবীর বলেন, সাতজন সচিবের সঙ্গে আমাদের যে বৈঠক হয়েছে তার ধারাবাহিকতায় ওই সচিবরা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা করেছেন। আমরা আশা করছি, তাদের এই আলোচনায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইতিবাচক কোনো কিছু আমাদের জন্য এনে দিতে পারবেন। কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফিরলেই কাঙ্ক্ষিত বিষয়টির একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে, ইনশাআল্লাহ। কিন্তু আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, রাষ্ট্রের ক্রান্তিকাল অতিক্রম হতে চলছে। আপনারা জানেন সামনেই কোরবানির ঈদ এবং বাজেট ঘোষণার সময়। যেহেতু আমরা সাধারণ মানুষের সেবক। সাধারণ মানুষের দুঃখ লাঘবে আমরা সেবা প্রদান করে থাকি। সরকারি কর্মচারীরা যাতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কারণ না হয় আমরা সেই বিষয়টিও বিবেচনায় এনেছি।
এই কর্মচারী নেতা বলেন, আমরা সব বিষয় চিন্তা-ভাবনায় রেখে আগামী দিনগুলোতে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে জরুরি সেবার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আমরা সচিবালয়ে শুধু প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মবিরতি চলতে থাকবে। মাঠ পর্যায়ে সকল দপ্তর, পরিদপ্তর, অধিদপ্তর এবং ডিসি অফিস, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত, আমাদের পরবর্তী ঘোষণা না আসা পর্যন্ত কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।
কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, এর সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের একটি বিষয়ে অবহিত না করলেই নয়। সারা দেশে যেসব জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আছে, বাজেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং যারা হাসপাতালে রোগীদের সেবা দিয়ে থাকেন, সেই সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী ভাইবোনদের কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে- আপনারা আপনাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যত কম সময় কর্মবিরতি পালন করতে পারেন, অভ্যন্তরীণভাবে আপনারা সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে আমার প্রস্তাব আধা-ঘণ্টার বেশি নয়। যদি আরও কম সময় আপনারা কর্মবিরতি পালন করে সাধারণ মানুষের সেবাটা নিশ্চিত করতে পারেন, সেই বিষয়টি বিবেচনার জন্য আপনাদের প্রতি অনুরোধ রইলো। আমরা এর মধ্যেই উপদেষ্টাদের কাছে এ বিষয়ে যৌক্তিকতা আরও নিবিড়ভাবে বোঝানোর জন্য ব্যক্তিগত যোগাযোগ এবং স্মারকলিপির মাধ্যমে তাদেরকে বিষয়টি অবহিত করবো। প্রধান উপদেষ্টা না আসা পর্যন্ত সবাইকে ধৈর্যের সঙ্গে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বাদিউল কবীর।
সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য ফোরামের কো-মহাসচিব মো. নজরুল ইসলাম অধ্যাদেশ বাস্তবায়ন হলে কী কী সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে তা তুলে ধরেন। ঐক্য ফোরামের আরেক কো- চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম বলেন, বলা হচ্ছে এই আন্দোলনের মধ্যে ফ্যাসিস্ট সরকারের লোকজন রয়েছে। আমার ১০ বছর চাকরি ছিল না, অন্যদেরও চাকরি ছিল না। আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারের লোক হলে কি সার্ভিসের বাইরে থাকতাম? প্রশ্নই আসে না। এগুলো ভুল মেসেজ দেয়া হচ্ছে। আমরা শুধু অধ্যাদেশের বিষয়টি নিয়েই আন্দোলনে নেমেছি। চার ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করা যাবে। এমন বিধান রেখে রোববার সন্ধ্যায় ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করা হয়।
কর্মচারীদের দাবি প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশীদ। প্রধান উপদেষ্টা বর্তমানে বিদেশে আছেন। দেশে ফিরলে বিষয়টি তুলে ধরা হবে। বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ এ কথা জানান। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে কর্মচারীদের কথা ও মঙ্গলবারের আলোচনার বিষয়টি জানানো হয়েছে। এখন এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব নয়। তাই প্রধান উপদেষ্টার কাছে তিনি তুলে ধরবেন। প্রধান উপদেষ্টা বর্তমানে জাপান সফরে আছেন। ৩১ মে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফিরলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বিষয়টি তার কাছে তুলে ধরবেন বলে জানান সালেহ আহমেদ।