ছবি : সংগৃহীত
ভারতের পশ্চিম উপকূলীয় রাজ্য গুজরাটের আহমেদাবাদে এক মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় ২৪১ জন আরোহীর প্রাণহানি ঘটেছে। বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার মডেলের এয়ার ইন্ডিয়ার এই যাত্রীবাহী উড়োজাহাজটি সর্দার বল্লবভাই প্যাটেল বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের ঠিক পরেই বিধ্বস্ত হয়।
ত এই ভয়াবহ ট্র্যাজেডির মধ্যেও আশার আলো হয়ে এসেছেন একজন যাত্রী—রমেশ বিশ্বকুমার। যিনি অলৌকিকভাবে এই দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফিরেছেন। তার বেঁচে ফেরা যেন ধ্বংসস্তূপের মাঝে এক জীবনের অবিশ্বাস্য গল্প।
আজ দুপুর ১টা থেকে ২টার মধ্যে আহমেদাবাদ বিমানবন্দরে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের পর মাত্র ৮২৫ ফুট উপরে উঠতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং বিকট শব্দে ভূপাতিত হয়।
ঘটনার পরপরই বিমানবন্দর এলাকায় তীব্র বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় এবং আগুন ধরে যায়। কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী আকাশ ঢেকে দেয়। যা দূর থেকেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। কিন্তু আগুন এবং ধোঁয়ার কারণে কাছে যাওয়া কঠিন ছিল। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই গুজরাট পুলিশের বরাত দিয়ে বিমান বিধ্বস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
প্রাথমিকভাবে এনডিটিভি ২৪২ জন আরোহীর কেউই বেঁচে নেই বলে দাবি করেছিল। যা দেশজুড়ে শোকের ছায়া নামিয়ে এনেছিল। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই আসে সেই স্বস্তির খবর—রমেশ বিশ্বকুমার নামের একজন যাত্রী জীবিত উদ্ধার হয়েছেন।
তিনি উড়োজাহাজের ১১এ সিটের যাত্রী ছিলেন। তার এই অলৌকিক বেঁচে থাকা উদ্ধারকর্মীদের জন্য এক নৈতিক বল জোগায়, এবং স্বজনহারাদের মনে ক্ষীণ আশার সঞ্চার করে।
দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় প্রশাসন উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আহমেদাবাদ বিমানবন্দরের দিকে যাওয়ার সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে জরুরি পরিষেবাগুলো দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারে। ফায়ার সার্ভিসের বহু ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। বিমানবন্দর এলাকা ধোঁয়া এবং ধ্বংসাবশেষে ভরে গিয়েছিল। উদ্ধারকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ধ্বংসাবশেষের মধ্যে জীবিতদের খোঁজে তল্লাশি চালাতে থাকেন। তবে আগুনের তীব্রতা এবং ধ্বংসস্তূপের বিশালতার কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছিল।
বিমান ভেঙে পড়ার জেরে বিমানবন্দরের আশপাশের কয়েকটি বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিকট শব্দের পর পরই তাদের বাড়িঘর কেঁপে ওঠে এবং জানালার কাঁচ ভেঙে যায়। কিছু বাড়িতে আগুনও ছড়িয়ে পড়েছিল, তবে ফায়ার সার্ভিস দ্রুত সেগুলো নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যেও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, অনেকেই চোখের সামনে এই ভয়াবহ দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেছেন।
রয়টার্সকে দেওয়া এক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটির গন্তব্য ছিল যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম। বিমানে থাকা যাত্রীরা অনেকেই হয়তো নতুন কোনো স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। কেউবা পরিবারের কাছে ফিরছিলেন, অথবা কেউ হয়তো কর্মজীবনের নতুন দিগন্তে পাড়ি দিচ্ছিলেন। বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার একটি আধুনিক এবং নিরাপদ উড়োজাহাজ হিসেবে পরিচিত, যা সাধারণত দীর্ঘপাল্লার যাত্রায় ব্যবহৃত হয়। এমন একটি উড়োজাহাজের এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়া সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।
পড়ুন: জোশী-কোমীদের স্বপ্নের সমাধি
দুর্ঘটনার পর পরই নিহত এবং আহতদের পরিবারের সদস্যদের কাছে খবর পাঠানো শুরু হয়। স্বজনহারাদের আহাজারিতে বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকা ভারি হয়ে উঠেছে। বহু মানুষ প্রিয়জনের খোঁজ নিতে বিমানবন্দরে ভিড় জমিয়েছেন, কিন্তু বিধ্বংসী পরিস্থিতির কারণে তাদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রতিটি মৃতদেহ উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে তাদের পরিচয় শনাক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা স্বজনদের কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক এক অভিজ্ঞতা।
এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারণ জানতে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত শুরু হয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (DGCA), এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো একযোগে কাজ করছে দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনে। উড়োজাহাজটির ব্ল্যাক বক্স (ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার এবং ককপিট ভয়েস রেকর্ডার) খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে, যা দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে পারে। উড়োজাহাজের যান্ত্রিক ত্রুটি, পাইলটের ভুল, অথবা অন্য কোনো কারণ ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এই দুর্ঘটনা ভারতের বিমান চলাচল নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। যদিও ভারতের বিমানবন্দরগুলো এবং উড়োজাহাজগুলো আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে চলে, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা বিমান নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষকে নতুন করে ভাবতে হবে।
আহমেদাবাদের এই বিমান দুর্ঘটনা কেবল একটি শহরের ট্র্যাজেডি নয়, এটি দেশের জন্য এক বিশাল ক্ষতি। ২৪১টি জীবন চলে যাওয়া মানে অসংখ্য পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে যাওয়া।
এই কঠিন সময়ে স্বজনহারাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হচ্ছে। দেশজুড়ে বিভিন্ন মহল থেকে শোক প্রকাশ করা হয়েছে এবং নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়েছে। আহত রমেশ বিশ্বকুমারের দ্রুত আরোগ্য কামনা করা হচ্ছে, তার বেঁচে থাকা এই কঠিন সময়ে একটি আশার প্রতীক।