আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো চলছে না | বিশ্ববিদ্যালয় নিউজ

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো চলছে না

‘বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই সেমিস্টার সিস্টেম চালু আছে। আমাদের স্যারেরা তিন বছরে একবারই ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে। আমরা প্রতি বছরে একবার ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছি।’

#ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেছেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো চলছে না। এখানে না আছে উন্নত মানের শিক্ষক, না আছে পোস্ট-ডক রিসার্চ ফেলো, না আছে ভালো মানের পিএইচডি ছাত্র, না আছে টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট, আর না আছে রাজনৈতিক সুষ্ঠু পরিবেশ। কীভাবে তাহলে লেখাপড়া ও গবেষণা হবে এই দেশে?’

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. কামরুল হাসান মামুন লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই সেমিস্টার সিস্টেম চালু আছে। আমাদের স্যারেরা তিন বছরে একবারই ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে। আমরা প্রতি বছরে একবার ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছি। বর্তমান দ্রুত পরিবর্তনশীল শিক্ষাব্যবস্থায় অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারের গঠন ও ছন্দ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বর্তমান বিশ্বে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত কাঠামোগুলোর একটি হলো সেমিস্টার পদ্ধতি। বাংলাদেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই সেমিস্টার সিস্টেম আছে।’

তিনি আরো লেখেন, ‘সেমিস্টার সিস্টেমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শিক্ষার্থীকে প্রত্যেক সেমিস্টারে মিডটার্ম ও ফাইনাল পরীক্ষার পাশাপাশি ধারাবাহিক মূল্যায়ন, অ্যাসাইনমেন্ট ও উপস্থাপনা, এবং শ্রেণিকক্ষে সক্রিয় অংশগ্রহণ— যা শিক্ষার্থীদের নিয়মিত সক্রিয় রাখে এবং বছরের শেষে চাপযুক্ত পরীক্ষার বোঝা হ্রাস করে। ধরুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের কথা। বছরে ছাত্র ভর্তি করি ১২০ জন। এরাসহ আগের বছর থেকে ড্রপ আউট করে আরো প্রায় ৩০ জনের মতো পরীক্ষা দেয়। একজন কোর্স শিক্ষকের পক্ষে এতো ছাত্রের মিডটার্ম ও ফাইনাল পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের পাশাপাশি ধারাবাহিক মূল্যায়ন, অ্যাসাইনমেন্ট ও উপস্থাপনা, এবং শ্রেণিকক্ষে সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা কি সম্ভব? তাছাড়া দেশের রাজনৈতিক ও অন্যান্য কারণে কিংবা অকারণে ক্লাস বন্ধ, পরীক্ষা পেছাও আন্দোলন থাকলে অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুসরণ কি সম্ভব?’

সেমিস্টার সিস্টেমের ত্রুটি তুলে ধরে তিনি লিখেছেন, ‘বিশ্বের যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার সিস্টেম আছে, সেখানে টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট থাকে, যারা ল্যাব ক্লাস দেখবেন, ক্লাস টেস্ট, অ্যাসাইনমেন্ট ও উপস্থাপনা ইত্যাদির উত্তরপত্র ও আনুষাঙ্গিক জিনিস মূল্যায়ন করে কোর্স শিক্ষককে সহায়তা করেন। সাধারণত পিএইচডি শিক্ষার্থীদের টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। এমনকি বাংলাদেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট আছে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কনসেপ্টই নাই। তাহলে সেমিস্টার সিস্টেম আমাদের আবিষ্কার না। যারা আবিষ্কার করেছে, তারা একটা প্যাকেজ তৈরি করেছে। সেমিস্টার সিস্টেম থাকলে পুরো প্যাকেজ থাকতে হবে। সঙ্গে সেমিস্টার চলাকালে কোনো প্রকার বিঘ্ন ঘটা চলবে না।’

ক্যাম্পাসের পরিবেশের বিষয়ে তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো চলছে না। এখানে না আছে উন্নত মানের শিক্ষক, না আছে পোস্ট-ডক রিসার্চ ফেলো, না আছে ভালো মানের পিএইচডি ছাত্র, না আছে টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট, আর না আছে রাজনৈতিক সুষ্ঠু পরিবেশ। কীভাবে তাহলে লেখাপড়া ও গবেষণা হবে এই দেশে? কেন আমাদের ছেলেমেয়েরা বিদেশে চলে যাবে না? এই জন্যই বলি, ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি একদম নিষিদ্ধ করা উচিত। এই ব্যাপারে সব দলের একমত হওয়া উচিত। ছাত্র শিক্ষক হবে রাজনীতি সচেতন, তারা দলান্ধ হবে কেন?’

#ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়