বেসরকারিতেও পিএইচডি ডিগ্রির করিডর ও দুর্ঘটনার অগ্রিম ময়নাতদন্ত! | বিশ্ববিদ্যালয় নিউজ

বেসরকারিতেও পিএইচডি ডিগ্রির করিডর ও দুর্ঘটনার অগ্রিম ময়নাতদন্ত!

২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে দীপু মনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই জোরালোভাবে শুরু হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে পিএইডি ও এমফিল ডিগ্রি দেওয়ার উদ্যোগ। তারও আগে থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানার সঙ্গে যুক্ত ও বড় অঙ্কের বিজ্ঞাপন পাওয়া কয়েকটি গণমাধ্যম ও প্রচারমাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দিয়ে টকশো, নিবন্ধ ও মতামত প্রকাশ করানো হয়।

#দীপু মনি #পিএইচডি #ফেরদৌস জামান #বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় #ময়নাতদন্ত

দীপু মনি (উপর থেকে বামে), সৈয়দা রুবিনা মীরা , ফেরদৌস জামান (নিচে থেকে বামে), রতন কুমার মজুমদারদীপু মনি (উপর থেকে বামে), সৈয়দা রুবিনা মীরা , ফেরদৌস জামান (নিচে থেকে বামে), রতন কুমার মজুমদার

হলফ করে বলতে পারি, গত ৫৪ বছরে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক তার ভূখণ্ডে কোনো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা স্কুল-কলেজ বিক্রি হতে দেখেননি।

কিন্তু শুধু সনদ কিংবা শিক্ষার্থী কেনাবেচাই নয়, গোটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টাই বিক্রি হয়ে যেতে দেখার সৌভাগ্য অনেক বাংলাদেশির হয়েছে! কালোবাজারে বা চোরাগোপ্তাভাবে নয়, জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েই বিক্রি করেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।

যেদেশে গোটা বিশ্ববিদ্যালয়টাই বিক্রি হয়ে যায় সেই দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকদের হাতে পিএইচডি ও এমফিল ডিগ্রি দেওয়ার ক্ষমতা তুলে দেওয়ার আলোচনার শুরুও আওয়ামী লীগ জমানায় অর্থাৎ ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে। ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন মহল এর পক্ষে ও বিপক্ষে জোরালো বক্তব্য দিয়ে আসছে।

তবে, পিএইচডির উদ্যোগ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় দীপু মনির ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করেন চাঁদপুর পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার, নারী এমপি সৈয়দা রুবিনা মীরা ও ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামান। এই চক্রের সবার মাথার ছাতা হিসেবে কাজ করতেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মালিক সমিতির সভাপতি শেখ কবির।

সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের যথাক্রমে ভিসি-প্রোভিসি, কোষাধ্যক্ষ ও কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেতে শিক্ষকরা ঘুষ হিসেবে দীপু মনির জন্য বরাদ্দ টাকা এই রতন, রুবিনা মীরা ও ফেরদৌস জামানের হাতে হস্তান্তর করতেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়।

৫ আগস্টের পর দীপু মনি বিভিন্ন মামলার আসামি হিসেবে কারাগারে আর নিয়োগ ভুয়া অভিজ্ঞতার সনদে ও দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত ফেরদৌস জামান।

রতন মজুমদার পলাতক। গত ১৩ মে, সৈয়দা রুবিনা আক্তার মীরা ও তার স্বামী মোশাররফ হোসাইন সরদারের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আসামিদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে মামলার এজাহারে। শেখ কবিরের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। তিনিও পলাতক।

আরো পড়ুন :

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে ডিম নিক্ষেপ

জালিয়াতি করে জমি দখল দীপু মনির ভাইয়ের

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে দীপু মনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই জোরালোভাবে শুরু হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে পিএইডি ও এমফিল ডিগ্রি দেওয়ার উদ্যোগ।

তারও আগে থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানার সঙ্গে যুক্ত ও বড় অঙ্কের বিজ্ঞাপন পাওয়া কয়েকটি গণমাধ্যম ও প্রচারমাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দিয়ে টকশো, নিবন্ধ ও মতামত প্রকাশ করানো হয়। করোনার কারণে লকডাউনে সবকিছুর সঙ্গে এই আলোচনাও স্তিমিত হয়।

এরপর ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ এপ্রিল সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটিরি অন্যতম মালিক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আজীজ ইউনিভার্সিটির সমাবর্তনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির কাছে প্রকাশ্যে দাবি করেন যে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও এমফিল ও পিএইচডি গবেষণার সুযোগ দেওয়া হোক।

এরপরপরই কয়েকটি বাংলা ও ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা সেমিনার ও গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে নিজস্ব শিক্ষাবিদ, কলামিস্ট ও সাংবাদিকদের ব্যবহার করে।

এসব সেমিনার ও গোলটেবিলের যাবতীয় ব্যয় এবং টিভিতে প্রচার ও দৈনিক পত্রিকার পুরো পাতাজুড়ে বেসরকারি পিএইচডির পক্ষে সাফাই গাওয়া বক্তব্য কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে ছাপা হয় মর্মে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।

ঘটনাপঞ্জী

১৩ জুন ২০২২

উচ্চশিক্ষার এক অনুষ্ঠানে দীপু মনি বলেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা অনেক কম। আমাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভালো করছে।

যাদের সক্ষমতা আছে তাদের গবেষণার জন্য আহ্বান জানানো উচিত। সে কারণে বেসরকারি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি অনুমোদন দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে।

আরো পড়ুন

৮ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ: দীপু মনি দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

৭৭ নদী হত্যায় জড়িত দীপু মনিসহ ২৫৬ আওয়ামী মাফিয়া

ব্যানবেইসের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন শিক্ষা উপ-মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের শিক্ষা সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক।

১৯ মার্চ, ২০১৩

বেসরকারি ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর সমাবর্তনে দেশের বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পিএইচডি ডিগ্রি দেয়ার যোগ্যতা এবং সক্ষমতা তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন দীপু মনি।

তিনি বলেন, ‘‌আমরা এখন মনে করছি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশসহ (আইইউবি) বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পিএইচডি দেয়ার, পিএইচডি গবেষণা করার সক্ষমতা অর্জন করেছে।

আমরা ইউজিসির সঙ্গে কথা বলব, যেনো যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সক্ষমতা তৈরি হয়েছে তাদের পিএইচডির অনুমোদন দেয়া হয়।

একই সমাবর্তন বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান। তবে, তারা পিএইচডি ও এমফিলের পক্ষে কোনো বক্তব্য তখন দেননি।

অধ্যাপক নিয়াজ তখন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এর উপ-উপাচার্য ছিলেন।

বি: দ্র: পাঁচ আগস্টের পর যথাক্রমে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা এবং নিয়াজ আহমদ খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিযুক্ত হন।

আরো পড়ুন

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিমার্ণ কাজে ২৫ শতাংশ কমিশন নিতেন দীপু মনির ভাই

এমপিওভুক্তি: দীপু মনির ভাই টিপুচক্রের শতকোটি টাকার বাণিজ্য

দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে কলেজে বদলি

১২ জুলাই ২০২৩

দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করার সুযোগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান দীপু মনি।

নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির ২৪তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান তিনি। সমাবর্তন বক্তা ভারতের পরিকল্পনা কমিশনের প্রাক্তন ডেপুটি চেয়ারম্যান এবং সেন্টার ফর সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক প্রগ্রেসের সম্মানিত ফেলো মি. মন্টেক এস আহলুওয়ালিয়া গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন।

১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির (এপিইউবি) সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেছেন, সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও নানা কারণে এ বৈষম্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কাজী নাবিল আহমেদ এমপি, এআইইউবির চেয়ারম্যান ইসতিয়াক আবেদীন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারপারসন তামারা আবেদ, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান ফাতিনাজ ফিরোজ, সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কাজী আনিস আহমেদ, ট্রেজারার কেবিএম মঈন উদ্দীন চিশতী প্রমুখ।

শেখ কবির আরো বলেন, অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি এবং এম ফিল করার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।

কিন্তু তাদের সেই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। এটি বেসরকারি খাতের প্রতি বৈষম্য। অবিলম্বে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে এর অনুমতি দিতে হবে।

বি: দ্র: শেখ হাসিনার চাচা হিসেবে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে দেশের কয়েকডজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও চেয়ারম্যান ও কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক বনে গিয়েছিলেন। একইসঙ্গে তিনি মালিক সমিতির সভাপতিও হন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি পলাতক।

আরো পড়ুন

দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি!

গণঅভ্যুত্থানের পরের ঘটনাবলী

১৬ আগস্ট ২০২৪

বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির (এপিইউবি) কার্যনিবাহী পরিষদের জরুরি সভায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. সবুর খানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আবেদিনকে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

ইশতিয়াক আবেদিন শেখ কবিরের নেৃতত্বাধীন সমিতির (এপিইউবির) জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

৮ ডিসেম্বর ২০২৪

দীপু মনির আমলে গঠিত পিএইচডি বিষয়ের কমিটিতেই একজনকে যুক্ত করা হয়েছে। তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব।

৮ ডিসেম্বরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল, পিএইচডি, ইউনিফর্ম গ্রেডিং সিস্টেম, ডুয়েল সেমিস্টার, ট্রাইসেমিস্টার চালুকরণ, ওয়ার্ল্ড র্যাংকিং, ক্রেডিট আওয়ারস ইত্যাদি সার্বিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের নিমিত্তে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়-১) নুরুন আখতারকে মনোনয়ন করা হয়েছে।

১৯ মার্চ ২০২৫

দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রগ্রাম চালুর বিষয়ে যোগ্যতার মানদণ্ড নির্ধারণে এক মতবিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯ মার্চ ইউজিসিতে অনুষ্ঠিত সভায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম এ ফায়েজ প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।

কমিশনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক ড. মো. সুলতান মাহমুদ ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে সভায় ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।

ইউজিসি সদস্য ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি চালু করার দাবি দীর্ঘদিনের।

এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি চালু করা হলে জাতি গঠন ও টেকসই উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে কিনা সেটি চিন্তা করতে হবে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি চালু করার জন্য অংশীজনদের সাথে মতবিনিময় করে সমাজের প্রয়োজনে সচিন্তিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।

সভায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি চালু করার ক্ষেত্রে ধারণাপত্র তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের প্রফেসর ড. এস এম হাফিজুর রহমান ও প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ।

২৫ মার্চ ২০২৫

শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল ইসলাম আবরার বলেছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর প্রক্রিয়া চলমান। এর মাধ্যমে গবেষণা ও নতুন উদ্ভাবনের সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা দেশ ও জাতির কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যথাসম্ভব সহায়তা করবে।

২৫ মার্চ সকালে সচিবালয়ে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

১২ মে ২০২৫

দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর বিষয়ে দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ। তিনি বলেছেন, সার্বিক সক্ষমতা যাচাই করে উপযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর অনুমোদন দেয়া হবে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধনের বিষয়ে অংশীজনের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউজিসি চেয়ারম্যান এ কথা বলেন। ১২ মে ইউজিসি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় এ সভা।

স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডির করুণ ইতিহাস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাহিনী

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্যতাই ছিল না, তবু ডক্টরেট ডিগ্রি পান বেনজীর’ শিরোনামে দৈনিক প্রথম আলোতে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জুন প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে স্তম্ভিত হয় দেশের শিক্ষিত সমাজ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি নেন।

এরপর থেকে তিনি নামের আগে ডক্টর শব্দটি ব্যবহার করা শুরু করেন। যদিও ডক্টরেট ডিগ্রি নেওয়ার প্রোগ্রামে ভর্তির যোগ্যতাই তাঁর ছিল না। শর্ত শিথিল করে তাঁকে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।

বেনজীর আহমেদ ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিবিএ) প্রোগ্রাম থেকে।

সেখানে ভর্তির জন্য স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হয়। শিক্ষাজীবনের সব পাবলিক পরীক্ষায় কমপক্ষে ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হয়। বেনজীরের তা ছিল না।

বেনজীরের ভর্তির ক্ষেত্রে মৌলিক শর্তগুলো শিথিল করা হয়েছিল ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের তৎকালীন ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সুপারিশে।

তিনি ছিলেন বেনজীরের ‘ডক্টরেট’ প্রোগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক। ২০২০ এর মে মাসে তিনি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যান হন।

এখনো সেই পদে রয়েছেন। আর ভর্তি ও ডিগ্রি পাওয়ার সময় বেনজীর ছিলেন র‍্যাবের মহাপরিচালক। ভর্তির শর্ত শিথিলের ক্ষেত্রে বেনজীরের পদ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কাহিনী

একথা সবার মুখে মুখে যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগে মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ করলে বা উপঢৌকন দিলেই পিএইচডি ডিগ্রি মেলে।

নুরুল ইসলাম নাহিদ ও দীপুমনির ১৫ বছরে শত শত প্রভাবশালী আমলা, রাজনীতিক, পুলিশ, ইউজিসির কর্মকর্তাসহ অনেক রাজনীতিক জাহাঙ্গীরনগর থেকে ডিগ্রি নিয়েছেন।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি নিয়ে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার একটি প্রতিবেদনের অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো : অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মৌলভীবাজার জেলা থেকে কয়েকবার নির্বাচিত হওয়া ৬৯ বছর বয়সী এক তারকা সাংসদও সম্প্রতি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার জন্য ভর্তি হয়েছেন। রয়েছেন নামিদামি বেশ কয়েকজন তারকা রাজনীতিবিদ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক বলেন, যোগ্যতাসম্পন্ন যে কেউ পিএইচডিতে ভর্তি হতেই পারেন। আপত্তি তাতে নয়, প্রকৃত ও মানসম্পন্ন গবেষণাপত্র তৈরির সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে গবেষণা করতে হলে তারা আদৌ আসতেন কি-না তা নিয়ে ভাবার অবকাশ রয়েছে।

শিক্ষকরা জানান, পিএইচডি একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণাকর্ম, গবেষককে নিয়মিত লাইব্রেরি ওয়ার্ক ও ফিল্ডওয়ার্ক করতে হয়।

একজন চলমান দায়িত্বরত পুলিশের অ্যাডিশনাল আইজি পদমর্যাদার লোক কিংবা একজন সচিবের কি সেই সময় থাকে লাইব্রেরিতে যাওয়ার? লাইব্রেরিতে না গেলে, ফিল্ডওয়ার্ক না করলে তিনি তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবেন কীভাবে?

শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়ে কোনো মতে সংশ্লিষ্ট তত্ত্বাবধায়কের উদ্যোগে একটা গবেষণাকর্ম উপস্থাপন করা হয়। আর বহিঃপরীক্ষক তো 'নির্ধারণ' করাই থাকে। ফলে অর্জন হয়ে যায় ডিগ্রি। তাদের প্রশ্ন, এটাকে কি গবেষণা বলা যায়!

বিষয়টি অস্বীকার করেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামও। তিনি বলেন, 'যারা ফাঁকিবাজ তারা উল্টো পথে বা খারাপ পথে পা রাখে না তা আমি দাবি করব না।

এগুলো হচ্ছে নিজেদের সততার ব্যাপার। তবে অভিসন্দর্ভ দেশের বাইরে পাঠানো হয় না, কারণ আমাদের দেশেই এখন অনেক বিশেষজ্ঞ রয়েছেন।

অবশ্য পাঠালে ভালো হতো।' খণ্ডকালীন গবেষণার সুযোগ দেওয়ার কারণে কিছু কিছু ভালোমানের গবেষণাও হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।

পুলিশের আইজি থাকা অবস্থাতেই লোকপ্রশাসন বিভাগে অধ্যাপক আবুল কাশেম মজুমদারের অধীনে পিএইচডিতে ভর্তি হন হাসান মাহমুদ খন্দকার। একই শিক্ষকের অধীনে পিএইচডি করেছেন পুলিশের আরেক সাবেক আইজি জাভেদ পাটোয়ারি।

নিজের পিএইচডি ডিগ্রি নেই, অথচ তিনি অন্যের পিএইচডি গবেষণার তত্ত্বাবধান করছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ১২ জন শিক্ষক রয়েছেন।

এর মধ্যে বাংলা বিভাগে ১ জন, ইংরেজি বিভাগে ৩ জন, সরকার ও রাজনীতি বিভাগে ২ জন, অর্থনীতি বিভাগে ৩ জন, ভূগোল ও পরিবেশে ১ জন, গণিতে ২ জন।

ভুইফোঁড় আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিতে টাকায় মিলছে পিএইচডি

কোনো গবেষণা ছাড়াই পাওয়া যাচ্ছে পিএইচডি। এটি অবশ্য বেসরকারি পর্যায়ে। রাজধানীতে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই প্রোগ্রামে ভর্তি করান।

এরকম একটি প্রতিষ্ঠান আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি। প্রতিষ্ঠান মাত্র সাড়ে ৩ লাখ টাকায় পিএইচডি ডিগ্রি দিয়ে থাকে। তাও কোন দেশীয় প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রি নয়, আমেরিকান একটি ইউনিভার্সিটির ডিগ্রি। খোদ রাজধানীর ঢাকায় বসে আ

েরিকার পিএইচডি ডিগ্রি দিচ্ছেন ‘আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমতি না থাকলেও নামে-বেনামে ডিগ্রি দিচ্ছেন তারা।

সাবেক শিক্ষামন্ত্র্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের একজন পিএস (প্রশাসন ক্যাডারের যুগ্ম-সচিব) এই কথিত ইউনিভার্সিটিতে কথিত ক্লাস নিতেন।

বিনিময়ে যে যতই অভিযোগ জমা দিতো মন্ত্রণালয়ে সব হারিয়ে যেত। আর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলা হতো : ওরা তো ঠিকানা বদলায়, তাই খুঁজে পাই না।’ আপনারা (সাংবাদিকরা) একটু খুঁজে দেন।”

আমেরিকান এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে বাংলাদেশ স্ট্যাডি নামে ভুয়া প্রতিষ্ঠান খুলে প্রতিষ্ঠানটি ভুয়া এমফিল, পিএইচডি, অনার্স, মাস্টার্সসহ ৭ ধরনের ডিগ্রি বিক্রি করছে তারা।

আর এসব ডিগ্রি ভাগিয়ে নিয়ে শিক্ষকতা পেশা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করছেন অনেকেই। দীর্ঘ দিন ধরে এই ভুয়া ডিগ্রি দিয়ে সরকার থেকে অতিরিক্ত সুবিধাও নিচ্ছেন তারা।

তবে দুই দফা ইউজিসি এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে। প্রথম দফায় প্রতিষ্ঠানটির মালিক সেলিম ভূঁইয়া গ্রেপ্তার হয়। জামিনে বের হয়ে পরবর্তীতে ঠিকানা বদলে ফের শুরু করেন এই ব্যবসা।

গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশের ঝামেলার কারণে দুই মাস আগে তৃতীয় দফা তিনি তার প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা বদল করে আবার শুরু করেছেন সেই ব্যবসা।

ইউজিসির বরখাস্ত সচিব ফেরদৌস জামান এই চক্রের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার বিনিময়ে বিষয়টি নিয়ে ইউজিসিকে আর এগোতে দেয়নি।

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

#দীপু মনি #পিএইচডি #ফেরদৌস জামান #বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় #ময়নাতদন্ত